মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছিল এক শিশু। ২০১৮ সালে এই ছবি ভাইরাল হয়েছিল নেট দুনিয়ায়। শিশুটির অসহায়তা দেখে কেঁদেছিল গোটা দুনিয়া। এ বার পুরস্কার জিতে নিল সেই ছবি। গেটি ইমেজের ফটোগ্রাফার জন মুর-এর তোলা সেই ছবি এ বার জিতে নিয়েছে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো অ্যাওয়ার্ড।
বয়স কতই বা হবে তার। বড়জোর বছর দুয়েক। পরনে গোলাপি গেঞ্জি, জিনস আর ম্যাচিং জুতো। কিন্তু শিশুটির মুখে এক চিলতে হাসিও নেই। উল্টে তারস্বরে কেঁদে চলেছে সে। চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে এক অজানা আতঙ্ক আর ভয়। যেন তার সামনে হাতছানি দিচ্ছে চরম অনিশ্চয়তা। পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন আরও দু’জন। তবে ছবি দেখে তাঁদের পরিচয় বোঝা দায়।
গতবছর সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছিল এই ছবি। একরত্তি ইয়েলেনার কান্না চোখে জল এনেছিল বিশ্ববাসীর। পরে জানা গিয়েছিল আমেরিকার অভিবাসন নীতির শিকার হয়েছিল ওই বাচ্চাটি। জোর করে তাকে আটক করেছিল নিরাপত্তারক্ষীরা। আলাদা করে দিয়েছিল মা সান্দ্রা সানচেজের থেকে।
মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্ত পেরিয়েছিলেন এই মা এবং সন্তান। আন্দাজ করেছিলেন বিপদ আসবে যেকোনও সময়। কিন্তু তা যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে সে ব্যাপারে বোধহয় আভাস ছিল না। নিরাপত্তারক্ষীদের নজরে আসতেই জানতে চাওয়া হলো শিশু এবং তাঁর মায়ের পরিচয়। তাঁরা মেক্সিকান জানতে পেরেই ট্রাম্পের নির্মম অভিবাসন নীতি অনুযায়ী সটান মায়ের থেকে আলাদা করে দেওয়া হলো সন্তানকে। শিশুটির গায়ে চাপানো হলো নীল রংয়ের পোশাক। বেআইনি অনুপ্রবেশের দায়ে সান্দ্রা বন্দি হলেন ডিটেনশন শিবিরে। জানতে পারলেন না কোথায় গেল তাঁর মেয়ে ইয়েলেনা ।
তবে এই নির্মম পরিস্থিতির সাক্ষী ছিলেন ফটোগ্রাফার জন মুর। গেটি ইমেজেস-এর এই ফটোগ্রাফারের লেন্সেই সেদিন বন্দি হয়েছিল ইয়েনেলার আর্তি। ২০১৮ সালে তোলা এই ছবিতে অভিবাসন নীতির এক ভয়াবহ রূপ তুলে ধরেছিলেন মুর। প্রায় এক দশক ধরে মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে কাজ করছেন তিনি। তবে এমন পরিস্থিতি আগে দেখেননি বলেই জানান মুর।
ছবি প্রকাশ্যে আসার পর জন মুর বলেন, “মানবিক হিংসার আসল রূপ দেখাতে চেয়েছিলাম আমি। তাই ফ্রেমবন্দি করেছিলাম ওই অসহায় শিশুর কান্না।“ জন মুর-এর এই ছবি দেখার পর আতঙ্কে কেঁপে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। আমেরিকা যে একজন বেআইনি অনুপ্রবেশকারীকেও রেয়াত করবে না, সে কথায় দম্ভের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাঁর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির দৌলতেই বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন হাজার হাজার মা এবং সন্তান। টেক্সাসের অভিবাসন ক্যাম্পে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওই শিশুদের গায়ে লেগে গিয়েছিল শরণার্থীর তকমা। আর সন্তান হারানোর যন্ত্রণায় শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিল মায়েরা।
শরণার্থী ক্যাম্পে শিশুদের দুরবস্থা দেখে গর্জে ওঠেন বিশ্ববাসী। এরপরেই দুনিয়া জুড়ে হোয়াইট হাউসের ‘অভিবাসন নীতি’ নিয়ে শুরু হয়েছিল ব্যাপক সমালোচনা। চাপে পড়ে নড়েচড়ে বসে ট্রাম্প প্রশাসন। বদল আসে ‘অভিবাসন নীতি’-তেও।