নিষিদ্ধ তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হবে না কোনওভাবেই। ২৬/১১ মুম্বই হামলার চক্রী, পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সইদকে এ কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। তার জামাত-উদ-দাওয়া সংস্থাটিকেও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ঘোষণা করা হয়েছে। এ হেন কুখ্যাত জঙ্গির ফিনান্সারের জনপ্রিয়তাও কম কিছু নয়। হালে তার সম্পত্তির পরিমাণ দেখে চোখ কপালে উঠেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-এর গোয়েন্দাদের। অনুমান, কাশ্মীরে সন্ত্রাস তৈরি করতে এই ধনকুবেরের মদত রয়েছে ষোলোআনা। যথেচ্ছভাবে টাকা ঢেলে বিচ্ছিন্নতাকামী নেতাদের উস্কে দেওয়ার পিছনেও রয়েছে এই ব্যক্তিরই হাত।
জাহুর আহমেদ শাহ ওয়াতালি। পুলওয়ামা হামলার পর গুরুগ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে এনআইএ। নাশকতায় মদত এবং আর্থিক তছরুপের অভিযোগে ওয়াতালির ১ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তদন্তে জানা যায়, তার সঙ্গে পাকিস্তানি হাইকমিশনের আর্থিক লেনদেন রয়েছে।
লস্কর মাথা হাফিজের চিফ ফিনান্সার ওয়াতালির শুধু পাকিস্তানে নয়, এ দেশে, বিদেশে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বিপুল। এনআইএ সূত্রে খবর, লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার কাউন্সিলে ওয়াতালির রয়েছে ২৪ তলা বিলাসবহুল বাড়ি। পাশাপাশি, দক্ষিণ দিল্লির এনআরআই কলোনীতে ঝাঁ চকচকে ফ্ল্যাট। দুবাইতে একটি নির্মাণ সংস্থা যার মারফৎ জলের মতো টাকা ঢুকত ওয়াতালির অ্যাকাউন্টে। সেই টাকা হাওয়ালা পথে চালান করা হত পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলির কাছে। বেনামে তার কিছু অংশ চলে আসত উপত্যকার জঙ্গি গোষ্ঠী ও হুরিয়তদের কাছে। হাফিজ সইদ, পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এবং দিল্লির পাকিস্তানি হাইকমিশন থেকেও নিয়মিত টাকা আসত ওয়াতালির কাছে।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, গুরুগ্রামে ওয়াতালির যে বিপুল জমিজমা ও সম্পত্তি রয়েছে সেটা কেনা হয়েছে লস্করের শাখা সংগঠন ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত ফাউন্ডেশনের টাকায়। তা ছাড়া, জম্মু-কাশ্মীরের হান্দওয়াড়ায় ওয়াতালির কয়েকশো বিঘা জমি, দোকান রয়েছে। ভাগতপোরা গ্রামেও রয়েছে বেনামে জমি-বাড়ি। শ্রীনগরের নারবল এলাকাতেও জমি কিনে রেখেছে ওয়াতালি। এনআইএ-র দাবি, জম্মুর সিরদায় ২০-২২ ঘরের একটি বাড়ি তৈরি করে রেখেছে ওয়াতালি। জম্মুদের গোপন ডেরা হিসেবে সেই বাড়িটি ব্যবহৃত হয় কি না সেটা খোঁজ নিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপি কনভয়ে জঙ্গি হামলার পর থেকে উপত্যকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক জোরদার হয়েছে। জঙ্গি নিধন অভিযানে উপত্যকার আনাচ কানাচে তল্লাশি চালাচ্ছে সেনা। এনআইএ-র গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, পাকিস্তানে বসে লস্কর মাথা হাফিজ সইদ, হিজবুল মুজাহিদিন নেতা সৈয়দ সালাউদ্দিনরা হুরিয়তকে টাকা পৌঁছে দিচ্ছে। উপত্যকায় নাশকতামূলক কাজকর্মে সেই টাকা ব্যবহার করা হচ্ছে। এদের সকলেরই রয়েছে ধনকুবের ফিনান্সার যাদের মাধ্যমে ঘুর পথে টাকা পৌঁছে যাচ্ছে দেশে-বিদেশে। ওয়াতালি এমনই একজন। এরকম আরও ফিনান্সারের খোঁজে রয়েছেন গোয়েন্দারা।