মস্ত মুমিন থেকে

এই যে তুমি মস্ত মুমিন, মুসলমানের ছেলে;
বক্ষ ভাসাও, ফিলিস্তিনে খুনের খবর পেলে।
রোহিঙ্গাদের দুঃখে তুমি এমন কাঁদা কাঁদো;
ভাসাও পুরো আকাশ-পাতাল, ভাসাও তুমি চাঁদও!
অশ্রু তোমার তৈরি থাকে— স্বচ্ছ এবং তাজা;
হ্যাশের পরে লিখছ তুমি— বাঁচাও, বাঁচাও গাজা।
কোথায় থাকে অশ্রু তোমার— শুধোই নরম স্বরে,
তোমার-আমার বাংলাদেশে হিন্দু যখন মরে?
মালেক-খালেক মরলে পরে শক্ত তোমার চোয়াল;
যখন মরে নরেশ-পরেশ, শূন্য তোমার ওয়াল!
তখন তোমার ওয়ালজুড়ে পুষ্প এবং পাখি,
কেমন করে পারছ এমন— প্রশ্ন গেলাম রাখি।

….

বাংলাদেশের কস্তা-গোমেজ— যিশুর দলের লোক;
বোমায় ওড়ে গির্জা যখন, তখন কেবল শোক।
বস্তাভরা শোকের রঙে কস্তা তখন রাঙে,
যিশুর নামে মারলে মানুষ নিদ্রা কি আর ভাঙে!
মরণ হলে মুসলমানের, হয় না কাঁদার ইশু;
গভীর ঘুমে থাকেন তখন বাংলাদেশের যিশু!
খেলার ওপর চলছে খেলা— টমের সাথে জেরি;
বঙ্গদেশের সন্তানেরা এমন কেন, মেরি?
তোমরা যারা কস্তা-গোমেজ কিংবা রোজারিও;
মুখের ওপর মুখোশ খুলে জবাব এবার দিয়ো।

….

পাগড়ি দেখি, পৈতা দেখি, আকাশজুড়ে ফানুশ;
চতুর্দিকে চতুষ্পদী, হচ্ছি কজন মানুষ!
জগৎজুড়ে সৈয়দ কত, কত্ত গোমেজ-বসু;
খতম কজন করতে পারি মনের মাঝের পশু!
মরণখেলায় হারছে কে বা, জিতছে আবার কে রে;
মরছে মানুষ, দিনের শেষে যাচ্ছে মানুষ হেরে।
হারার-জেতার কষতে হিশেব মগজ খানিক লাগে,
একটুখানি মানুষ হোয়ো কফিন হওয়ার আগে।
রক্তখেলা অনেক হলো, সময় এবার থামার;
বিভেদ ভুলে বলুক সবে— সকল মানুষ আমার।

বন্ধ ঘরের দরজা ভাঙো, অন্ধ দু-চোখ খোলো;
মরছে কেন আমার মানুষ— আওয়াজ এবার তোলো।

আখতারুজ্জামান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.