বৈষ্ণব ইন্দো-গ্রিক রাষ্ট্রদূত হেলিওডোরাস তাঁর শিলালিপিতে নিজেকে ‘ভাগবত’ বলেই পরিচয় দিয়েছিলেন

রাজস্থানের Nagari গ্রামের কাছে একটি অতি প্রাচীন কালের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা আয়তক্ষেত্রাকার একটি স্থান আছে, যার নাম Hathi Bada.
এই Hathi Bada আয়তক্ষেত্রাকার অঞ্চলটির দৈর্ঘ্য 296 ফিট 10 ইঞ্চি ও প্রস্থ 151 ফিট। আর প্রাচীরের original উচ্চতা 9 ফিট 6 ইঞ্চি।
মোগল সম্রাট আকবর যখন এই অঞ্চলে এসেছিলেন তখন তিনি Nagari তে camp করেছিলেন আর এই প্রাচীরে ঘেরা আয়তক্ষেত্রাকার অঞ্চলে হাতি রেখেছিলেন। তারপর থেকে এই আয়তক্ষেত্রাকার অঞ্চলটির নাম হয়ে গেছে Hathi Bada.

কিন্তু আসলে এই প্রাচীরে ঘেরা আয়তক্ষেত্রাকার অঞ্চলটি একটি অতি প্রাচীন 2000 বছরের থেকেও পুরাতন একটি খ্রিস্টপূর্বের বৈষ্ণব উপাসনা কেন্দ্র।

এই আয়তক্ষেত্রাকার বৈষ্ণব উপাসনা কেন্দ্র সংক্রান্ত প্রথম খ্রিস্টপূর্বাব্দের শুরুর দিকের ব্রাহ্মী লিপি ও সংস্কৃত ভাষার একটি শিলালেখ পাওয়া যায়। Jan Gonda এর মতো কয়েকজন পন্ডিতদের মতে এই শিলালেখ দ্বিতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দের। তবে Bhandarkar এর মতো পন্ডিতেরা প্রথম খ্রিস্টপূর্বাব্দের শুরুর দিকটাই সমর্থন করেছেন এই শিলালিপির কাল হিসেবে।

এই ব্রাহ্মী সংস্কৃত শিলালেখের ইংরেজি অনুবাদ এইরূপ―
“(This) enclosing wall round the stone(object) of worship, called Narayana-vatika (Compound) for the divinities Samkarshana-Vasudeva who are unconquered and are Lords of all (has been caused to be made) by (the king) Sarvatata, a Gajayana and son of (a lady) of the Parasara Gotra, who is a devotee of Bhagavat (Vishnu) and has performed an Asvamedha sacrifice.”

অর্থাৎ, সর্বতাত নামে একজন বৈষ্ণব গাজায়ণ রাজা, যিনি অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন, যাঁর মাতা পরাশর গোত্রের ছিলেন, তিনি ভগবান সঙ্কর্ষণ-বাসুদেব ( বলরাম-কৃষ্ণ) এর পুজা-শিলার চারদিকে একটি প্রাচীর নির্মাণ করেন। ‘পূজা-শিলা’ মানে যে শিলাটিকে পুজো করা হয়।
শিলালেখে এই প্রাচীরের নাম দেওয়া হয়েছে ‘পূজা-শিলা-প্রাকার’, অর্থাৎ পূজা-শিলার চারদিকে নির্মাণ করা প্রাচীর(প্রাকার)।
এখানে ‘পূজা-শিলা’ মানে যে শিলার দ্বারা ভগবান সঙ্কর্ষণ-বাসুদেবকে represent করা হয়েছে সেই শিলা বোঝায়। আর ‘প্রাকার’ এর অর্থ প্রাচীর।
মানে, বলরাম ও বাসুদেবের শিলার চারদিকে নির্মাণ করা প্রাচীর বা প্রাকার।
অর্থাৎ, Hathi Bada আয়তক্ষেত্রাকার অঞ্চলের চারদিকে যে প্রাচীন প্রাচীরটি রয়েছে, সেটাই এই ‘পূজা-শিলা-প্রাকার’।
আর এই Hathi Bada এর আসল নাম ছিল ‘নারায়ণ-বাটিকা’, এক অতি প্রাচীন বৈষ্ণব উপাসনা কেন্দ্র। এই নারায়ণ বাটিকাতে বলরাম-বাসুদেবের শিলাকে পুজো করা হতো।
আর রাজা সর্বতাত, যিনি এই ‘পূজা-শিলা-প্রাকার’ নির্মাণ করেছিলেন, তাঁর নামের সাথে ‘গাজায়াণ’ সংযুক্ত থাকার কারণে তিনি কোন এক ব্রাহ্মণ রাজবংশোদ্ভূত হতে পারেন। আর সম্ভবত ‘সর্বতাত’ টি এই রাজার কোনো এক উপাধি, আসল নাম নয়।

