রাজ্য সরকারের এবারের বাজেট ( ভোট অন অ্যাকাউন্ট) ‘চমকে ভরা।’ ‘কল্পতরু মুখ্যমন্ত্রী’তয় চার মাসের ব্যয়নির্বাহ করতে যে বাজেট ঘোষণা করলেন তাতে সংখালঘুদের জন্য একটা বাক্যও ব্যয় করলেন না।রাজ্যের প্রায় তিন কোটি সংখ্যালঘুূর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি ও উন্নয়ন নিয়ে তাতে ছিটেফোঁটাও উল্লেখ নেই। অথচ সাচার কমিটি নিয়ে তিনিই বেশি সরব হয়েছিলেন।সংখ্যালঘুদের কর্মসংস্থান, বাড়ি, মাদ্রাসা, স্কুল, হোস্টেল, হাসপাতাল,কলেজ,
বিশ্ববিদ্যালয়, কোনও প্রকল্পই ঘোষণা করলেন না। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলা মুর্শিদাবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের যে দাবী, সে বিষয়ে কোন উচ্চবাচ্য নেই। ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধার করে সংখ্যালঘুূদের উন্নয়নের কাজে লাগাবেন বলেছিলেন, তা নিয়েও কোনও বাক্যব্যয় করেননি।মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন নিয়েও কোনও কথা বলেননি।সংখ্যালঘুদের যে তিনি ভোটব্যাংক রূপে ব্যবহার করেন এ বাজেটে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। যে ফুরফুরা শরীফে বার বার ছুটে যান, তার উন্নয়ন নিয়ে কোনও রোডম্যাপ নেই। সংখ্যালঘুদের বৃহত্তর অংশ ও,বি,সি শ্রেণীভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণ, চাকরিতে নিয়োগ থেকে তারা যে বঞ্চিত তা এ বাজেট দেখেই বোঝা যায়।তিনি জঙ্গলমহল,পাহাড়,মতুয়াদের প্রতি ‘ কল্পতরু ‘ হলেও সংখ্যালঘু মুসলমানদের নিয়ে তাঁর কোনও মাথাব্যথা নেই। অথচ দীর্ঘ সাড়ে ন’বছর সংখ্যালঘু মন্ত্রকের দায়িত্ব স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। তিনি সবই জানেন,পারলে তিনি অনেক কিছুই করতে পারতেন। তাহলে কি তিনি সত্যি শুধুই ‘তোষণ ‘ করে যান।যে দশ হাজার আনএডেড মাদ্রাসার অনুমোদন দেবেন বলেছিলেন, বাস্তবে তিনি কটা মাদ্রাসার অনুমোদন দিয়েছেন? আজ সেই মাদ্রাসা শিক্ষকরা কলকাতার রাজপথে অনশনে। এরূপ দু’শ পঁয়ত্রিশটি অনুমোদন প্রাপ্ত মাদ্রাসার আড়াই হাজার শিক্ষক শিক্ষিকাকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের টাকা থেকে বঞ্চিত, দীর্ঘ সাড়ে ন বছর বেতনহীন, প্রায় দশ হাজার ছাএছাএীর মিড ডে মিল, পোশাক, সাইকেল,
বইখাতা ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা থেকে দূরে রাখা হয়েছে স্রেফ সরকারি উদাসীনতায়। যেখানে অন্যান্য রাজ্যে মাদ্রাসার সংস্কার, আধুনিকীকরণ ও উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে, সেখানে এরাজ্যে সংখ্যালঘুদের জন্য বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে এদের দূরে রাখা হয়েছে শুধুমাত্র ‘বিজেপি মুসলমান বিরোধী ‘ এই তত্ত্বকে প্রমাণ করার জন্য। সংখ্যালঘু বেকার যুবক- যুবতীদের চাকরির জন্য কোনও প্রশিক্ষণের কথা নেই মুখ্যমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়। তাদের স্ব নিযুক্তি প্রকল্পে সামিল করা, সহজশর্তে ঋণদান, প্রভৃতির মাধ্যমে উন্নয়ন করা যেত।অতিমারির জন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিযায়ী পরিবারগুলোর মধ্যে সংখ্যালঘু শ্রেণির সর্বাধিক। কেন্দ্রীয় সরকারের তাদের জন্য দিশা থাকলেও রাজ্য বাজেটে কোনরূপ দিশা নেই। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী পরিকাঠামো উন্নয়ন, উড়ালপুল,স্কাইওয়াক,সেতু,
শিল্পনগরী, রাস্তা, সেচ শিক্ষানবিশ প্রশিক্ষণ ঘোষণা করলেও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মেটিয়াব্রুজ,পার্কসার্কাস, বাঁকড়া, উলুবেড়িয়া শহর নিয়ে কোনও উল্লেখযোগ্য ঘোষণা নেই এই বাজেটে। গ্রামীণ এলাকায় বিশেষ করে দর্জি, জরী শিল্পে যুক্ত সংখ্যালঘুদের কোনও পরিকল্পনা নেই। কৃষি কাজে যুক্ত সংখ্যালঘুদের সংখ্যাটা ব্যাপক। তাদের জন্য বরাদ্দ নেই, ফসলের বীমা নেই। কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকেও তাদের বঞ্চিত রাখা হয়েছে ভোটের রাজনীতির জন্য।

Samsur Rahaman

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.