ভূমির নামে প্রচলিত যে দেবীর পুজো, তিনিই “ভৌমী তারা।” “খ” অর্থাৎ আকাশ থেকে বহু দূরে বলে তিনি “খদূরবাসিনী” নামেও পরিচিতা। আদিতে এই দেবী ছিলেন এক বৌদ্ধ দেবী, পরবর্তী সময়ে বিবর্তনের পথে তিনি হয়ে যান হিন্দুদের বাস্তুদেবতা। কিন্তু কিভাবে ভৌমী তারা থেকে তিনি বাস্তুদেবতা হলেন, সে কথা বলার আগে আমরা একটু জৈন-বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে দু’চার কথা জেনে নিই।

গৌতম বুদ্ধ কোনো কিছুই লিখে রেখে যাননি। বুদ্ধ উপদেশ দিতেন তৎকালীন পূর্ব ভারতের মাগধী প্রাকৃত ভাষায়, যা পরবর্তীতে “পালি” নামে পরিচিত হয়। আর বুদ্ধের বৈমাত্রেয় ভাই এবং শিষ‍্য আনন্দ সে সব উপদেশগুলি লিখে রাখতেন, যেগুলি পরে “ধম্মপদ” নামে পরিচিত হয়। এরপর বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের প্রায় শতবর্ষ পরে বৌদ্ধ ভিক্ষুকরা গৌতম বুদ্ধের উপদেশগুলিকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করেন—সূত্ত, বিনয় ও অভিধম্ম এবং তার নাম দেন “ত্রিপিটক।” গৌতম বুদ্ধের উপদেশগুলি কোনটি কোন্ পিটকে থাকবে, তা নিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মধ্যে বিস্তর মতভেদ হয় এবং এর মীমাংসার জন্য পাটলিপুত্রে একটি সম্মেলন ডাকা হয়। কিন্তু মীমাংসা হয়নি।

এর শতবর্ষ পরে পুষ্পপুর বা পুরুষপুরে অর্থাৎ ব‍র্তমান পেশোয়ারে দ্বিতীয় বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতি ডাকা হয়, কিন্তু সেখানেও এর মীমাংসা হয়নি। বরং মীমাংসার বদলে মতভেদ আরও বেড়ে যায় এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুরা প্রধানত তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যান—মহাসাংঘিক, স্থবিরবাদী বা থেরবাদী ও সম্মিতীয়।

এর প্রায় শতবর্ষ পরে ফের তৃতীয় বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতি ডাকা হলো পাটলিপুত্রে। কিন্তু মীমাংসা হলো না। বরং সম্মিতীয়পন্থীদের কেউ মহাসাংঘিক, আবার কেউ কেউ স্থবিরবাদীদের খাতায় নাম লেখালেন।

এভাবে শেষ পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্মের দুটি প্রধান শাখা দাঁড়িয়ে গেল—মহাসাংঘিক ও স্থবিরবাদী বা থেরবাদী। ভারতবর্ষে মহাসাংঘিকরাই সংখ্যায় বেশি ছিলেন এবং তাঁরা নিজেদের “মহাযানী” বলে পরিচয় দিতে শুরু করলেন এবং স্থবিরবাদী বা থেরবাদীদের নাম দিলেন “হীনযানী।”

এশিয়া মহাদেশের উত্তরাংশে অর্থাৎ ভারতবর্ষ, নেপাল, সিকিম, তিব্বত, চিন, ভুটান, লাদাখ, মঙ্গোলিয়া, কোরিয়া, রাশিয়া, সাইবেরিয়া, জাপান, ফরমোজা ( তাইওয়ান) দেশের মানুষ মহাসাংঘিক অর্থাৎ মহাযান বৌদ্ধমতকে গ্রহণ করলেন। অন্যদিকে, বাঙলার চট্টগ্রাম, অসম, বার্মা, শ‍্যাম ( থাইল্যাণ্ড), কম্বোজ (কম্পূচিয়া), ভিয়েতনাম, লাওস, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নিউ গিনি, পপুয়া, শ্রীলঙ্কার মানুষ গ্রহণ করলেন স্থবিরবাদ বা থেরবাদকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.