লিখেছেন দেবাশিস ভট্টাচার্য । আনন্দবাজারের চতুর্থ পৃষ্ঠায় । আজ – ‘হয় ” আমার ” নয় শত্রু ‘ হেডিং দিয়ে একটি হৃদয় বিদারক লেখা লিখেছেন । প্রতিটি ছত্রে ছত্রে কান্না যেখানে ঝড়ে পড়ছে চুয়ে চুয়ে । আলাপন এবং মমতার জন্য ।
এই লেখাটিরই অপেক্ষায় ছিলাম । এই আকালে এই তৈল মর্দন না করলে কি কৈফিয়ত দেবেন নবান্নে ? দেবাশিস !
কে এই দেবাশিস ?
আনন্দবাজারে মমতার সঙ্গে পি আর করার জন্য এই মানুষটি রিটায়ারমেন্টের পর কাঁচের ঘর নিয়ে চারতলায় বসে আছেন । সব সিনিয়র ভাল ভাল সাংবাদিক ৬০ এ রিটায়ার করে যান । ইনি কিন্তু করেন না । কারণ ৬৫ পেরোলেও ওঁর ৬০ আর কিছুতেই আসেনা ।
উনি নেত্রীর কাছের মানুষ, ভীষণ কাজেরও মানুষ । আনন্দবাজারে অভীক সরকারের পদ চলে যায়, এঁর কিন্তু যায় না । যাবেও না আমৃত্যু । কারণ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক স্বার্থটা সাংবাদিক হয়েও ইনিই দেখেন । সেটাই এঁর মূল কাজ । তাই চতুর্থ পৃষ্ঠায় প্রতি বৃহস্পতিবার ব্যবসায়িক স্বার্থে আহা মমতা, আহা মমতা করে লেখেন, লিখে যান দেবাশিস, নিয়ম করে ।
কিন্তু সরকারের কাছ থেকে মুনাফা বুঝে নেওয়ার লেখাতেও ন্যূনতম যুক্তিগুলো তো থাকবে ? তথ্য গুলো তো থাকবে ?
জানি আশা করাটা একটু বেশী বাড়াবাড়ি, কিন্তু পাবলিক ডোমেনে যখন কেউ লেখেন উত্তর দেওয়াটাও জরুরি । মুখের আড়ালে মুখোশটাকে একটু আলগা করে দেওয়ার জন্য ।
দেবাশিস আলাপন প্রটোকল ভাঙেননি বোঝানোর জন্য লেখাটাতে কি মরিয়াই না হয়েছেন । লিখেছেন – “মুখ্যসচিব প্রটোকল মানেননি এটাই সহসা ধরে নিতে হবে কেন ? সমগ্র কাহিনীতে রাজনীতির গন্ধ খুব উগ্র “।
বেশ, ঠিকই লিখেছেন দেবাশিস, কিন্তু প্রশ্নটা হল রাজনীতিটা করলেন কে ? মমতা না প্রধানমন্ত্রী ? প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বসতে চাওয়াটা রাজনীতি ? তাইতো ? আর বৈঠকে না বসে কাজ দেখিয়ে মুখ্য সচিবকে নিয়ে হন হন করে বেরিয়ে যাওয়াটা রাজনীতি নয়, তাইতো ? দেবাশিস ?
দেবাশিস লিখেছেন – মুখ্যসচিবের প্রথম দায়বদ্ধতা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ।
ঠিক, একদম ঠিক । কিন্তু সেই দায়বদ্ধতা কি বলে ভারতবর্ষের প্রথম চেয়ারের সঙ্গে ন্যূনতম শিষ্টাচার না মানা ?
ডা: শ্যামাপদ গড়াই এর কথা মনে পড়ে দেবাশিস ? ডেকে পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা । ডা: গড়াই বলেছিলেন – জরুরি অপারেশন আছে, পরে দেখা করব । কি জুটেছিল মনে পড়ে দেবাশিস ? সাসপেনশন, সমস্ত পাওনা গন্ডা আটকে দেওয়া, এমনকি তাঁর রেজিস্ট্রেশন বাতিলের জন্য সরকারের উদ্যোগ ।
ভুলে গেলেন সেই ইতিহাস ? দেবাশিস ? ডা: শ্যামাপদ গড়াইয়ের দায়বদ্ধতা তো প্রথম ছিল রুগীর কাছে ? সেটা জানিয়েওছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে । মেনেছিলেন মমতা ? আপনার আসল মনিব, যাঁর হয়ে চতুর্থ পৃষ্ঠায় ব্যাটিং করছেন প্রতি বৃহস্পতিবার নিয়ম করে ? এক লাইনও লিখতে পারবেন এই মানুষটির উদাহরণ টেনে ?
দেবাশিস লিখেছেন – এক মন্ত্রী, জেলা শাসক, পুলিশ সুপার তো ছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে রিসিভ করতে। সেটাকে প্রটোকল ভাঙা বলা যাবে কি ?
সঠিক প্রশ্ন । দেবাশিস একবার ভেবে দেখুন তো মুখ্যমন্ত্রী গেছেন জেলা সফরে । জেলা শাসক, পুলিশ সুপার নিজেরা না থেকে এস ডি পি ও, এস ডি ও দের রিসিভিং এ রেখে যদি কাজের বাহানা দেখাতেন মমতার স্টেপটা কি হত ? ভেবেছেন একবার ? দেবাশিস ? ও দেবাশিস ? বলুন একবার পরিস্থিতি টা ঠিক কি রকম হত ?
দেবাশিস লিখতে গিয়ে হাতের কাছে গুজরাটের উদাহরণ টেনেছেন, হাতের কাছে ওড়িশাকে পাননি কেন ? লিখলে মমতা চটে যাবেন বলে ?
২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর ডাকা কোন সভায় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উপস্থিত থাকেন নি তার উদাহরণ টেনেছেন । বেশ করেছেন । টানা উচিত লেখার যুক্তিতে । কিন্তু একবারও মনে পড়ে কি ২০১৪ সাল থেকে গত ৮ বছরে ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রীর ডাকা প্রায় ১৭ টি সভায় এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকেন নি । কলমে লেখার হিম্মত রাখবেন দেবাশিস, ও দেবাশিস !
কথায় আছে যুক্তি যখন হারিয়ে যায় মানুষ তখন অন্ধ হয় । দেবাশিস ভট্টাচার্যরা স্বেচ্ছায় বন্দ্ধ্যা হন । প্রাতিষ্ঠানিক তাগিদে, নির্দেশে । মুনাফা খোঁজেন সাংবাদিকতার আড়ালে । ওদিকে আমাদের কি সুন্দর স্লোগান গিলতে হয় – পড়তে হয়, না হলে পিছিয়ে পড়তে হয় ।
এঁরাই নাকি ফোর্থ পিলার, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ !! আমাদের নাকি পাহারাদার !
ভাবুন, কি সুন্দর এঁরা আমাদের আস্থা আর বিশ্বাস গুলোকে নবান্নের ১৪ তলায় গিয়ে বিক্রি করে আসেন প্রতি বিকেলে । নিয়ম করে ।
লজ্জার ।।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮ )