আগুন রুখতে দমকলবাহিনীর কথা জানা ছিল সকলেরই। কিন্তু ছাগলবাহিনীও যে আগুন রোখার কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে, তা কি জানতেন আপনি? হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন, ছাগলবাহিনী। বছরবছর দাবানলের আক্রমণে হার মেনে, শেষমেশ ছাগলের দলবলকে সামনে রেখেই প্রকৃতির এই তাণ্ডবের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছে পর্তুগাল।
দাবানল সে দেশের চিরশত্রু। প্রতি বছরই নিয়ম করে আগুনের গ্রাসে ধ্বংস হয়ে যায় সে দেশের বিস্তীর্ণ বনভূমি৷ মারা যায় অসংখ্য বন্য পশু ও পাখি৷ পুড়ে ছারখার হয়ে যায় অসংখ্য খামার বাড়ি ও শস্য মজুত করার ছোট ছোট গুদাম৷ গ্রীষ্মের এক একটা দাবানলে ঝলসে যায় পর্তুগালের একটা বড় অংশ।
তবে এ বার গ্রীষ্মকাল আসার অনেক আগেই সতর্কতা অবলম্বন করেছে পর্তুগাল প্রশাসন৷ না, কোনও বিশেষ দমকল বাহিনী নিয়োগ করে বন, জঙ্গলে জল ছেটানোর ব্যবস্থা করেনি সরকার৷ করেনি গাছ কাটারও ব্যবস্থা৷ এমনকী, কোনও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যেও দাবানল নেভানোর ব্যবস্থাও করা হয়নি৷ কারণ এর সব ক’টাই এত বছর ধরে করে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। বরং গত বছর থেকে দাবানলের তাণ্ডব খানিক রুখতে পেরেছে এই ছাগলবাহিনীই।
তাই এ বারও ছাগলদের একটা বড় ব্রিগেডকে দাবানল প্রতিরোধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে পর্তুগাল সরকার৷
কী রকম?
শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি৷ প্রায় শ’পাঁচেক ছাগ সেনার একটি ব্রিগেডকে দাবানল রোখার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পর্তুগালের পার্বত্য অঞ্চলের কোলে বেড়ে ওঠা জঙ্গল ও বনভূমিগুলিতে৷ জানা গিয়েছে, দেশের প্রায় একশো জন পশুপালকের কাছ থেকে এই ছাগলগুলিকে ভাড়া করেছে প্রশাসন৷ দেশের বিভিন্ন পার্বত্য অঞ্চলের বনভূমিতে এদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এখন থেকে৷
দেখুন ভিডিও।
ছাগলের দল মনের সুখে বনের ঘাস-পাতা খেয়ে সাফ করে দিচ্ছে জঙ্গল৷ বড় গাছ না খেতে পারলেও, চারাগাছ থেকে শুরু করে লতাপাতা সবই চলে যাচ্ছে এই ছাগ সেনার পেটে৷ ফলে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে বনভূমি। প্রশাসনের দাবি, দাবানলের ক্ষেত্রে সব চেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হল আগুন ছড়িয়ে পড়া৷ একটা বনে আগুন ধরলে, মুহূর্তের মধ্যে তা আশপাশের বনগুলিতে ছড়িয়ে যায়৷ তখনই তা দাবানল হয়ে ওঠে।
আর এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে শুকনো পাতা ও ছোট ঘাস৷ এই ছাগল বাহিনী নিয়োগের ফলে সেই সব পাতা-ঘাস সাফ হয়ে যাচ্ছে অনেকটাই। ফলে আগুন ছড়িয়ে পড়াও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকছে। এ বারেও এই ফর্মুলা এখন থেকে কাজে লাগালে দাবানল অনেকটাই রোখা যাবে বলেই আশা প্রশাসনের৷
পর্তুগিজ প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রত্যেক বছর এই দাবানলের ফলে কেবল প্রাকৃতিক সম্পদই নষ্ট হয় না৷ পাশাপাশি প্রাণ যায় প্রচুর মানুষের৷ গত বছরেই প্রায় শতাধিক মানুষের প্রাণ গিয়েছিল ভয়ঙ্কর দাবানলের দাপটে৷
প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, এই দাবানলের ফলে দেশের পর্যটন ব্যবস্থাতেও প্রভাব পড়ছে৷ অনেক পর্যটক বহু অরণ্য এলাকায় যেতেই চাইছেন না৷ এই বিপদ দূর করতেই এমন অভিনব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওই আধিকারিক৷ এই পদক্ষেপের ফলাফল ইতিমধ্যেই আংশিক পাওয়া গিয়েছে। তবে পুরোপুরি কার্যকর করতে যে আরও কিছু বছর অপেক্ষা করতে হবে, তা-ও জানান ওই আধিকারিক।