আমেরিকায় বসবাসকারী আত্মানুসন্ধানে ব্রতী তরুণ প্রজন্মের মনের কথা

হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন তাদের বার্ষিক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় স্বামী বিবেকানন্দের একটি বাণী উদ্ধৃত করে।তরুণ প্রজন্মের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে কীভাবে এই বাণী তাদের হিন্দু আমেরিকান হতে অনুপ্রাণিত করেছে। উদ্ধৃতিটি হলো :
“The intemest love that humanity has ever known has come from religioun, and the most diabolical hatred that humanity has known has also come from religion. Nothing makes us so cruel as religion, and nothing makes us so tender as religion.”
তরুণ প্রজন্মের কাছ থেকে অভাবনীয় সাড়া পাওয়া যায়। তারা তাদের মনের কথা অকপটে ব্যক্ত করেছে তাদের রচনায়।
উদাহরণ স্বরূপ, টেক্সাসের কলেজ স্টেশনের হাই স্কুল ছাত্রী অন্তরা দত্তগুপ্তের কথা এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনের একনিষ্ঠ সমর্থক অন্তরা তার গুরুজী অনু সমুগমের কাছ থেকেই আধ্যাত্মিক শিক্ষালাভ করেছে। তার বয়স মাত্র সতেরো।
অন্তরা জানিয়েছে যে মাতা, পিতা, গুরুজী এবং দেবতা, এই বিষয়েই তার গুরুজী তাকে অবহিত করেছেন। বাল্যকাল থেকেই এঁদের শ্রদ্ধা করতে সে শিখেছে। প্রতি রবিবার ‘বালবিহার’ ক্লাসে এবং প্রতি বুধবার ‘শ্লোক ক্লাসে যাওয়ার ফলে হিন্দুত্ব ওর মজ্জায় মজ্জায় মিশে গেছে। অন্তরার গুরুজী ওকে সর্বদাই বলেন, “তুমি যা, তার জন্যই গর্ব অনুভব করবে, তুমি একজন হিন্দু হিসেবে গর্বিত থাকবে।”
অন্তরা একটি গোঁড়া খ্রিস্টান শহরে বড়ো হয়েছে, যেখানে প্রতি আধ মাইল অন্তর একটি করে গির্জা রয়েছে। অনেক সময়েই তাকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। কিন্তু তার ধর্ম বিশ্বাস তাকে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছে। স্কুলের ট্যালেন্ট শোয়ে সে যখন কথক নৃত্য পরিবেশন করেছে, তার সহপাঠীদের ভালো লাগেনি, যখন সে তার সহপাঠীদের জানিয়েছে যে সে গোমাংস ভক্ষণ করে না, তখন সহপাঠীরা বিরক্তি প্রকাশ করেছে, কারণ টেক্সাসের লোকজনদের কাছে গোমাংস একটি অন্যতম প্রধান খাদ্য। অন্তরা জানিয়েছে যে প্রত্যেকটা বাধার সম্মুখীন হওয়ার পর সে। আরও একাত্ম হয়েছে হিন্দুত্বের সঙ্গে।
