সদ্য একুশে পা দেওয়া মেয়েটি যে জঙ্গি হতে পারে তা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি বাদুড়িয়ার (Baduria) মালায়াপুর (Malayapur) গ্রামের বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৫০৷ সবে মাত্র ঘুম ভেঙেছে মালায়াপুর গ্রামের বাসিন্দাদের৷ তাঁরা দেখলেন গ্রামের পথে বিশাল পুলিশবাহিনী, একটি বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। প্রতিবেশী কয়েকজনের কাছ থেকে কথা বলে পুলিশ নিশ্চিত হল এটি তানিয়াদের বাড়ি। এরপর ঘরে ঢুকে তানিয়া পারভিন নামে ওই যুবতীকে গ্রেপ্তার করল এসটিএফ এবং বাদুড়িয়া থানার পুলিশ। এসটিএফের ইন্সপেক্টর শঙ্কর চৌধুরির (Shankar Chowdhury) নেতৃত্বে এই অভিযান চলে৷ ধৃত যুবতী নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবা(Lashkar-e-Taiba)-র সক্রিয় সদস্য বলে অভিযোগ।দিন কয়েক আগে গোপনসূত্রে এসটিএফের কাছে তানিয়ার জঙ্গি কার্যকলাপের খবর আসে। এরপরই তদন্তে নামে তারা। বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকালেই অভিযান চালায়। ধৃত তানিয়াকে এদিন বসিরহাট এসিজেএম আদালতে তোলা হয়েছিল। বিচারক তাকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, তানিয়ার (Tania) কাছ থেকে দুটি মোবাইল ও একটি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তে নেমে এসটিএফ (STF) আরও জানতে পেরেছে যে পাকিস্তানের (Pakistan) লস্কর-ই-তইবা জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আর তার ফোনের কল রেকর্ড ঘেঁটে দেখা গিয়েছে সে প্রায়ই পাকিস্তানে (Pakistan) ফোন করত।
কিন্তু, কীভাবে সে জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখত? তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জঙ্গিদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেই গ্রুপের মাধ্যমেই তাদের তথ্য আদানপ্রদান হত। তানিয়া ওই গ্রুপের সদস্য ছিল। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, তানিয়ার বাবা আলামিন মণ্ডলের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। কিন্তু, মোবাইলের কল রেকর্ড ঘেঁটে পুলিশ জানতে পেরেছে প্রতিমাসে তানিয়া যে পরিমাণ ইন্টারন্যাশনাল কল করত তার খরচ হাজার হাজার টাকা। স্বাভাবিকভাবে তা তানিয়া বা তার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তাই তদন্তকারীরা মনে করছেন জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যরা তানিয়াকে নিয়মিত টাকা পাঠাত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তানিয়া ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য হয়ে উঠেছিল। এবং তাকে ভারত-বিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক কাজে লিপ্ত করা হয়েছিল। তবে ঠিক কোন ঘটনায় তানিয়াকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা তা ধৃতকে জেরা করে জানার চেষ্টা করছে এসটিএফ।
এসটিএফ (STF) সূত্রে জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের ওই জঙ্গি সংগঠনটি এদেশের মুসলিম যুবক-যুবতীদের টার্গেট করে৷ তারপর তাদের মোটা টাকার প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের সংগঠনে যুক্ত করেন৷ তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ভারত বিরোধী মনোভাব তৈরি করা হয়৷ এদেশের ষড়যন্ত্রমূলক কাজে তাদের যুক্ত করা হয়৷ তানিয়ার কাছ থেকে পাওয়া ডায়রিতে জঙ্গি সংগঠনের অনেক সদস্যের ছবি রয়েছে এবং কার্যকলাপের নানা বিবরণ লিপিবদ্ধ করা রয়েছে। এসটিএফ (STF) কর্তারা তা খতিয়ে দেখছেন৷ এর পাশাপাশি জঙ্গিদের সাহায্য করার জন্য ওই যুবতী জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir) গিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
এদিকে গ্রামের মেয়ে জঙ্গি অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় বিস্মিত মালায়াপুর গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের কথায়, ওইটুকু মেয়ে যে জঙ্গি হতে পারে তা তাঁরা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি। মিষ্টিভাষী ও ভাল ব্যবহারের জন্য মেয়েটি সকলের কাছে প্রিয় ছিল।
বসিরহাট (Basirhat) মহকুমার আদালতের সরকারি আইনজীবী অরুণ কুমার পাল (Arun Kumar Pal) বলেন, ‘এ ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিল। ধৃতের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে জানা গিয়েছে, পাকিস্তান-সহ বেশকিছু দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এই যুবতীর। ইতিমধ্যে একটি ডায়েরি, দুটি মোবাইল ফোন, দুটি সিম কার্ড, ছবি এবং মোবাইল নম্বর-সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিনিস পাওয়া গিয়েছে।’