দক্ষিণ আমেরিকার (South American) আমাজন (Amazon) উপকূলের বনবিভাগের বাংলোয় সস্ত্রীক উঠেছেন সেদেশের বিখ্যাত হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক ডাক্তার হেরিং (Herring)। ইচ্ছে আছে, সুরুকুকু সাপ (Surukuku snake) ধরে তা থেকে তৈরি করবেন জীবনদায়ী ওষুধ।
দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন উপকূলের জঙ্গলেই দেখা যায় তীব্র বিষধর এই সুরুকুকু সাপ। প্রায় সাত ফুট লম্বা লালচে বাদামি রঙের এই সাপ যে রাস্তা ধরে যায়, সেই রাস্তার ঘাস শুকিয়ে যায় তার বিষে। আর এই সাপের সামনে কোনো জীবজন্তু এলেই মারা যায়।
এই তীব্র বিষধর সাপ ধরতেই এসেছেন ডাক্তার হেরিং (Herring)।
নাবিকদের এই সাপ ধরে আনতে বলতেই তারা ভয়ে পিছিয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য অর্থের লোভে তারা রাজি হলো তারা।
ডাক্তার হেরিং (Herring) তাদের হাতে দিলেন একটি সাপ ধরার খাঁচা। ঝাঁপির মতো খাঁচার সঙ্গে লাগানো ছিল একটি দড়ি। ঝাঁপির ভেতরে সাপ সহজেই ঢুকতে পারে এবং তারপর দূর থেকে দড়িটা টেনে দিলেই বন্ধ হয়ে যাবে খাঁচার মুখ, এমনই ছিল কৌশল।
কিছুদিন পর নাবিকরা এই খাঁচা দিয়ে একটি জ্যান্ত সুরুকুকু সাপ ধরে এনে হাজির করে ডাক্তার হেরিংয়ের (Herring) কাছে।
ভীষণ খুশি হয়ে ডাক্তার হেরিং (Herring) লেগে গেলেন পরীক্ষার কাজে। সাপের বিষ সংগ্রহের জন্য তিনি একটি লম্বা লাঠির ডগায় বাটি বাঁধলেন। বাটিতে রাখলেন সুগার অফ্ মিল্ক। তারপর খাঁচার ফাঁক দিয়ে বাটিটা ঢুকিয়ে দিলেন সাপটার কাছে।
বিষধর সাপটি ছোবল মেরে বিষ ঢেলে দিলে বাটিতে রাখা সুগার অফ্ মিল্কের ওপর।
এবার পরীক্ষার পালা। ডাক্তার হেরিং ভাবলেন, এই বিষ ল্যাবরেটরিতে পাঠালে রাস্তায় কিছুটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া, এই বিষ সরাসরি কোনো মানুষের ওপর প্রয়োগ করা যাবে না। বিপদের ঝুঁকি আছে।
তাই তিনি এই বিষ দিয়ে ট্রাইটুরেশন করে ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।
স্ত্রীকে বললেন, ট্রাইটুরেশন করতে করতে যে সমস্ত ঘটনা ঘটবে, সেগুলো সব লিখে রাখবে। এমনকি, আমার মৃত্যু ঘটলেও ক্ষতি নেই।
ট্রাইটুরেশন তৈরি করতে করতে ডাক্তার হেরিংয়ের (Herring) প্রথমে বেশ ঝিমুনি দেখা দিলে। তারপর ধীরে ধীরে ঘামতে ঘামতে এক সময় অজ্ঞান হয়ে গেলেন তিনি। তাঁর পালস্ পাওয়া যাচ্ছিল না।
তাঁর স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে ডাক্তার হেরিংয়ের (Herring) এইসব লক্ষণ লিখে রাখলেন।
পরের দিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে ফের গরম হতে শুরু করলো ডাক্তার হেরিংয়ের (Herring) শরীর। এক সময় তাঁর পালস্ এলো।
পুনরায় ডাক্তার হেরিং পূর্ব অবস্থায় ফিরে এলেন। আবিষ্কারের আনন্দে আত্মহারা ডাক্তার হেরিং সবকিছু শুনলেন তাঁর স্ত্রীর কাছে।
এরপর থেকে ডাক্তার হেরিং গলায় টাই বাঁধতে পারতেন না। ঢিলেঢালা পোশাক পরতেন।
শেষ পর্যন্ত অল্প দিনের মধ্যেই মারা গেলেন।
কিন্তু তাঁর আবিষ্কার “ল্যাকেসিস” (Lactosis) মানব জাতির চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে জীবনদায়ী ওষুধ হিসেবে চির স্মরণীয় হয়ে আছে আজও ।