এক সময় ছিল যখন ভদ্র রাজবংশ এই বঙ্গদেশের এক অংশ (সমতট) শাসন করত। বলা হয় যে পালবংশের স্থাপয়িতা গোপালদেবের স্ত্রী এবং ধর্মপালদেবের মা ছিলেন ভদ্রবংশীয়। কিন্তু সে কথা অপেক্ষাকৃত প্রাচীনকালের।
সাম্প্রতিক এক সময়ে ‘ভদ্র’ বলতে বাঙালী বুঝত বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। ‘প্রধান অতিথি’ হিসেবে বাঙালী তাঁকে বরণ করত নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, বহু পুজোর উদ্বোধন হত তাঁর পুণ্যস্পর্শে। বাঙালীর সেই সময়ের সাক্ষী থেকেছি ছোট বেলায়। মনে আছে এক পুজোর উদ্বোধনে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র’র গলায় মাল্যদান করেছিল এক শিশুকন্যা যার পর সেই মালা আবার তারই গলায় পরিয়ে দিয়েছিলেন বৃদ্ধ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। অতঃপর পাড়ার লোক কৌতুকবশে সেই বাচ্চাকে ক্ষেপাতে থাকে এই বলে যে “বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র’র সঙ্গে তোর যে বিয়ে হয়ে গেল, তাহলে এবার উপায় হবে কি?” জবাবে তার কান্না দেখে হাসিতে ফেটে পড়ছিল বাড়িশুদ্ধ লোক। এইসব সময় আমরা পেরিয়ে এসেছি।
আজ, ‘ভদ্র’ বলতে বাঙালী বোঝে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ‘কালিঘাটের কাকু’। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ থেকে সুজয়কৃষ্ণ — বাঙালীর অধঃপতনের পথটি অনতিদীর্ঘ ও বন্ধুর। মাত্র সাত দশকের মধ্যেই অধঃপাতে গিয়েছে ঊনবিংশ শতকের রেনেসাঁ নিয়ে গর্ব করা লোকগুলি। তবে এমন “পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর-পন্থা” এই বঙ্গদেশ অতিক্রম করেছে বারংবার। তাই এমন বিশ্বাস রাখাই যায় যে অতীতে পরিণত হবে বর্তমান পতনের সময়টিও, এবং আবার আসবে বাঙালীর পুনরুত্থানের কাল। সুজয়কৃষ্ণরা মুছে যাবে, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ থাকবেন। ‘বাঙালী ভদ্রলোক শ্রেণী’র পতন হলেও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ সেই ‘ভদ্র’লোক যাঁর ‘ভদ্র’তার পতন হয় নি।
দেবযানী ভট্টাচার্য