ঠিক এমনটাই মত পিয়ার্স পল রিডের। তাঁর বিখ্যাত বই “এব্লেজঃ দ্য স্টোরি অফ হিরোস এন্ড ভিকটিমস অফ চেরনোবিল১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।চেরনোবিলের ঘটনাই সোভিয়েত ইউনিয়নের বীভৎসতা আর অন্তঃসারশূন্যতা প্রকাশ্যে এনে দেয় বিশ্ববাসীর সামনে। রাশিয়ার মানুষও আর এই নৃসংস কমিউনিস্ট শাসনে থাকতে চাইছিল না। কেজিবির ভয়, শাসকের দমন পীড়ন কিছুই আর মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারে নি।রবীন্দ্রনাথ তাঁর রাশিয়ার চিঠিতে বলেছিলেন, হয় মানুষ ছাঁচ ভাঙবে নয় তো মানুষ মরবে। গুরুদেবের কথাই ঠিক হল মানুষ ছাঁচ ভেঙে ফেলল তবে অনেক নিরীহ মানুষের মৃত্যুর পরে।


১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল পৃথিবীর মানবজাতীর ইতিহাসে অন্যতম বিপর্যয় ঘটেছিল, যার জন্য সম্পূর্ন ভাবে মানুষই দায়ী ছিল। হিরোসিমাতে বিশ্বযুদ্ধের সময় শত্রু দেশ যে কাজ করেছিল, মদমত্ত কমিউনিস্ট সোভিয়েত নিজের দেশেই সেই ভয়াবহতা ঘটাল।তার ২০ দিন পরে প্রেসিডেন্ট গোরভাচেভ প্রথম সাংবাদিক বৈঠক করলেন।১৪ মে গোরভাচেভের গলায় ছিল ভেঙে পড়ার সংকেত। বললেন ইউরোপের যে কোন দেশের রাজধানীতে তিনি পরমানু নিরস্ত্রিকরনেরস জন্য বসতে চান। সেদিনের থেকে ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেমর সাবেক সোভিয়েত ভেঙে দিয়ে তাঁর পদত্যাগের দিনটি পর্যন্ত তাকে তাড়া করে ফিরাছে
গত বছর এইচবিও মিনি সিরিজে মুক্তি পেয়েছিল ধারাবাহিক “চেরনোবিল”। ভীষন হৃদয়স্পর্শী এই ডকুমেন্টরি সারা পৃথিবীতে অনেক পুরষ্কার পেয়েছে। চেরনোবিল বিদ্যুৎ কেন্দ্র আর টাউনশিপের মাঝখানে ব্রিজের উপর দাঁড়ানো হতবাক মানুষ, রাতের অন্ধকারে উৎকণ্ঠিত, তাদের চোখের সামনে তারা ভরা আকাশের নিচে ঘটে গেল দ্বিতীয় বিস্ফোরন। শিশুরা ভয়ে ছিটকে গেল, মায়েরা কোলে চেপে ধরলেন ছোট্ট শিশুকে, নীরিহ নিরাপরাধ মানুষের অসহায়তার অসাধারন সিনেমাটোগ্রাফি


আজ ইউক্রেন কমিউনিজম মুক্ত। এই ইউক্রেনেই কমরেড স্ট্যালিন গত শতাব্দীর ষাটের দশকে হলোডমোর করেছিলেন। ইচ্ছাকৃত ভাবে দুর্ভিক্ষ করে ইউক্রেনের এক লক্ষেরও কিছু বেশী মানুষকে মেরেছিলেন স্ট্যালিন। তাই কমিউনিজমের (Communism) প্রতি ইউক্রেনের মানুষের গভীর ঘৃণা। ১৯৯০ সালের ১ অগষ্ট গনদাবীতে ইউক্রেনের মাটি থেকে প্রথম লেনিনের মূর্তিটি সরানো হয়। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৫,৫০০ লেনিন মূর্তি তুলে ফেলা হয়েছে। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারী ইউক্রেন ইন্সটিতিউট অফ ন্যাশেনাল রিমেমব্র্যান্স ডিকমিউনাইজেশন প্রক্রিয়ায় লেনিন মূর্তি উৎপাটনের বর্ণনা করেছে। “রেইনিং লেনিনস” ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোথায় কবে কমিউনিজমের দাসত্ব মুক্তি হয়েছে তার বিস্তৃত বিবরন পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার হল চেরনোবিলের জনহীন প্রান্তরে আজও লেনিনের দুটি মূর্তি আছে। সেই দুটিই সম্ভবত ইউক্রেনের শেষ কমিউনিজমের স্মৃতি চিহ্ন!
আজকের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষনে চেরনোবিল দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে তিনটি বিষয় বলা হয়। প্রথমত কমিউনিস্ট জামানায় রিএক্টারের ডিজাইন গোলমাল জানা স্বত্ত্বেও ধামা চাপা দেওয়া হয়েছে। কোন রকম আর্ন্তজাতিক আইনের ধার ধারে না কমিউনিস্ট ঘেরা টোপে থাকে দেশগুলি। তাই নিরাপত্তার বিষয়েও চুড়ান্ত অবহেলা হয়েছিল সেখানে। দ্বিতীয় কারণ হিসাবে নিরাপত্তার বা সেফটি রুলস এড়িয়ে যাওয়াকেই দায়ী করা হয়। তৃতীয় কারণ মানুষের ভুল। সেটা সাংঘাতিক মানসিক চাপের জন্য না প্রযুক্তিগত বিষয়ে পার্টির নাক গলানো সেটা নিয়ে আজও গবেষনা চলছে।


