পরিবর্তনের লক্ষ্যে ভবানীপুর

এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন প্রায় অন্তিম পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। সপ্তম দফায় কলকাতার চারটি আসনে নির্বাচন হবে তার মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় কেন্দ্র হল ভবানীপুর। রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আসন থেকে জিতেই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। এবার তিনি ভবানীপুর আসন ছেড়ে নন্দীগ্রামে চলে যাওয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস এখানে প্রার্থী করেছে বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় কে। ভারতীয় জনতা পার্টি এখানে প্রার্থী করেছে জনপ্রিয় অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ কে। এছাড়া এখানে দাঁড়িয়েছেন সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত কংগ্রেস পার্টি মোহাম্মদ শাদাব খান।

তবে মূলত এখানে লড়াই ভারতীয় জনতা পার্টি ও তৃণমূল কংগ্রেস এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি কলকাতা দক্ষিণ আসনে পরাজিত হলেও কয়েকটি বিধানসভা এলাকায় ভাল ফল করেছিল। রাসবিহারী এলাকায় তৃণমূলের থেকে এগিয়েও ছিল তারা। ভবানীপুরে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও ব্যবধান কম ছিল। তৃণমূল পায় ৬১,১৩৭ টি ভোট। সেখানে বিজেপি-র ঝুলিতে ছিল ৫৭,৯৬৯ টি ভোট। ব্যবধান ছিল মাত্র ৩১৬৮ টি ভোটের।

নীলবাড়ির লড়াইয়ে ভবানীপুর আসনটিকে সেই কারণেই ‘সুবিধাজনক’ বলে মনে করছে বিজেপি। যদিও লোকসভা নির্বাচন আর বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে যে অনেক ফারাক, সেটাও মাথায় রাখছে গেরুয়া শিবির। তাই মুখ্যমন্ত্রীর প্রাক্তন এই কেন্দ্রে এমন একজনকে তারা প্রার্থী করেছে, যাঁর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির পাশাপাশি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও রয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী যথেষ্ট অভিজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রুদ্রনীল ঘোষ মনে করছেন, আসল পরিবর্তনের লক্ষ্যেই এই কেন্দ্রের মানুষ ভোট দান করবে এবং ভারতীয় জনতা পার্টিকে জয়যুক্ত করবেন।

মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও এই বিধানসভার জনসাধারণ নানারকম অসুবিধার সম্মুখীন হন। অনেকের মতে, এই ভবানীপুর অঞ্চলে তোলাবাজি,কাটমানি চরম আকার ধারণ করেছে। যতটা উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল ততটা হয়নি। পানীয় জলের তীব্র সমস্যা রয়েছে, দিনে মাত্র দুবেলা কয়েক ঘণ্টার জন্য জল আসে, ২৪ ঘন্টা জল পাওয়া যায় না। জল নিকাশি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে যথেষ্ট নজর দেওয়া হয় না বলে স্থানীয় অধিবাসীদের অভিযোগ রয়েছে। তাই এরাজ্যের মানুষের মতোই পরিবর্তনের পরিবর্তন চাইছে ভবানীপুরের মানুষও।

বেকার সমস্যা, দুর্নীতি, স্বজনপোষন থেকে মুক্ত হতে চাইছে ভবানীপুরের মানুষ। মুখ্যমন্ত্রীর আসন হওয়া সত্ত্বেও ভবানীপুরের মানুষদের নানারকম বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে যা এই কেন্দ্রের মানুষদের মত পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গকে সোনার বাংলায় পরিণত করার যে স্লোগান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিয়েছেন তাতে সারা রাজ্যের মতো ভবানীপুরেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তারা উন্নত ভবানীপুর কে দেখতে চাইছে যে স্বপ্ন মোদীজি সমগ্র রাজ্যবাসীকে দেখিয়েছেন।

ভবানীপুরের মানুষদের আরো একটি প্রধান অভিযোগ, তাদের বিধায়ক তথা মুখ্যমন্ত্রীকে তারা সব সময় কাছে পাননি। তাই ভবানীপুরের মানুষ পরিবর্তন চাইছে, এই অসহনীয় জীবন থেকে মুক্তি পেতে চাইছে সুষ্ঠভাবে ভোটদানের মাধ্যমেই।

দেবাদিত্য ভাদুড়ী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.