অন্তরা দেখেছে কীভাবে ধর্মবিশ্বাস মানুষের পরিবর্তন ঘটায়। তার বাল্যবন্ধুরা, যারা ওর সঙ্গে শ্লোকের ক্লাসে উপস্থিত থাকত, সেখানে যাদের সঙ্গে দেখা হতো, তারা হাইস্কুলের অন্যান্যদের থেকে আলাদা হতে চায় না। তাই তারা এখন নিজেদের নাস্তিক বলে। যখন অন্তরা তাদের এই পরিবর্তনের কারণ জানতে চেয়েছে, তারা বলেছে যে তারা অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র হয়ে থাকতে চায় না। তখন ওর মনে হয়েছে যে ও সত্যিই ধন্য। কারণ ও অনেক সমমনোভাবাপন্ন বন্ধু পেয়েছে যারা ওর সঙ্গে মন্দিরে যায় হোলি ও দীপাবলী উৎসব পালন করার জন্য। শুধু কি তাই? ওর বাড়িতে দেবী সরস্বতী। ভগবান। গণেশ এবং আর অনেক দেব-দেবীর মূর্তি বা ছবি দেখে তারা এই দেবী-দেবতাদের সম্বন্ধে জানতে চায়, আগ্রহ প্রকাশ করে। তার এই বন্ধুদের জন্যই সে অন্যধর্মের অসহিষ্ণুদের কথা ভুলে গেছে।
অন্তরার কথায় ধর্ম যেন মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি না করে, অন্যদের যেন অনুপ্রাণিত করে, একে অপরের থেকে অন্য ধর্মের বিষয়ে জানতে পারে।
অন্তরাদের স্কুলে বিশ্ব ধর্মগুলির উপরে ক্লাস হয়, যার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্মবিশ্বাস সম্বন্ধে জানতে পারে। সে লক্ষ্য করেছে যে, এক সপ্তাহ খ্রিস্টধর্মের উপর ধার্য, চারদিন ইসলামের উপর, তিনদিন জুডাইস-এর এবং বৌদ্ধধর্মের উপর, আর মাত্র একটি দিন হিন্দু ধর্মের জন্য বরাদ্দ। ওই একটি মাত্র দিনটিতেও অন্তরা লক্ষ্য করল যে ৫০ মিনিটের একটি ভিডিও দেখানো হলো যেখানে শুধুই ভারতের কাস্ট সিস্টেমের কথা বলা হলো। এটা দেখে অন্য ধর্মের লোকজন হিন্দু ধর্ম সম্বন্ধে কী জানতে পারবে? সমগ্র বিশ্বে অসংখ্য হিন্দু আছেন যারা জাতপাত মানেন না। এই ভিডিওটি দেখে যদি কেউ হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে ভুল ধারণা প্রাপ্ত হয় তাহলে তাদের দোষ দেওয়া যায় কি?
এরপর অন্তরা তার শিক্ষিকাকে অনুরোধ জানায় যেন হিন্দু ধর্মের জন্য আরেকটি দিন বরাদ্দ করা হয়। হিন্দু ধর্ম সম্বন্ধে প্রকৃত তথ্য মানুষের কাছে তুলে ধরা দরকার। অন্তরাকে অবাক করে তিনি পরদিনই ছাত্র-ছাত্রীদের একটি প্রজেক্ট করতে দিলেন যেখানে প্রাচীন ভারতের আবিষ্কারগুলির উপর আলোকপাত করতে হবে। অন্তরা তখন হিন্দুদের আবিষ্কারগুলি অন্তরের ও বাহিরের, উপস্থাপিত করল নিজের সাধ্য অনুযায়ী, ওই প্রজেক্টের মাধ্যমে। সে তার ক্লাসের বন্ধুদের হিন্দু ধর্মের কর্ম, ধর্ম, পুনর্জন্ম ও মোক্ষ সম্পর্কিত বিষয়গুলি সম্বন্ধে অবহিত করাতে পারল।
অন্তরা জানিয়েছে যে স্বামী বিবেকানন্দের উদ্ধৃতিটি তাকে অনুপ্রাণিত করেছে, প্রকৃত হিন্দুত্ব সম্বন্ধে চর্চা করে মানুষকে জানানো, হিন্দুত্ব সম্বন্ধে ভুল ধারণাগুলি দূর করা সে তার কর্তব্য বলে মনে করে। কয়েক বছর যাবৎ বিভিন্ন সংগঠনের Gala Brazos Vally World Fest CRY India (Child Right and You) ইত্যাদি অনুষ্ঠানে নৃত্যপ্রদর্শনের মাধ্যমে অন্তরা নিজের ধর্ম ও সংস্কৃতি বহু মানুষের সামনে তুলে ধরেছে।
ড. রমা বন্দ্যোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.