কেজিবির প্রকাশিত রিপোর্টে পরিষ্কার যে চেরনোবিলের রিএক্টার যে ত্রুটিপূর্ণ তা সোভিয়েত ইউনিয়নের ফুয়েল এন্ড এনার্জি মন্ত্রালয় বহুদিন থাকেই জানতেন। ইন্টারন্যাশেনাল এটমিক এনার্জি এজেন্সি ১৯৫৭ সালে স্থাপিত হয়েছিল। সারা পৃথিবী তার নিয়মনীতি মেনে চললেও রাশিয়া বা চিনের মত কমিউনিস্ট দেশ তাদের তোয়াক্কা করত না। তাই চেরনোবিলের পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোন আর্ন্তজাতিক লাইসেন্স ছিল না। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সেফটি টেস্টিং এরও কোন বালাই ছিল না। চেরনবিল বিদ্যুৎকেন্দ্রে চারটি রিএকটার ছিল। ১৯৭৭ সালে প্রথমটি, ১৯৭৮ সালে দ্বিতীয়টি, ১৯৮১ সালে তৃতীয়টি আর ১৯৮৩ তে চতুর্থটি বসানো হয়রিএক্টারগুলি আরবিএমকে ১০০০ মডেল ছিল, সেগুলি ১৯৬০এর দশকে ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাশিয়ায় ডিজাইন করা হয়েছিল


এই রিএক্টারের বিষয়ে সাবেক কমিউনিস্ট সরকার মিথ্যে প্রচার করত। বলা হত এগুলিতে ১০০ শতাংশ নিরাপত্তার কথা ভাবা হয়েছে। গ্রাফাইটের ইটের মধ্যে ইউরেনিয়াম ফুয়েল রড ঢোকানো থাকত। তেজক্রিয় তরলের থেকে কর্মীদের সুরক্ষার জনয় মাত্র একটা ইস্পাতের সুরক্ষা চাদর ছিল। কিন্তু সেইযুগেই বাইরের পৃথিবীতে সুরক্ষার জন্য তিনটি স্তর ও হাই ডেনসিটি কঙ্ক্রিটের ঘেরাটোপ দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল।ততদিনে তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়ামের সঙ্গে জলের সরাসরি স্পর্শ এড়িয়ে তরল সোডিয়ামের ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছিল। জল ও সোডিয়াম এই প্রাইমারী ও সেকেন্ডারি ফ্লুইড রিএক্টার অনেক নিরাপদ ছিল। সার্গেই পারাসিন চেরনবিল নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন। তিনই পরে অকপটে স্বীকার করেছেন যে, একাধিক পরমানু বিজ্ঞানী বলতেন তাদের রিএক্টার নিরাপদ নয়। কিন্তু কেউ তাঁদের কথা শোনেনণি।


