সারা বিশ্ব লড়ছে করোনা ভাইরাস নামক মহামারীর বিরুদ্ধে। এই অবস্থায় কোটি কোটি টাকা অনুদান দিয়ে করোনা যুদ্ধে সাহায্যে হাতে বাড়িয়ে মানুষে পাশে দাঁড়াল হিন্দু মন্দিরগুলি। জাতীয় এই সংকটের মুহূর্তে কিছু মানুষ প্রচার করে বেড়াচ্ছেন, মন্দিরগুলি এই সময়ে হাত গুটিয়ে বসে আছে। বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছে, তখন মন্দিরগুলি থেকে কোনও অনুদান আসছে না। এমনকী এই সমস্ত দাবিকে সামনের রেখে একাংশ দলের দাবি, মন্দির বানানো বন্ধ করে সেখানে প্রতিষ্ঠা হোক হাসপাতাল। কিন্তু এই অভিযোগ নসাৎ করে দিতে পারে দেশে এখনও পর্যন্ত দেশের মঠ-মন্দিরগুলির অনুদানের হিসাব।
কাঞ্চি মঠ-এর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল ও তামিলনাড়ু মুখ্যমন্ত্রী ১০ লক্ষ টাকা করে দুটি তহবিলে দান করা হয়েছে। পাটনার মহাবীর মন্দির ট্রাস্ট-এর পক্ষ থেকে করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে জমা দেওয়া হয়েছে ১ কোটি টাকা। জম্মু-কাশ্মীরের বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের নন-গেজেটেড কর্মচারীরা তাঁদের বেতনের এক দিনের মূল্য দান করেছেন রাজ্যের ত্রাণ তহবিলে। পাশাপাশি বেতনের দু ‘ দিনের মূল্য দান করছেন গেজেটেড কর্মীরাও। মন্দিরের পক্ষ থেকে ভাইস চেয়ারম্যান গিরীশ চন্দ্র মূর্মূ (Chandra Murmu) জানিয়েছেন, কাটরা বস্তি এলাকার দুঃস্থ মানুষের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। জেলার উদ্যোগে আশীর্বাদ কমপ্লেক্সে ৬০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি আবাসন রোগিদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ছত্তিশগঢ়ের মহামায়া মন্দির ট্রাস্ট-এর পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে ৫ লক্ষ ১১ হাজার টাকা দান করা হয়েছে। পাশাপাশি করোনা মোকাবিলায় রেড ক্রশকে ১ লক্ষ ১১ হাজার টাকার মন্দির ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। গুজরাটের সোমনাথ মন্দির মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে ১ কোটি টাকা দান করেছে। এই মন্দিরের বর্তমান চেয়ারম্যান গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেশুভাই প্যাটেল।পাশাপাশি এই মন্দিরের অন্যতম ট্রাস্টি হিসেবে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপির (BJP) বর্ষীয়ান নেতা লাল কৃষ্ণ আদবাণী। অম্বাজি মন্দিরের পক্ষ থেকে গুজরাটের (Gujarat) মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১ কোটি টাকা দান করা হয়েছে। পাশাপাশি মন্দিরের পক্ষ থেকে দুঃস্থদের সাহায্যে খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা কাজ চলছে।
মহারাষ্ট্র (Maharashtra) মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে শ্রী স্বয়ম্ভু সংস্থান ট্রাস্ট-এর পক্ক থেকে ৫১ কোটি জমা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শ্রী সাঁইনাথ হাসপাতালে যারা ভর্তি আছেন, তাদের সঙ্গে রোগির আত্মীয়দের মধ্যে জন্য বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে সিরদি অনাথ আশ্রম, বৃদ্ধাশ্রম ও মূক-বধির বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মধ্যে বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার পাশাপাশি দুঃস্থ মানুষের মধ্যে খাদ্যদ্রব্য বন্টনে কাজ চলছে।মহারাষ্ট্রের কোলহাপুরের দেবস্থান ম্যানেজমেন্ট কমিটি মহালক্ষ্মী মন্দিরের মাধ্যমে ২ কোটি টাকা দান করেছে। এদের মধ্যে দেড় কোটি মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে ও বাকি ৫০ লাখ করোনা ভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে জেলায় স্বাস্থ্যবিভাগে দান করা হয়েছে। মন্দিরের পক্ষ থেকে সহকারি সচিব শিবাজী সালভি এই সমস্ত তথ্য জানিয়েছেন।
যোগ-গুরু রামদেব পিএম কেয়ার ফান্ডে প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সহায়তা ও ত্রাণের জন্য ২৫ কোটি টাকা দান করেছেন। পাশাপাশি পতঞ্জলির ও রুচি সোয়ার সমস্ত কর্মীরা তাদের একদিনের বেতন যা সমগ্র হিসেবে দেড় লক্ষ টাকা দান করবে। হরিদ্বার, কলকাতা, উত্তরপ্রদেশে মোদিনগর, হিমাচল প্রদেশের সোলানের আশ্রম করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসার কারণে দিতে চান রামদেব। সেখানে প্রায় ১৫০০ রোগিকে রাখায় ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের খাবার পতঞ্জলীর পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। গুজরাটের স্বামীনারায়ণন মন্দির-এর পক্ষ থেকে ১ কোটি ৮৮ লক্ষ অনুদান দেওয়া হয়েছে। ভদতল স্বামীনারায়ণন মন্দির-এর ৫০০টি কক্ষকে আইসোলেশনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
শ্রীরঙ্গমের মান্নারগুড়ি জিয়ার স্বামী মন্দিরের মাত্র দুজন কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ২০০ জন দুঃস্থ মানুষের রান্নার কাজ চলেছে। এরপর নিজস্ব গাড়ি করে সেই খাবার মানুষের মধ্যে বিতরণে কাজ চলছে। দেড় লক্ষ টাকা অনুদানে পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্য সেবা করাই মূল লক্ষ্য বলে মনে করে মন্দির কমিটি। দিনে দুবেলা ২০০ মানুষের জন্য সাদা ভাত, সম্বর বা দই ভাত খাওয়ানো হচ্ছে। রাজস্থানের রাণি সতী মন্দিরের ২০০টি কক্ষকে আইসোলেশন রুম বানানো হয়েছে।
এর পাশাপাশি ঠাকুর অনুকুল চন্দ্রের দেওঘরের সৎসঙ্ঘ আশ্রম থেকে ১০ কোটি টাকা পিএম কেয়ার ফান্ডে দান করার কথা জানানো হয়েছে। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর তাঁর সাংসদ কোটা থেকে ১ কোটি টাকা পিএম কেয়ার ফান্ডে দান করেছেন। এছাড়াও রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ সহ একাধিক হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্টান প্রতিদিন দেশের অগনিত মানুষকে রান্না করা খাবার ও রেশন তুলে দিচ্ছেন।