প্রফুল্ল চাকী (১০ই ডিসেম্বর, ১৮৮৮ — ২রা মে, ১৯০৮) ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী ছিলেন। পূর্ববঙ্গে জন্ম নেওয়া এই বাঙালী বিপ্লবী তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং জীবন বিসর্জন দেন।

প্রফুল্ল চাকীর জন্ম ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত বগুড়া জেলার বিহার গ্রামে। ছোটবেলায় তাঁকে বগুড়ার ‘নামুজা জ্ঞানদা প্রসাদ মধ্য বিদ্যালয়ে’ ভর্তি করানো হয়। পরবর্তীতে তিনি বগুড়ার মাইনর স্কুলে ভর্তি হন। ১৯০২ সালে রংপুর জিলা স্কুলে ভর্তি হন। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় পূর্ববঙ্গ সরকারের কারলিসল সার্কুলারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের দায়ে তাঁকে রংপুর জিলা স্কুল হতে বহিস্কার করা হয়। এরপর তিনি রংপুরের কৈলাস রঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে পড়ার সময় জীতেন্দ্রনারায়ণ রায়, অবিনাশ চক্রবর্তী, ঈশান চন্দ্র চক্রবর্তী সহ অন্যান্য বিপ্লবীর সাথে তাঁর যোগাযোগ হয় এবং তিনি বিপ্লবী ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত হন।

১৯০৬ সালে কলকাতার বিপ্লবী নেতা বারীন ঘোষ প্রফুল্ল চাকীকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। যেখানে প্রফুল্ল যুগান্তর দলে যোগ দেন। তাঁর প্রথম দায়িত্ব ছিল পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের প্রথম লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার জোসেফ ব্যামফিল্ড ফুলারকে (১৮৫৪-১৯৩৫) হত্যা করা। কিন্তু এই পরিকল্পনা সফল হয় নি। এর পর প্রফুল্ল চাকী ক্ষুদিরাম বসুর সাথে কলকাতা প্রেসিডেন্সি ও পরে বিহারের মুজাফফরপুরের অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল কিংসফোর্ডের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাকে ১৯০৮ খ্রীষ্টাব্দের ৩০শে এপ্রিল সন্ধ্যা বেলায় হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। ইউরোপিয়ান ক্লাবের প্রবেশদ্বারে তাঁরা কিংসফোর্ডের ঘোড়ার গাড়ির জন্য ওত পেতে থাকেন। একটি গাড়ি আসতে দেখে তাঁরা বোমা নিক্ষেপ করেন। দুর্ভাগ্যক্রমে ঐ গাড়িতে কিংসফোর্ড ছিলেন না, বরং দুইজন ব্রিটিশ মহিলা মারা যান তারা ছিলেন ভারতপ্রেমিক ব্যারিস্টার কেনেডির স্ত্রী ও কন্যা। প্রফুল্ল ও ক্ষুদিরাম তৎক্ষণাৎ ঐ এলাকা ত্যাগ করেন।

প্রফুল্ল ও ক্ষুদিরাম আলাদা পথে পালাবার সিদ্ধান্ত নেন। প্রফুল্ল ছদ্মবেশে ট্রেনে করে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ২রা মে তারিখে ট্রেনে নন্দলাল ব্যানার্জী নামে এক পুলিশ দারোগা সমস্তিপুর রেল স্টেশনের কাছে প্রফুল্লকে সন্দেহ করেন। মোকামা স্টেশনে পুলিশের সম্মুখীন হয়ে প্রফুল্ল পালাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোণঠাসা হয়ে পড়ে তিনি ধরা দেওয়ার বদলে আত্মাহুতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি নিজের মাথায় পিস্তল দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন। পরবর্তীতে অনেক ঐতিহাসিক অনুমান করেন প্রফুল্ল আত্মহত্যা করেননি, তাঁকে পুলিশ খুন করে মাথা কেটে নেয়। ক্ষুদিরাম পরবর্তীকালে ধরা পড়েন এবং তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ব্রিটিশ পুলিস ইনস্পেকটর নন্দলালকে ৯ই নভেম্বর, ১৯০৮ সালে হত্যা করে প্রফুল্ল চাকীকে ধরিয়ে দেওয়ার বদলা নেন অপর দুই বাঙালী বিপ্লবী রনেণ গাঙ্গুলি ও শ্রীশচন্দ্র পাল।
(সৌজন্যেঃ উইকিপিডিয়া)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.