দ্বিতীয় অভিযোগ নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। ছাদটা কেবল তাপ নিরোধক করা হয়েছিল। বিস্ফোরক নিরোধক ছিল না। কোর কুলিং ফ্লুইড সাপ্লাই পাম্পের কোন বিকল্প ২৫ তারিখ দুপুর থেকেই বন্ধ ছিল। দুপুর ২টো নাগাদ পাওয়ার গ্রিডের থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের অনুরোধ আসেডিরেক্টর টেস্ট বন্ধ করে টারবাইন চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। টারবাইন রাত আটটা পর্যন্ত চলে। কিন্তু কোর কুলিং এর বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়াই এত ঘন্টা রিএক্টার চলেছিল। তার অর্থ চেরনোবিলে কোন রকম সেফটি কালচারই ছিল না।
এই সেফটি কালচারের অভাব বা প্ল্যান্ট ইন্সটলেশনের তাড়াহুড়োর পিছনের কারণ ছিল রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির মিথ্যা আত্মপ্রচার। বিকাশের প্রদর্শনের পথ বিদ্যুৎউৎপাদনের দ্রুত প্রদর্শন। আজ যেমন কমিউনিস্ট চিন পয়সা খরচ করে কমিউনিস্ট সরকারের কাজকর্মের মিথ্যা বড়াই করায়। কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়নার এই তঞ্চকতাকে আজ সারা পৃথিবীর মানুষফিফিটি পারসেন্ট পার্টি” বা “ফিফটি পার্সেন্ট আর্মি” বলে। সেযুগেও রাশিয়ার পয়সা দিয়ে রাখা সাংবাদিক, ইউরোপ, এশিয়ায় বা আমেরিকায় তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা রুশ পরমানু বিজ্ঞানের ঢাক পেটাতো।


তৃতীয় অভিযোগ মানবিক ত্রুটির। নাম উঠে আসে তিন জন মানুষের। যারা সেদিন রিএক্টার ফোরের কন্টোল রুমে ছিলেন। প্রথম জন বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডেপুটি চিপ ইঞ্জিনিয়ার, এনাটোলি ডায়াটলভ (Anatoly Diatlov)। দ্বিতীয় জন শিফট ফোরম্যান (Shift Foreman), আলেকজান্ডার আর্কিমফ আর সেইসঙ্গে লিওনিড টফটিনভ (Leonid Toftinov)। টফটিনভের দায়িত্ব ছিল রিএক্টার অপারেট করার। তিন মাসের অভিজ্ঞতা। টফটিনভের বছর তিরিশের টফটিনভ কিন্তু প্রথম থেকেই বিপদের গন্ধ পাচ্ছিল। সকালে একটা পরীক্ষা করার কথা ছিল। সেটা সকালের শিফটেও হয়নি, বিকেলের শিফটেও হয়নি, সেটা রাতের শিফটে না করাই উচিৎ ছিল। কারণ সকালে উপস্থিত ইলেকট্রিকাল ইঙ্গিনিয়ারও রাতে ছিলেন না।


এই পরীক্ষা রাতে করাবার সিদ্ধান্ত ডায়াটলভের। ডায়াটলভ প্রথাগতভাবে পাশকরা ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন না। একটা করসপন্ডেন্স কোর্সে পাঠ নিয়েছিলেন। নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং এ তাঁর অতি সামান্যই জ্ঞান ছিল। রাশিয়ার কমিউনিস্ট শাসনের শেষের দিকে পার্টির কর্তাভজা বহু লোক বহু সংস্থার একেবারে শীর্ষে উঠে গিয়েছিলেন। সেদিন একরকম চোটপাট করেই ডায়াটলভ ওই রুটিন পরীক্ষ শুরু করান। তারপর কন্ট্রোলরুমের পরিবেশ শান্ত হয়ে যায়। সেই সময় হঠাত খেয়াল হয় যে রিএক্টার কোরের বিকল্প ঠান্ডা করার ব্যবস্থা সারা দিনই প্রায় বন্ধ ছিল। কিন্তু রাত্রি একটার পরে বিশেষ এজেড-৫ বটন আর্কিমফ বা টফটিনভ কেন চালু করেছিলেন, সেটা আজও রহস্যের। এর ফলে সব কটি কন্ট্রোল রড এগিয়ে রিএক্টারের একেবারে মাঝামাঝি চলে আসে। দ্বিতীয় বিস্ফোরনের আগে কোরের তাপ প্রায় ৩০,০০০ মেগাওয়াট হয়ে গিয়েছিল। যার ফলেই চেন রিয়েকশন শুরু হয়। আর গ্রাফাইটের কয়েক টনের ছাদ ফেটে কয়েক মিটার ছিটকে যায়। ছাদে দাউদাউ করে আগুন লেগে যায়।


