বিদ্যুৎ নেই ভেনেজ়ুয়েলা জুড়ে! বিনা চিকিৎসায় মেয়েকে হারিয়ে, কোলে নিয়ে মর্গে চললেন মা!

 তীব্র বিদ্যুৎ সঙ্কটে বিপন্ন ভেনেজুয়েলা। টানা কয়েক দিন ধরে জ্বলছে না আলো। বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থাও। আর এই সঙ্কটেরই নিষ্ঠুরতম একটি ছবি সামনে এল সম্প্রতি। কোনও হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাওয়া সন্তানকে কোলে নিয়ে পথে হাঁটছেন মা। বিদ্যুতের অভাবে সম্ভব নয় সৎকারও। তাই মা খুঁজছেন কোনও মর্গ। যেখানে সন্তানকে রাখতে পারবেন তিনি!

উত্তর ভেনেজুয়েলার ভ্যালেনসিয়া শহরে ঘটা কয়েক দিন আগের এই ঘটনার ছবিই এখন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে। তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা কঙ্কালসার মেয়ের মৃতদেহ নিয়ে বিধ্বস্ত মায়ের হেঁটে যাওয়া যেন চরম অরাজকতার প্রতীক। গোটা দেশটার শেষ হয়ে যাওয়ার বার্তাই যেন ফুটে উঠছে এই চরম মর্মান্তিক দৃশ্যের মাধ্যমে।

গোটা ভেনেজ়ুয়েলাই আঁধারে ডুবে এক টানা। মাঝেমধ্যে কয়েকটি প্রদেশে বিদ্যুত্‍ পরিষেবা চালু করা গেলেও, তা প্রায়ই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালের জরুরি পরিষেবা অকেজো। বাড়িতে চলছে না ফ্রিজ। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে খাবার। চলছে না জলের পাম্প। বাসিন্দাদের তীব্র জলকষ্ট থেকে বাঁচাতে রাস্তায় নেমেছে সেনা। বিরোধী দলনেতা হুয়ান গুয়াইদোর অভিযোগ, এই ক’দিনে হাসাপাতালে বিদ্যুত্‍ না থাকার জন্য ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গোটা দেশ জুড়ে এই চরম বিপর্যয়ের জন্য বিরোধী দলনেতা হুয়ান গুয়াইদোকে দায়ী করেছেন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। তাঁর অভিযোগ, হুয়ানের পিছনে মদত রয়েছে আমেরিকার। এই অবস্থায় চিন আর রাশিয়ার কাছে সাহায্য চেয়েছেন মাদুরো। বিপর্যয় মোকাবিলায় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে তারা।

সম্প্রতি, সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত ১৯ বছরের মেয়েকে নিয়ে দু’টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিলেন এলিজাবেথ ডায়াজ। কিন্তু কোথাও বিদ্যুত্‍ না থাকায় জরুরি পরিষেবা বন্ধ ছিল। চিকিত্‍সকেরা ফিরিয়ে দেন এলিজাবেথকে। অন্য কোনও হাসাপাতালে যাওয়ার আগে মায়ের কোলেই মৃত্যু হয় মেয়েটির। সত্‍কারটুকুও করার ব্যবস্থা করতে পারেননি এলিজাবেথ। তাই একটি মর্গে মেয়ের দেহ রাখার ব্যবস্থা করছিলেন তিনি।পায়ে হেঁটেই। আর তাঁর সেই ছবিই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

ভেনেজুয়েলার বলিভার প্রদেশের গুরি জলবিদ্যুত্‍ প্রকল্প থেকে দেশের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ বিদ্যুত্‍ উত্‍পন্ন হয়। সেখানেই বড় যান্ত্রিক বিপর্যয় দেখা দেয় প্রথমে। যার ফলে গোটা ভেনেজ়ুয়েলা আঁধারে ডুবে গিয়েছে। এর মধ্যে গত রবিবার কারাকাসের একটি বিদ্যুত্‍ সাবস্টেশনে বিস্ফোরণের ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়।

প্রেসিডেন্ট মাদুরোর দাবি, সাইবার হামলার মাধ্যমে হুয়ানকে দিয়ে আমেরিকাই এই বিপর্যয় ঘটিয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। গত কয়েক মাস ধরেই আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক অবনতি হয়েছে মাদুরোর। তাঁকে গদিচ্যুত করতে হুয়ানকে সমর্থন দেখিয়ে আসছে আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।

ভেনেজুয়েলা সরকারকে কোণঠাসা করতে ভারত-সহ বিভিন্ন দেশকে ভেনেজুয়েলা থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে অনুরোধ করেছে আমেরিকা। সূত্রের খবর, এই প্রস্তাবে রাজিও হয়েছে দিল্লি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.