ভারত ভাগের আগে যে স্থানটি সর্বাধিক ধর্মীয় সংঘর্ষের কারণে রক্তাক্ত ছিল সেই নোয়াখালীতে গিয়ে শান্তির বার্তা দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী। আর তাঁরই অনুরাগী হয়ে আজীবন গান্ধী আদর্শ ছড়িয়ে যাওয়া শ্রীমতি ঝর্ণা ধারা চৌধুরী প্রয়াত হলেন। বসয় জনিত কারণে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার একটি হাসপাতালে তাঁর প্রয়াণ হয়েছে। বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
শান্তির বার্তা ও সেবায় আত্মনিয়োগ করা এই কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বকে ২০১৩ সালে ভারত সরকার পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে অনন্য একুশে পদক সম্মাননা দেয়। এছাড়াও তিনি রোকেয়া পুরষ্কারে ভূষিত হন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মাননা তিনি লাভ করেছিলেন।
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ তৈরির রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এই গান্ধীবাদী সেবাকর্মী। তিনি চলে যান ত্রিপুরায়। সেখানে আগরতলায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ত্রাণ শিবিরে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন। বাংলাদেশ তৈরি হওয়ার পর ফিরে এসে নোয়াখালীতে সেবামূলক কাজ শুরু করেন।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট তিনিই পরিচালনা করতেন। গান্ধী আশ্রমের তরফে জানানো হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ঝর্ণা ধারা চৌধুরীর উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস সহ বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। পরে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে তাঁকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
ঝর্ণাদেবী লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের কালুপুর গ্রামে ১৯৩৮ সালের ১৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। মানব সেবায় নিয়োজিত হয়ে ও গান্ধী আদর্শকে জীবন ব্রত করেছিলেন তিনি। অবিবাহিত থেকেই গান্ধী আশ্রমের সমাজকর্মী হিসেবে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সেবামূলক কাজ করেছেন।
তাঁর বাবার বিশিষ্ট গান্ধীবাদী প্রথম চৌধুরী ও মা আশালতা চৌধুরী। পরিবারের তিনি ১১ ভাইবোনের মধ্যে দশম। ভারত ভাগ হওয়ার পর ঝর্না ধারা চৌধুরীর পরিবার পূর্ব পাকিস্তানেই থেকে যায়। গান্ধী আদর্শ ছড়িয়ে দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন জীবনভর। ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পূর্ব বাবার মৃত্যুর পর ১৯৫৬ সালে তিনি মহাত্মা গান্ধী প্রতিষ্ঠিত অম্বিকা কালিগঙ্গা চ্যারিটেবল ট্রাষ্টে (গান্ধী আশ্রম ট্রাষ্ট) যোগ দেন।