আজ পূণ্য নাগ পঞ্চমী।
কথামৃতকার পূজ্য মাষ্টার মশাই-এর জন্মতিথি।
তাঁর জীবনকথা, কথামৃতের ব্যাক্তি পরিচয় থেকেঃ
ইনি ‘শ্রীম’ বা মাস্টার মহাশয় নামে অধিক খ্যাত। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতিছাত্র ছিলেন, এবং বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিয়শনের ও অন্যান্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণের সহিত মিলিত হইবার পূর্বে তিনি কেশবচন্দ্র সেনের অনুরাগী ছিলেন। তখনকার দিনের অন্যান্য সকল ইংরেজী শিক্ষিত যুবকের মতো তিনিও পাশ্চাত্য দর্শন ও বিজ্ঞানে অনুরক্ত ছিলেন। কেশবচন্দ্রের আকর্ষণে তিনি ব্রাহ্মধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হইয়াছিলেন। ব্রাহ্মসমাজের সভাতেই তিনি পরমহংসদেবের নাম শুনিয়াছিলেন। তাঁহার নিকট আত্মীয় নগেন্দ্রনাথ গুপ্তের অনুপ্রেরণায় তিনি তাঁহার অপর এক আত্মীয় সিদ্ধেশ্বর মজুমদারের সঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে গিয়াছিলেন।
১৮৮২ খ্রীষ্টাব্দে মহেন্দ্রনাথ প্রথম ঠাকুরকে দর্শন করেন। প্রথম দর্শনই তাঁহার হৃদয়-মনকে এতদূর অভিভূত করে যে তিনি চিরজীবনের জন্য ঠাকুরের ভালবাসায় মুগ্ধ হইয়া যান। তাঁহার বিদ্যাশিক্ষা ও জ্ঞানের গর্ব ঠাকুরের প্রভাবে ভগবন্মুখী হইয়া যায়। তিনি বুঝিতে পারেন যে ঈশ্বরকে জানাই আসল জ্ঞান। ঠাকুর প্রথম দর্শনেই মহেন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিক সম্ভাবনার কথা জানিয়াছিলেন। ঠাকুরের নিরন্তর উপদেশ অবিরাম শিক্ষা তাঁহাকে ভাগবত জীবনযাপনের শিক্ষা দিতে লাগিল। ঠাকুরের বাণী প্রচার করাই তাঁহার ভবিষ্যত জীবনের কাজ সেজন্য তাঁহাকে ঠাকুর গড়িয়া তুলিতে লাগিলেন। সংসারে থাকিয়াও গৃহী-সন্ন্যাসীর জীবনযাপন, ঈশ্বরের প্রতি অসীম ভক্তি, সাধু সন্ন্যাসীদের সেবা তাঁহার শেষ জীবন অবধি তিনি করিয়া গিয়াছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁহার ধ্যানে, মননে, তাঁহার সমগ্র চিন্তাকে তন্ময় করিয়া রাখিতেন সর্বদা। তাঁহার বহু ছাত্রকে তিনি ঠাকুরের কাছে লইয়া আসিয়াছেন যাঁহাদের মধ্যে অনেকে পরবর্তী জীবনে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের সন্ন্যাসী হইয়াছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে ছায়ার মতো তিনি ঘুরিতেন এবং তাঁহার আচরণ পূর্বকথা, বাণী সব লিপিবদ্ধ করিয়া রাখিতেন যাহা তিনি ইংরেজী ছোট পুস্তিকাকারে প্রথম প্রকাশ করেন। ৫০ নং আমহার্ষ্ট স্ট্রীটে ৪র্থ তলের এক ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে প্রায় ২০ বৎসর বাস ও শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতের পরিবেশনাই মাস্টার মহাশয়ের জীবনের শ্রেষ্ঠ দান। তিনি কথামৃত ইংরেজীতে ‘গসপেল অফ শ্রীরামকৃষ্ণ’ নামে প্রকাশ করেন যাহা পাঠ করিয়া বহু দেশী-বিদেশী মানুষ প্রভাবিত হইয়াছেন এবং শ্রীরামকৃষ্ণের আদর্শ ও বাণী, দেশ-দেশান্তরের মানুষকে শান্তিলাভের পথে চলিবার প্রেরণা দান করিতেছে।