Story image

বসন্তবৌরি

কলকাতার পাখি বলতে কোয়েল, দোয়েল, হাঁড়িচাচা, বউ কথা কও – এরা সবাই বাংলার পাখি। সুন্দর হলুদ পাখি বউ কথা কও-কে সেলিম আলি ‘বাংলার পাখি’ বলে উল্লেখ করেছেন, কারণ বাংলার নানা অঞ্চলে এদের বেশি পাওয়া যায়। নগরায়নের সঙ্গে সঙ্গে পাখি অনেক কমে গিয়েছে কলকাতায়। পাখিদের খাদ্য ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে স্থান পরিবর্তন করাটাই স্বাভাবিক। আর প্রধান কারণ বাসস্থানের অভাব। প্রতিদিন রাস্তাঘাট বড়ো হচ্ছে। গড়ে উঠছে বিশাল বিশাল কমপ্লেক্স। বড়ো গাছপালা কমে যাওয়ার দু’টি কারণ। এক, নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা। দুই, আয়লা, আমফানের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এসবের ফলে পাখিরা লোকালয় থেকে শহরের বাইরে চলে যাচ্ছে। 

নীল গলা বসন্তবৌরি

হাঁড়িচাচা 

ঝুট শালিক, নীল গলা বসন্তবৌরি, হাঁড়িচাচা, বসন্তবৌরি, দোয়েল পাখি প্রচুর ছিল কলকাতায়। সকালবেলায় দোয়েলের সুন্দর গান শুনে অনেকের ঘুম ভেঙে যেত। তার জন্য দোয়েলকে বাংলার নাইটিঙ্গেল বলা হয়ে থাকে। এদের কম সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। কাক, শালিক, চড়ুই পাখিরা মূলত খাদ্যাভ্যাসের জন্যই লোকালয়ে থাকতে ভালোবাসে।  আগে এদের দেখা যেত পাড়ায় পাড়ায় – এখন সেভাবে পাওয়া যায় না। বাড়ির ঘুলঘুলিতে আগে চড়ুইয়ের মতো পাখিরা বাসা করত। শহরের বাড়িঘরে ঘুলঘুলি দেখা যায় না আজকাল। হাঁড়িচাচা, কাঠঠোকরাও কম দেখা যাচ্ছে। পরিযায়ী পাখিরাও খুব কম সময়ের জন্য এসে ফিরে যায়। রবীন্দ্র সরোবর, সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের মতো বাগানে অবশ্য বেশ কিছু পাখি থাকে। টিয়া ও হলুদ পা হরিয়াল দু-একটার দেখা মেলে। বনবিতানে আগে যেমন গাছে কয়েকটা পেঁচা প্রায় দেখা যেত, এখন আর নেই। বন বিভাগের তরফ থেকে ওখানে নতুনভাবে গাছ লাগানোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে এবং কিছু উদ্ধার করা পাখিকে ওখানে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। দেখা যাক এতে পাখির সংখ্যা বাড়বে কিনা। সরোবরে চেষ্টা চলছে গাছপালা সংরক্ষণের। বিশেষ করে যাতে আরও বেশি ফলের গাছ লাগানো যায়, সেদিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। এই মুহূর্তে ৫৬ রকম প্রজাতির পাখি কলকাতা ও তার আশেপাশে দেখা যায়।

কোকিল

সিপাহি বুলবুলি

ইষ্টিকুটুম, বেনেবউ

এক সময় রাজারহাটে তৃণভূমি এবং জলাভূমিতে অনেক পাখি ছিল। এখন তারা সংখ্যায় অনেক কম। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ইকো পার্কের পিছনে ও রাজারহাট গ্রাসল্যান্ডে লালমুনিয়া দেখতে পাওয়া গিয়েছে। হিডকোর সভাপতি দেবাশিস সেন পাখিদের জন্য অনেক উদ্যোগ নেন। ইকো পার্কে গড়ে তোলা হয়েছে পাখিবিতান। বাগানগুলোয় ফলের গাছ যাতে বেশি লাগানো হয়, সেদিকে নজর দেয় হিডকো। দুঃখের কথা, এমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না কলকাতায়। সল্টলেকের বনবিতানে আগে ছিল অনেক মৌটুসি। ফুলের গাছ কাটা হচ্ছে বলে সেগুলো বিরল হয়ে এসেছে। আমি সল্টলেকের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, আগে যেমন সকালে পাখির ডাক শোনা যেত, এখন প্রায় যায়ই না। চিন্তামণি অভয়ারণ্যের আশেপাশে প্রচুর বসতবাড়ি। তার থেকে শ্যামখোলা এবং বারুইপুরে অনেক বেশি পাখি রয়েছে।


কাঠঠোকরা

দোয়েল

আরেক শ্রেণির পাখি থাকে জলাভূমিতে। যেমন কয়েক রকম বক, শামুকখোল, জলপিপি, পানকৌড়ি। বিভিন্ন রকম পরিযায়ী হাঁস আগে পূর্ব কলকাতার জলাভূমিতে দেখা যেত। এখন সেখানে সংগঠিত মৎস্যচাষ হয়। এতে বাড়ছে মাছের উৎপাদন। কিন্তু পাখির সংখ্যা কমছে। কামদুনিতেও প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসত। মাছ চাষ করার জন্য এখন সেখানে বিলগুলোর ওপর দড়ি টানানো হয়। পাখি তাই যেতে পারে না। ছোটোবেলায় কলকাতাতেই তালগাছ, সুপুরিগাছে দেখতাম বাবুই পাখি। আজ তাদের দেখতে চাইলে ডায়মন্ড হারবার বা ২৪ পরগনা যেতে হবে।

ঝুট শালিক

তবে আশার কথা, শকুন ছাড়া কোনো পাখিই কলকাতা থেকে লুপ্ত হয়ে যায়নি। এখনও পাখিদের সংখ্যা বাড়ানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। প্রশাসনকে যেমন উদ্যোগী হতে হবে, নাগরিকদের সচেতনতা বাড়ানোও জরুরি। তাহলে পরিবেশ দূষণকে অনেকটাই প্রতিরোধ করতে পারব আমরা।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.