ফলতা থেকে কলকাতা হয়ে হাওড়ায় পৌঁছোতে সময় লাগে বেশ। দু’বার বাস পাল্টাতে হয়। ভাড়াও কম নয়! এই নদী পথে যাতায়াতও তাই বহু বছরের।
এ পারে ফলতা। ওপারে হাওড়ার ধজা শ্যামপুর। মাঝে বয়ে যাচ্ছে হুগলি নদী। খুব অল্প সময়েই নদী পেরিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় ও পারে। আগে মাত্র ১ টাকা ২৫ পয়সা ভাড়া ছিল। এখনও পারাপারে খরচ অনেকটাই কম, ৯ টাকা। তার মধ্যে অবশ্য তিন টাকা যায় জেলা পরিষদের কোষাগারে।
এ পর্যন্ত ব্যাপারটা শুনতে ভালই। কিন্তু দেখতে গেলেই কান্না পেতে পারে!
ফলতা যেন ফেলনা!
দূর দূর থেকে কোনও পাকা ঘাট নেই। জোয়ার এলে তবু ভাল। সে সময় কিনারায় তবু নৌকো ভেড়ানো যায়। কিন্তু ভাঁটার সময় কাদা মাখামাখি অবস্থা। হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট-কাপড় গুটিয়ে চল্লিশ-পঞ্চাশ মিটার কাদা মাড়িয়ে তার পর নৌকোয় ওঠা। এই যেমন বন্দনা দাস বললেন, কদিন আগেই কাদায় আছাড় খেয়েছেন। নৌকোয় ওঠার ঠিক মুখে কাদায় পা পিছলে হাড়গোড় ভাঙার উপক্রম। অথচ ছেলে মেয়েদের নিয়ে ওপারে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাতায়াত লেগেই থাকে।
ফলতা থেকে ধজা শ্যামপুরে মানুষের যাতায়াত যে বেড়েছে ভুটভুটির সংখ্যা বাড়াই প্রমাণ। এখন প্রতি ঘণ্টায় এ পার থেকে ভুটভুটি যায় ও পারে। ও পার থেকে আসে একটা। তাতে ঠাসাঠাসি করা মানুষ। ভুটভুটি থেকে নেমে কাদা মাড়িয়ে পাড়ে উঠে পিয়ালি দাস বললেন, “বাপের বাড়ি এখানে। ও পারে শ্বশুর বাড়ি। এই ঝক্কির জন্যই এখন আসা কমিয়ে দিয়েছি। সেই ছোটবেলা থেকে যেমন দেখেছি, এখনও তাই!” আবার প্রৌঢ়া আশালতাকে জিজ্ঞেস করলে, ঝাঁঝিয়ে ওঠেন। বলেন, “কেন তোমরা কি ঘাটটা বানিয়ে দেবে নাকি! দেশে সরকার বলে কিছু নেই নাকি গো!”
ভুটভুটিদের মাঝিরা বলছেন, কম বেশি গত ত্রিশ বছর ধরে প্রায় এমনই অবস্থা। অথচ জেলা পরিষদ যাত্রী পিছু ৩ টাকা শুল্ক নেয়। রোজ যে সংখ্যায় লোক যাতায়াত করেন, তাতে ওই টাকায় ঘাট হয় না?