বায়ুদূষণ থাকবে নিয়ন্ত্রণে। সাশ্রয় হবে জ্বালানির। আগামী প্রজন্ম প্রযুক্তির নতুন দিশা দেখাবে। সেই ১৯৭০ সালেই রিচার্জেবল লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন পাঁচ বিজ্ঞানী, জন বি গুডনাফ, এম স্ট্যানলি হইট্টিংহ্যাম, রবার্ট হাগিনস, র্যাসিড ইয়াজামি এবং আকিরা ইয়োশিনো। ব্যাটারির আবিষ্কার এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে তার ব্যবহারে সিলমোহর মেলার পর এই গবেষণার মূল তিন পথপ্রদর্শক জন বি গুডনাফ, এম স্ট্যানলি হইট্টিংহ্যাম ও আকিরা ইয়োশিনোর নাম নোবেলের জন্য মনোনয়ন করল রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস। বুধবার নোবেল কমিটির তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়, চলতি বছর রসায়নে নোবেল পেতে চলেছেন এই তিন বিজ্ঞানী।
ডিজিটাল প্রযুক্তির ইতিহাসে বিবর্তনের নতুন পথ দেখিয়েছে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি (lithium-ion battery বা Li-ion battery–LIB)। মোবাইল, ল্যাপটপ, বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি থেকে বৈদ্যুতিন গাড়ি (Electric Vehicles)—রিচার্জেবল এই ব্যাটারির প্রয়োগ সর্বত্র। অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে প্রতিরক্ষা বিষয়ক গবেষণা, নতুন দিশা দেখিয়েছে এলআইবি।
নোবেল কমিটির তরফে টুইট করে বলা হয়েছে, “প্রযুক্তি সংক্রান্ত গবেষণাকেই এ বছর রসায়নের মূল ভিত্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল। জ্বালানির বিষ ধোঁয়া মুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলাই উদ্দেশ্য। দূষণ মোকাবিলার নতুন দাওয়াই হিসেবে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির আবিষ্কর্তা তিন বিজ্ঞানীকেই নোবেলের জন্য বেছে নেওয়া হল।”
লিথিয়াম ব্যাটারির গবেষণা শুরু হয়েছিল ১৯৭০ সালেই
জন বি গুডনাফ, এম স্ট্যানলি হইট্টিংহ্যাম, রবার্ট হাগিনস, র্যাসিড ইয়াজামি এবং আকিরা ইয়োশিনো—পাঁচ বিজ্ঞানী মিলে রিচার্জেবল এমন ব্যাটারির গবেষণা শুরু করেছিলেন ১৯৭০ সালেই। দশ বছর পর ১৯৮০-তে তৈরি হয় লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। সেই সময় এই ব্যাটারির ব্যবহার নিয়ে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রথম ১৯৯১ সালে সোনি ও জাপানি কেমিক্যাল কোম্পানি আসাহি কাসেই কর্পোরেশন এই ব্যাটারির ব্যবহার শুরু করে। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকে।
বিজ্ঞানীরা জানান, এক লিটার ডিজেল বা পেট্রল পুড়লে তা থেকে প্রায় ২.৪ কিলোগ্রাম কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুতে মেশে। সেখানে দিনের পর দিন গ্যালন গ্যালন জ্বালানি পুড়ে বায়ুর কী পরিমাণ ক্ষতি করছে, তা সহজেই অনুমেয়। ব্যাটারি চার্জ দিতে যে বিদ্যুৎ লাগে, তা উৎপাদন করতে গেলেও কার্বন তৈরি হয়। তবে, জ্বালানি পুড়ে তৈরি কার্বনের থেকে তা পরিমাণে কম। জলবায়ু রক্ষায় দূষণ নিয়ন্ত্রণের যে অঙ্গীকার করা হয়েছে বিশ্বজুড়ে, তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আগামী দিনে পেট্রল-ডিজেল বা জৈব জ্বালানির পরিবর্তের বৈদ্যুতিন গাড়িকেই মান্যতা দেবে বিশ্ব।
বিশ্ব উষ্ণায়ণ রুখবে, বিশ্বায়নের পথ দেখাবে..বললেন ৯৭ বছরের গুডনাফ
জার্মানিতে ১৯২২ সালে জন্ম জন গুডনাফের। সলিড-স্টেট ফিজিক্স নিয়ে অধ্যাপনা করেছেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে অস্টিনের টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেটিরিয়াল সায়েন্সেসের অধ্যাপক। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির দিশা প্রথম দেখিয়েছিলেন গুডনাফই। নিজের আবিষ্কৃত সূত্র ‘গুডনাফ-কানামোরি রুলস’ দিয়ে ম্যাগনেটিক সুপারএক্সচেঞ্জের (Magnetic Superexchange) পথ দেখিয়েছিলেন ইনিই। গুডনাফের সহকর্মীরা বলেন, এই ৯৭ বছরে বয়সেও একটা দিনের জন্যও গবেষণায় বিরতি দেননি গুডনাফ। তাঁর উদ্যোম আজ সার্থকতা পেল।
ব্রিটিশ-আমেরিকান রসায়নবিদ স্ট্যানলি হইট্টিংহ্যামের জন্ম ১৯৪১ সালে। মেটিরিয়াল সায়েন্সেস নিয়ে গবেষণা করেন তিনিও। বর্তমানে বিংহ্যামটন ইউনিভার্সিটির মেটিরিয়াল রিসার্চ এবং মেটিরিয়াল সায়েন্সেসের অধ্যাপক-গবেষক স্ট্যানলি। তাঁর তৈরি লিথিয়াম ব্যাটারিতে রয়েছে টাইটেনিয়াম ডাইসালফাইড ক্যাথোড এবং লিথিয়াম-অ্যালুমিনিয়াম অ্যানোড।
গুডনাফের বিশুদ্ধ লিথিয়ামের বদলে বাণিজ্যিক কাজের উপযুক্ত এবং বিস্ফোরণের সম্ভাবনা কম এমন লিথিয়াম ব্যাটারি তৈরি করেছেন আকিরা ইয়োশিনো। ১৯৪৮ সালে তাঁর জন্ম জাপানে। বর্তমানে জাপানের মেইজো ইউনিভার্সিটির তিনি গবেষক-অধ্যাপক।