১৯৭৪ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলন। মুজিব এই সম্মেলনে যোগ দেয় কয়েকটি মুসলিমদেশের বিশেষ তৎপরতা ও মধ্যস্থতায় পকিস্তান বাংলদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। সম্মেলনে মুজিব তাঁর ভাষণে বলেন ” ধ্বংস নয় সৃষ্টি নয় শান্তি, দুর্ভোগ নয় মানুষের কল্যাণে আমাদের কাজ করতে হবে । আমরা যদি মহানবীর প্রচলিত মানবপ্রেমে ও মর্যাদার শ্বাশ্বত মূল্যবোধ আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত করতে পারি তা হলে বর্তমান কালের সমস্যা সমাধানে মুসলিম জনসাধারণ সুস্পষ্ট অবদান রাখতে সক্ষম হবে। এই সব মূল্যবোধে উজ্জীবিত হয়ে শান্তি ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে আমরা একটি আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য গড়ে তুলতে পারি ।”( দৈনিক ইত্তেফাক ফেব্রুয়ারি ২৮,১৯৭৪)।
এখানে আমরা কোন মুজিবকে পেলাম এই মুজিব কি আদৌও ধর্মনিরপেক্ষ ছিল কি কোন দিন । মুজিব নাকি বাঙালি জাতীয়তাবাদের জনক এখানে ইসলামি সমাজ ব্যবস্থায় নতুন আন্তর্জাতি ঐতিহ্য গড়ে তোলার যে আহ্বান জানায় সে সমাজ ব্যবস্থার বাস্তব প্রয়োগ তিনি পাকিস্থানের দুই যুগের শাসনে দেখেননি তা নয়। এই ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সদ্য স্বাধীন বাংলদেশের যে বক্তব্য তুলে ধরা প্রয়োজন ছিল , মুজিব তাঁর পাশ দিয়েও যায়নি । এই সম্মেলনেই তাঁর সাথে ভুট্টোর সাক্ষাৎ হলে মুজিব বলে ” আমাদের সবার সামনে পথ এখন খুলে গেছে । এখন আমরা নিষ্পত্তির দিকে এবং আলোচনার মাধ্যমে সকল বিরোধ মীমাংসার দিকে এগোতে পারি । এতো গেলো একটা দিক।
রেসকোর্স ময়দানের ৪০০ বছরের পুরনো রমনা কালীমন্দির পাকিস্তানি সেনা বাহিনী তাঁকে ধ্বংস করে দেয় ঢাকা নগরীর পত্তনের ইতিহাসের সাথে এই মন্দিরের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। এই মন্দিরের পুনঃনির্মাণের আবেদন নিয়ে মুজিবের কাছে হিন্দুরা গিয়েছিলেন । বিনয়ের সাথে তাঁদের সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মুজিব বলেছিল , ঢাকা নগরের যে কোন জায়গায় বিকল্প স্থান বেছে নিতে । সেখানে কালী মন্দির নির্মাণের সব ব্যবস্থা তিনি করে দেবেন । শুধু উদ্যানের জায়গা টুকু ছেড়ে দিতে হবে। হিন্দুরা মুজিবের সেই প্রস্তাব মেনে নেয়নি । এখানে মন্দির পুননির্মাণের অনুমতি না দেওয়ার পিছনে কোন কারণ ছিলনা বা অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। সম্পূর্ণ সরকারি উদ্যোগে , ঐতিহ্য বাঁচাবার প্রয়োজনে এই মন্দির পুননির্মিত হওয়া উচিত ছিল। তাতে রাষ্ট্রের ‘ ধর্মনিরপেক্ষতা ‘ ক্ষুন্ন না হয়ে আরো বেশি অর্থপূর্ণ হত । কিন্তু মুজিব সেই ধর্মনিরপেক্ষতা দেখাতে ব্যার্থ হয়েছিল ।
সৌমেন ভৌমিক