এইরকম পূজা-শিলা-প্রাকারের মতো প্রাচীর/Railing মধ‍্যপ্রদেশের Beshnagar এর প্রাচীন বাসুদেবের মন্দিরেও পাওয়া গেছে, যেখানে দ্বিতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দে বৈষ্ণব ইন্দো-গ্রিক রাষ্ট্রদূত হেলিওডোরাস ‘গরুড় স্তম্ভ’ নির্মাণ করেছিলেন।
এই পূজা-শিলা-প্রাকারের মতো প্রাচীর গুলো বৌদ্ধ স্তুপের চারদিকে Railing গুলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। যদিও দুটি আলাদা আলাদা আকৃতির ও আলাদা আলাদা ধর্মীয় উপাসনার সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল।
মানে সেই যুগে যেসব স্থান গুলোর আধ‍্যাত্মিক মূল্য আছে, সেই স্থান গুলো কে প্রাচীর/Railing দিয়ে ঘিরে রাখার একটি প্রথা প্রচলিত ছিল, সেই আধ‍্যাত্মিক স্থান হিন্দু হোক কিংবা বৌদ্ধ।

300 খ্রিস্টপূর্ব থেকে 100 খ্রিস্টাব্দের মাঝের সংস্কৃত ভাষায় শিলালেখ খুবই কম পাওয়া গেছে ভারতে। কারণ এই যুগে প্রাকৃত ভাষাই প্রধান কথ‍্য ভাষা ছিল।
এই Hathi Bada এর সংস্কৃত শিলালেখ সেই Rare সংস্কৃত শিলালেখ গুলোর মধ্যে অন‍্যতম।
Beshnagar এর বাসুদেবের মন্দিরে হেলিওডোরাস গরুড়স্তম্ভে যে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের শিলালেখটি দিয়েছিলেন, সেটিও প্রাকৃত ভাষায় দিয়েছিলেন, কিছু সংস্কৃত বানানের সাথে।
যদিও Hathi Bada এর রাজা সর্বতাতের বৈষ্ণব শিলালিপি ও Beshnagar এর হেলিওডোরাসের বৈষ্ণব শিলালিপির মধ্যে কালের ব‍্যবধান খুবই কম।

এটি সেই যুগ, যে যুগে বৈষ্ণবধর্ম ‘ভাগবত ধর্ম’ নামে পরিচিত ছিল। আর বৈষ্ণবদের বলা হত ‘ভাগবত’।
বৈষ্ণব ইন্দো-গ্রিক রাষ্ট্রদূত হেলিওডোরাস তাঁর শিলালিপিতে নিজেকে ‘ভাগবত’ বলেই পরিচয় দিয়েছিলেন।

তথ‍্যসূত্র : EPIGRAPHIA INDICA Volume XXII এ Archeologist D. R. Bhandarkar এর Hathi Bada Inscription সম্পর্কে লেখাটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.