রথযাত্রা উৎসব শেষ। কিন্তু এবার বাংলাদেশে রথযাত্রা নিয়ে ঘটেছে এক সাম্প্রদায়িক অশান্তির ঘটনা। খবরে প্রকাশ, অন্যান্যবারের মতো এবারও বাংলাদেশে রথযাত্রা উৎসব পালন করে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সঙ্ঘ বা ‘ইসকন’। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশের এক শ্রেণীর জামাত তথা পাকপন্থী রাজাকার, আলবদর ও কট্টর ইসলামপন্থী, হিন্দু বিদ্বেষী ধর্মগুরু। তারা ‘ইসকন’-এর বিভিন্ন কার্যকর্তাকে আসামি করে আদালতে মামলা পর্যন্ত করেছে। মামলাকারীদের অভিযোগ, ৩০ জুন একদল ‘ইসকন’ সদস্য রথযাত্রার নামে ভোর ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে বাদ্য-বাজনা করে। ফলে ৫ বারের নামাজ বিঘ্নিত হয়। নামাজের সময় বাদ্য-বাজনা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানালে উদ্যোক্তার তাতে কর্ণপাত না করে উল্টে দুর্ব্যবহার এবং মারধর করেন। এমনকী তারা পার্শ্ববর্তী পাঁচ শতাব্দী পুরানো স্বামী বাগ মসজিদে ঢুকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর হামলা চালায়। এছাড়াও ইদের আগের দিন ঢাকার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম-এর গেটের কাছে রথযাত্রার মিছিলকারীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিকট শব্দে বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে নানা অভব্য অঙ্গভঙ্গি, হইচই ও চিৎকার-চেঁচামেচি করে যা সহ্যের সীমা লঙ্ঘন করে। তাদের আরও অভিযোগ, ‘ইসকন তাদের ‘ফুডফর লাইফ’ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে (৮-১৬ জুলাই) চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে খাবার বিতরণের নামে প্রসাদ বিতরণ করে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের “হরে কৃষ্ণ, হরে রামমন্ত্র বলতে বাধ্য করে, যাদের অধিকাংশ মুসলমান। আবার সিলেটের কাজলাশাহ মসদিদে নামাজ আদায়ের সময় ইসকন’-এর লোকজন উচ্চ শব্দ করে বাদ্যযন্ত্র বাজাতে থাকলে ও গানগাইতে থাকলে নামাজ পাঠে বিঘ্ন ঘটে। নামাজ পাঠের সময় বাদ্য-বাজনাবন্ধ রাখার অনুরোধ করলে তারা উল্টে তাদের উপরেই হামলা চালায়। তাতে ২০ জন আহত হয়। আসামিদের এহেন উস্কানিমূলক ক্রিয়াকলাপ কোটি কোটি মুসলমানের ধর্মীয় ভাবাবেগকে প্রচণ্ড আঘাত করছে। ইসকন’-এর এরূপ কার্যকলাপ ওইদেশ ও সমাজের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে যে কোনো মুহূর্তে অশান্ত করে তুলতে পারে। তাই বাংলাদেশে ‘ইসকন’-এর ক্রিয়াকলাপ বন্ধ করা একান্ত জরুরি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, রথযাত্রার। দিন ওরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
এর পাল্টা হিসেবে ‘ইসকন’-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের কোথাও কোনো মুসলমান শিক্ষার্থীকে প্রসাদ খাওনো হয়নি, কাউকে ‘হরে কৃষ্ণ, হরে রাম’ মন্ত্র বলতেও বাধ্য করা হয়নি। চট্টগ্রামে ‘ইসকন তাদের রথযাত্রা উপলক্ষ্যে ‘ফুড ফর লাইফ’ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রসাদ’ নয়, খাবার বিতরণ করেছে। আর স্যোশাল মিডিয়ায় যাদের মন্ত্রোচ্চারণ করতে দেখানো হয়েছে, তারা ভক্তি বেদান্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং সবাই হিন্দু। তাছাড়া ‘মিডিয়া যে স্কুলের নাম দিয়ে প্রসাদ খাওয়ানোর অভিযোগ করেছে তার অধ্যক্ষ বিভিন্ন মাধ্যমকে জানিয়েছেন, তার স্কুলের কোনো মুসলমান শিক্ষার্থীকে ওই খাবার দেওয়া হয়নি। উল্লেখ্য, রথযাত্রার শুভেচ্ছা স্বরূপ ‘ইসকন’ এবারও দশটি স্কুলের হিন্দু শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেছে। এবং এবারই তাদের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ—প্রশ্ন বিদ্ধ করা হয়েছে তাদের সেবামূলক কার্যক্রমকে। কর্তৃপক্ষ অবশ্য সরকারের কাছে সঙ্রে সাধু-সন্ন্যাসীদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে ইসকন’-এর বিরুদ্ধে মিথ্যে খবর প্রকাশের জন্য কয়েকটি সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। তবে। আনন্দের খবর, অভিযোগকারীদের করা মামলাটি শুনানির শেষে মহামান্য আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। একেই বলে, “রাখে। হরিমারে কে?’ ‘সত্যমেব জয়তে’। মনে রাখতে হবে, রাম ও কৃষ্ণ বিশ্বমানবকে। দেখাবে সত্যের পথ। হিন্দুত্ব করবে বিশ্বজয়। সত্যি বলতে কী, বাংলাদেশে হিন্দুবিরোধী স্বাধীনতার শত্রুদের উত্থান ক্রমবর্ধমান, সেদেশে হিন্দুরা তথা সংখ্যালঘুরা অস্তিত্বহীনতায় ভুগছে। তারা বঞ্চিত, লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত। বোধহয় বিলুপ্তির পথে। তাছাড়া বাংলাদেশকে হিন্দু শূন্য করার চক্রান্ত চলছে। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের একাংশের অভিমত, বাংলাদেশে হিন্দু বিরোধী কার্যকলাপের পিছনে রয়েছে হাসিনা সরকারের পরোক্ষ ইন্ধন। কারণ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকতে স্বাধীনতার শত্রু জামাতিদেরও সমর্থন চাইছেন। তাই তিনি তাদের তোল্লা দিচ্ছেন। তারা ও শাসকদলের একটা বড়ো অংশ হাত মিলিয়ে বাংলাদেশকে হিন্দু শূন্য করার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু হাসিনা চুপ। তার স্বপ্ন, বাংলাদেশকে সর্ব বৃহৎ মুসলমান রাষ্ট্রে পরিণত করা, যা এখন ইন্দোনেশিয়া। কিছু মুসলমান দেশ-সহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই রয়েছে ‘ইসকন’-এর উপস্থিতি। এর ‘ফুড ফর লাইফ’ও ‘কৃষ্ণ প্রসাদ’ওই সব দেশে সমাদৃত। আফ্রিকার দুর্ভিক্ষময় দেশগুলিতে ওই কর্মসূচি দারুণ জনপ্রিয়। ক্ষুধার্তরা উপকৃত। অথচ বাংলাদেশের ‘জেহাদি মুসলমানদের কাছে এই কর্মসূচি প্রশ্নবিদ্ধ। মূখ আর কাকে বলে?
ধীরেন দেবনাথ
2019-08-18