তৃতীয়বারের শি জিংপিং কি ভবিষ্যতের স্বৈরাচারী মাও!

রবিবার তৃতীবারের জন্য ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন চিনের প্রেসিডেন্ট জিংপিং৷ আরও পাঁচবছর চিনের মসনদে থাকবেন তিনি ৷ এর আগে এই সৌভাগ্য হয়েছিল একমাত্র দলের প্রতিষ্ঠা মাও জেদং (Mao Zedong) ৷ চিনের শীর্ষ পদে বসার বয়সের নির্ধারিত সীমা 68 ৷ তাও 69 বছর বয়সে পদে আবারও জিংপিং শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচিত হয়েছেন ৷ পাঁচবছরে একবার এই কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় (Xi Jinping re elected as General Secretary of ruling Communist Party of China) ৷

গত ২৫ বছরে এই প্রথমবার কোনও মহিলা পলিটব্যুরোতে জায়গা পেলেন না। এর আগে পলিটব্যুরোর একমাত্র মহিলা সদস্য ছিলেন সুন চুনলাং। কিন্তু কিছুদিন আগেই অবসর গ্রহণ করেন তিনি। সুন চুনলাঙের পর আর কোনও মহিলা নেত্রীকে পলিটব্যুরোয় জায়গা দেওয়া হল না। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বলেই দাবি করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। প্রসঙ্গত, রবিবার তৃতীয়বারের জন্য সিপিসি-র জেনারেল সেক্রেটারি বা সাধারণ সম্পাদক হন শি জিনপিং। এর পাশাপাশি, পলিটব্যুরোর সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। সিপিসি-র পলিটব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন সাত জন। এই সাতজনের মধ্যে চারজনই জিনপিং ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। চিনা প্রেসিডেন্টের প্রাক্তন দুই সচিবকেও রাখা হয়েছে পলিটব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটিতে।

রবিবার তৃতীয়বারের জন্য পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি হওয়ার পর একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছেন শি জিনপিং। পার্টির পলিটব্যুরোর মহিলাদের জায়গা না দেওয়াটা তার মধ্যে অন্যতম। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, বর্তমানে চিনের সমস্ত পদে শুধু মাত্র জিনপিং অনুগামীরাই রয়েছেন। কিন্তু তাতেও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না তিনি। সেই কারণেই পার্টি ও গোটা দেশের সর্বত্র প্রবলভাবে নজরদারি চালানোর চেষ্টা করছেন জিনপিং।

সিপিসি-র শীর্ষ সংগঠনে কেন মহিলাদের রাখা হল না, তা নিয়ে অবশ্য চিনের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞদের দাবি, অত্যন্ত সচেতনভাবেই এই পদক্ষেপ করেছেন শি জিনপিং। প্রসঙ্গত, তৃতীয়বারের জন্য পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েই প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি। লি কেকিয়াং ছাড়াও পদ হারিয়েছেন উপ প্রধানমন্ত্রী উপ প্রধানমন্ত্রী হান জেং এবং সিপিসি-র স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য লি ঝানশু ও ওয়াং ইয়াং। এছাড়াও ছেঁটে ফেলা হয়েছে তিব্বত ও শিননজিয়ান প্রদেশের প্রাক্তন শাসক ছেন কোয়াংগুয়োকেও। একসময় জিনপিংয়ের ছায়াসঙ্গী ছিলেন তিনি। জিনপিংয়ের নির্দেশেই শিনজিয়ানে ‘উইঘুর’ মুসলিমদের নির্বিচারে ছেন কোয়াংগুয়োই হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ।

গত এক সপ্তাহ ধরে চলা বেজিংয়ের পার্টি কংগ্রেসের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে। সেখানে মঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় চিনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওকে। ওই সময় পাশেই কার্যত ভাবলেশহীনভাবে বসে ছিলেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

চিনের কমিউনিস্ট পার্টি বলতেই আগে সকলের মাথায় আসত মাও জে দংয়ের নাম। কিন্তু সেই চিন্তাধারাতেই এবার পরিবর্তন হতে চলেছে, কারণ মাও-র সম ক্ষমতা সম্পন্ন হতে চলেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চিনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০ তম কংগ্রেস অধিবেশনে এমনটাই ঘোষণা করা হয়েছে। এই সম্মেলনেই বহু গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ক্ষমতা। এর জন্য চিনের সংবিধানে আনা হয়েছে একাধিক পরিবর্তন। জিনপিংকেই কমিউনিস্ট পার্টির ‘কোর’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বের সবথেকে জনবহুল ও অন্যতম বড় সাধারণতন্ত্রের।

চিনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০ তম কংগ্রেস অধিবেশনের শেষ দিনেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। গত সপ্তাহেই শুরু হয়েছিল চিনের শাসক দলের বার্ষিক অধিবেশন। সেই অধিবেশনেই চিনের সংবিধানে একাধিক পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। একদিকে যেমন শি জিনপিংয়ের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। তেমনই তাইওয়ানের স্বাধীনতাকেও অস্বীকার করা হয়েছে। চিনের সমাজব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক হিসাবেও কমিউনিস্ট পার্টির কথাই বলা হয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টির সমাজ ও রাজনীতির উর্ধ্বে বলেই ঘোষণা করা হয়েছে।

কমিউনিস্ট পার্টির ২০ তম কংগ্রেস অধিবেশনেই তৃতীয়বারের জন্য দেশের প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে শি জিনপিংকে। একইসঙ্গে বাড়ানো হয়েছে তাঁর ক্ষমতাও। মাও জে দং-র সমতুল্য ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসাবেই জিনপিংয়ের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।
চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করতে চিনের সংবিধানের বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন সংবিধানে দুই প্রতিষ্ঠান ও দুই সুরক্ষাব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। শি জিনপিংয়ের পদকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি দলের নীতির মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারা মিলিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সমাজতন্ত্রকে সময়োপযোগী করা এবং চিনের সংস্কৃতিকে আরও উচ্চ স্থানে প্রতিষ্ঠিত করার কথা বলা হয়েছে কমিউনিস্ট পার্টির অধিবেশনে।
কমিউনিস্ট পার্টি কংগ্রেস অধিবেশনে ২০৫ জন সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন সেকেন্ড ইন কমান্ড লি কেকিয়াং। প্রভাবশালী নেতা ওয়াং ইয়াংকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে সূত্রের খবর। কমিউনিস্ট পার্টির এই নেতাদের সঙ্গে শি জিনপিংয়ের বিশেষ ভাব ছিল না বলেই জানা যায়। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে ২৫ সদস্যের পলিটব্য়ুরো নির্বাচিত করা হবে। এরমধ্যে ৭ সদস্যের পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করা হবে।

অন্যদিকে, অধিবেশন শেষের অনুষ্ঠানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি চিনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও-কে। এ নিয়েও শুরু হয়েছে গুঞ্জন। কলকাঠি নেড়েই শি জিনপিং তাঁকে সরিয়ে দেন বলে সূত্রের খবর। তবে চিনা সংবাদ সংস্থার দাবি, অধিবেশনের শেষ লগ্নে অসুস্থ বোধ করেন হু জিনতাও। সেই কারণেই তাঁকে অধিবেশনের শেষ লগ্নে দেখা যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.