সঞ্চয় দেয় বাঁচার রসদ। সঞ্চয় গড়ে ভবিষ্যতের সাফল্য। ছোটো থেকেই আমাদের মা, বাবা আমাদের শিখিয়ে দেন এক পয়সা সংরক্ষণ মানে এক পয়সা রোজগার। এর গুরুত্ব কিন্তু সত্যিই অপরিসীম। তাই, এর গুরুত্বকে তুলে ধরতে আজ বিশ্ব জুড়ে সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে ওয়াল্ড সেভিংস ডে, অর্থাৎ বিশ্ব সঞ্চয় দিবস।
প্রতিবছর, ৩০ অক্টোবরে পালিত হয় ওয়াল্ড সেভিংস ডে, যা আগে ওয়ার্ল্ড থ্রিফট দিবস নামে পরিচিত। আজকের এই দিনটিতে একটি প্রচারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির জন্য এবং ব্যক্তিগণের জন্য সঞ্চয়ের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। সঞ্চয় কিন্তু বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির জন্য খুবই প্রয়োজন এবং আমানতকারীরা এই সঞ্চয় বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান বহন করেন। এই কারণেই হয়ত বলা হয় একটি পয়সা সংরক্ষিত মানে একটি পয়সা উপার্জিত। কারণ আপনি আপনার সঞ্চয় দিয়ে আরও বেশি উপার্জন শুরু করতে পারেন।
দিনটি কেন পালিত হয়?
একটি প্রবাদ বাক্যে বলা আছে, অর্থ আয় করা কঠিন কিন্তু ব্যয় করা সহজ। মানুষ তার আয়েশি জীবন যাপন পালনের জন্য কিছু অপ্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করে, যা ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলকর নয়। দেখা যায়, কেউ জীবন দিয়ে পরিশ্রম করেও দুবেলা দুমুঠো ভাত খেতে পাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এই সকল মানুষেরা। তাই, আধুনিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে এবং বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিদের জন্য সঞ্চয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে বিশ্ব সঞ্চয় দিবস পালিত হয়। বিশ্বের অনেক দেশে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের হার বেশি হওয়ায় অতি সাধারণ ও দরিদ্র মানুষের সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে অনেক বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফলে তাদের বেকারত্ব, অসুস্থতা, প্রতিবন্ধকতা বা বার্ধক্যের সময় প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব থেকে যাচ্ছে। এই সময়ের কথা মাথায় রেখে অর্থ সাশ্রয়ের জন্য লোককে শিক্ষিত ও সচেতন করা প্রয়োজন।
ইতিহাস
বিশ্ব সঞ্চয় দিবস সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থায় সঞ্চয় এবং খুচরা ব্যাংকিং – এর ভূমিকার উপর আলোকপাত করে। সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাংক সঞ্চয়ের গুরুত্ব উৎসাহিত করতে এবং ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য ১৯২৪ সালের ৩০ অক্টোবর চালু করা হয়েছিল বিশ্ব সঞ্চয় দিবস। এটি ইতালির মিলানে প্রথম আন্তর্জাতিক সঞ্চয় ব্যাংক কংগ্রেস (ওয়ার্ল্ড সোসাইটি অফ সেভিংস ব্যাংকস) এর সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে এই দিবসটি বিশ্বের ৮০-টিরও বেশি দেশে পালন করা হয়। কংগ্রেসের শেষদিনে ইতালির অধ্যাপক ফিলিপ্পো রাভিজা এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক সঞ্চয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, জনগণকে অর্থ সাশ্রয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা। সমৃদ্ধি ও সম্পদের জন্য সঞ্চয়ের মনোভাব মানব জীবনে একটি অপরিহার্য বিশিষ্ট গুণ। মধ্যবিত্ত ও সাধারণ ব্যক্তিদের যত বেশি সঞ্চয় হবে ততই বাড়বে পারিবারিক , সামাজিক ও ব্যক্তি নিরাপত্তা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মানুষ সঞ্চয় করার বিষয়ে আর আত্মবিশ্বাসী ছিলনা। তখন সেভিংস ব্যাংকগুলি স্কুল – কলেজ, অফিস, খেলাধুলা এবং মহিলা সমিতির সহায়তার জন্য সঞ্চয় প্রচারের কাজ করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই বিশ্ব সঞ্চয় দিবস জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এবং তারপর থেকে বেলজিয়াম,অস্ট্রিয়া, ইতালি, কিউবা, কলম্বিয়া, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি প্রজাতন্ত্র দেশে বিশ্ব সঞ্চয় দিবস উদযাপিত হয়।