আমাদের দেশে উৎপাদিত লবণের চার ভাগের তিনভাগ উৎপাদিত হয় গুজরাটে। পৃথিবীতে লবণ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য স্থান রয়েছে ভারতের। কিন্তু সামনের বছর সম্ভবত ভারতের বাজারে লবণের ঘাটতি দেখা যেতে পারে। তার পেছনের অন্যতম কারণ লকডাউন ও অতিবৃষ্টি। এই দুই কারণে লবণ উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
ইন্ডিয়ান সল্ট ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন ২০১৯-১৯ সালে ভারতে উৎপাদিত হয়েছিল ৩০০ লাখ টন লবণ। তার মধ্যে ২৬০ লাখ টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে শুধুমাত্র গুজরাটে। কিন্তু ২০১৯-২০ সালে অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে দেশে। এছাড়া লকডাউনের জন্য মার্চ মাস থেকে কারখানা বন্ধ ছিল। তার জেরে এবছর লবণ উৎপাদন প্রায় ৩৫% ঘাটতি হয়েছে।উৎপাদন কম হওয়া মানে লবণ সংরক্ষণ রকম হয়েছে।
এবছর জুন জুলাই সেপ্টেম্বর মাসে যে লবণ উৎপাদন হবে তা আগামী বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বাজারে আসবে। আর তাতেই দেখা যাবে ঘাটতি। লবণ উৎপাদনে বিশ্বে ভারতের স্থান তৃতীয়। ভারতে মূলত গুজরাট, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশে, লবণ উৎপাদন হয়। তার মধ্যে ৭৬ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয় গুজরাটে। ইন্ডিয়ান সল্ট ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছে ভারতে প্রতিবছর লবণের চাহিদা থাকে ৯০ লাখ টন। এছাড়া প্রতি বছর ৫০ লাখ টন লবণ রপ্তানি করে ভারত। তাছাড়াও বাড়তি চাহিদাতে ৩৪-৪০ লাখ টন লবণ রপ্তানি করা হয়।
গুজরাটের সমুদ্রের ধারে চৌবাচ্চার মত আকৃতিতে এলাকা খনন করে রাখা হয়। সেগুলিতে বর্ষার শেষের দিকে সমুদ্রের জল দিয়ে ভরে থাকে। অক্টোবর মাস থেকে জল ঘনীভূত হওয়া শুরু হয়। কয়েক মাসের মধ্যে জল বাষ্পীভূত হবার পরে লবণ পুরু আস্তরণ পড়ে থাকে। সেগুলি স্তরে স্তরে জমা হয়। সবথেকে উপরের স্তরে যে লবণ থাকে, সেটা সবচেয়ে ভালো মানের লবণ। সেটাই বিক্রি করা হয়। বাকি স্তর গুলিকে রাসায়নিক কারখানায় পাঠানো হয়।
কিন্তু চলতি বছরে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে ভারতে। গুজরাটের উপকূলবর্তী এলাকায় গড় বৃষ্টিপাতের দ্বিগুণ বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও অন্য বছর লবন তৈরীর জন্য হাতে সময় থাকে ৯ মাস। কিন্তু এ বছর ৪ মাস সময় পাওয়া গেছে মাত্র। আর এরই ফলে আগামী বছর লবণের ঘাটতি দেখা দেবে। গত এক দশকে এই ধরনের অবস্থা হয়নি। বৃষ্টি ও লকডাউনের কারণে তিন মাস দেরিতে উৎপাদন শুরু হয়েছে। লবণ উৎপাদনের সর্বোচ্চ সময় উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। ফলে লবণ কারখানার মালিকরাও বড় লোকসানের মুখে পড়েছে।