পার্বত্য চট্টগ্রামও ভারতের!

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতের অংশ।ত্রিপুরায় বসবাসরত জাতিগত চাকমা সম্প্রদায়ের নেতারা এ দাবি তুলেছেন। আন্তর্জাতিক আদালতে জাতিগত নিপীড়নের বিচারও চেয়েছেন এ জনগোষ্ঠীর নেতারা।

ভারতের স্বাধীনতার প্রায় ৭০ বছর পর চাকমাদের এমন দাবি।পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের ভূখণ্ড হলেও বিভিন্ন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমারা ভারতে আশ্রয় চেয়ে আসছে বলে অভিযোগ ত্রিপুরার চাকমা নেতাদের। দেশটির ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস শনিবার এক প্রতিবেদনে ত্রিপুরা চাকমাদের এ দাবির খবর দিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সাল থেকে ১৭ আগস্টকে কালো দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া ও ত্রিপুরা চাকমা স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।

শনিবার ত্রিপুরার আগরতলা, কাঞ্চনপুর, পেচারঠাল, কুমারঘাট, মানু, চাইলেঙটা, চৌমানু, গান্দাছেড়া, নতুনবাজার, সিলাছড়ি, বীর চন্দ্রমানু এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ভারতীয় চাকমাদের এ দুই সংগঠন।

চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার ত্রিপুরা শাখার মহাসচিব উদয় জ্যোতি চাকমা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামকে হস্তান্তরের ঐতিহাসিক অন্যায়ের প্রতিবাদে এই কালো দিবস উদযাপন করা হয়।

চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার ত্রিপুরা শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট অনিরুদ্ধ চাকমা বলেন, ‘আমরা চাকমা জনগোষ্ঠীর মানুষের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন, অস্থিরতা ও অবিচারের প্রতিবাদে প্রত্যেক বছর এই কালো দিবস উদযাপন করছি।

আমরা মনে করি, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আদালত ইন্টারন্যাশন্যাল কোর্ট অব জাস্টিসের কাছে ন্যায়বিচার এবং সহানুভূতি কামনা করছি।’

ঐতিহ্যগতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা, মারমা, তিপেরাস, চাক, মুরং, খুমি, লুসাই, বোম, পাঙ্খ এবং মগসহ কমপক্ষে ১১টি জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বসবাস করে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের আয়তন প্রায় ৫ হাজার ১৩৮ বর্গকিলোমিটার; যার উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে মিয়ানমারের আরাকান পর্বত, পূর্বে মিজোরামের লুসাই ও মিয়ানমারের আরাকান পর্বত এবং পশ্চিমে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার অবস্থান।

চাকমা ওই নেতা বলেন, ভারতের স্বাধীনতার সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ অধিবাসী ছিল বৌদ্ধ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের। কিন্তু স্যার সিরিল র্যাডক্লিফ নেতৃত্বাধীন সীমান্ত কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল।

১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা সদর দফতর রাঙ্গামাটিতে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন চাকমা নেতা শ্রেয়া কুমার চাকমা।

এর দু’দিন পর রেডিওতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম হবে পাকিস্তানের অংশ। এ ঘোষণার পর ২১ আগস্ট রাঙ্গামাটি থেকে ভারতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলে তৎকালীন পাক সামরিক বাহিনী। তখন থেকে চাকমা নেতাদের ভারতের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান এবং বর্তমানে বাংলাদেশের ভূখণ্ড হলেও জাতিগত নিপীড়নের অভিযোগ তুলে বিভিন্ন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমারা ভারতে আশ্রয় চেয়ে আসছে বলে দাবি ত্রিপুরার চাকমা নেতাদের।

১৯৮৬ সালে ত্রিপুরা এবং মিজোরামের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে ৫০ হাজারের বেশি চাকমা আশ্রয় নিয়েছে। পরে তাদের অনেককে অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে পুনর্বাসন করা হয়। তবে চাকমাদের সর্বশেষ একটি দল ভারতের ত্রিপুরায় আশ্রয়ের আবেদন করেছিল ২০১৩ সালে। কিন্তু সেই সময় তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।

শনিবার ত্রিপুরার টিভি অ্যাসোসিয়েশন হলের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানায় উত্তেজিত চাকমারা।তারা মনে করে, ভারত তাদের ‘কল্পিত মাতৃভূমি’। যদিও চাকমা ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী বাংলাদেশের পার্বত্য চট্ট্রগ্রামে বসবাস করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.