বিস্ফোরনের পরে ঘরে বাইরে কমিউনিস্ট পার্টি একই রকম গোপনীয়তা বজায় রাখে। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই হাসপাতালের থেকে কয়েকজনকে মস্কোতেও আনা হয়েছিল। যে বয়লার স্যুট ইত্যাদি পরে শ্রমিক কর্মচারীরা ওই হাস্পাতালে এসেছিলেন তা ছিল প্রচন্ড তেজস্ক্রিয় পদার্থে ভরা। সেই হাসপাতাল, সেখানকার ডাক্তার বা নার্স সবাইকেই দু তিন দিনের মধ্যে সরিয়ে ফেলা হয়। শ্রমিকদের পরিহিত সেই জামাকাপড় আজও হাসপাতালের নিচের স্টোর রুমে আছে, ২০১৮ সালেও সেই সব পোষাকের তেজস্ক্রিয়তা বিপদসীমার অনেক উপরে


কিন্তু চেরনবিলে কাউকে কিছু বলা হয়নি। ২৭ তারিখে পূর্বপরিকল্পনা মাফিক ৪/৫ টা বিয়ের রিসেপশন পার্টিও হয়ে যায় টাউনশিপে। কিন্তু মানুষ ক্রমে অসুস্থ হতে থাকে, গা জ্বালা করা, বমি হওয়া শুরু হয়। তারপর রবিবার বিকেল থেকে এলাকা খালি করা হতে থাকে। মানে ঘটনার ৩৮ ঘন্টা এলাকার সাধারন মানুষ, মহিলা, শিশু এই ভীষন তেজিসক্রিয়তার মধ্যে ছিল। একের পর এক বাস আসে, বলা হয় ৩দিনের জন্যই এই ছেড়ে যাওয়া আবার সবাই ফিরে আসবে।
বিদেশের কাছেও সোভিয়েত রাশিয়া কিছু প্রথমে প্রকাশ করে নি। মে দিবসের প্যারেড হল ঠিক মতই। এদিকে চেরনবিলের তেজক্রিয় ধুলো ছড়িয়ে পরতে শুরু করল গোটা উত্তর গোলার্ধে। সুইডেনের একটি পরমানু গবেষনা কেন্দ্রে দেখা গেল অস্বাভাবিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন। প্রথমে তাঁরা ভাবলেন এটা তাদের কেন্দ্রের কোন বিপর্যয়, তারপর প্রকাশ পেল এই স্রোত আসছে রাশিয়া থেকে। সজাগ হল পৃথিবী। উপগ্রহ থেকে ছবি নিয়ে দেখা গেল, রিএক্টারের ছাদ উড়ে গেছে, গনগন করে জ্বলছে গ্রাফাইট কোর। ১৪ মে প্রেসিডেন্ট বললেন দূর্ঘটনায় ৯ জন মারা গেছেন আর আহত ৩৮ জন। আসলে মারা গিয়েছিলেন অন্তত ৯ হাজার মানুষ, ৫ লক্ষ মানুষের নাম আছে ক্ষতিগ্রস্থের তালিকায়।
এরপর কমিউনিস্ট সরকার পরিস্থিতি সামলাতে নামে। বেলানি লিগাসো নামে এক নিউক্লিয়ার কেমিস্ট আর ফুয়েল এন্ড এনার্জি কমিশনের ডেপুটি কমিশনার। প্রথমে আকাশ থেকে বালি, সীসার গুড়ো, ডলোমাইট আর বোরন ফেলা হয় গ্রাফাইটের হার্থে। ৪০টি হেলিকপ্টার দিবারাত্রি কাজ করে। একটি হেলিকপ্টার ধ্বংশও হয়ে যায়। কারন চালকরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলেন।এর মধ্যেই শুরু হল ঢাকা দেওয়ার কাজ।


সেনাবাহিনীর যাদের নেওয়া হল, তাদের নাম দেওয়া হল লিকুইডেটর (Liquidator)। মানে এটা প্রোজেক্ট গুটিয়ে বাড়ি যাবেন। সেনা কর্তারা পরে বলেছেন যে তাদের বছরে ৭৬ রন্টগেন ডোজ খেয়েও কাজ করতে হয়েছে। সেখানে অনুমোদিত মাত্রা ছিল ২৫। রন্টজেন তেজস্ক্রিয়তা মাপার পুরাতন একক। এখন একজন মানুষের দেহের পক্ষে সহনযোগ্য মোট তেজস্ক্রিয়তা মাপতে সিভার্ট ব্যাবহৃত হয়।সেদিন ওই লিকুইডেটররা কি পরিস্থিতিতে কাজ করাছিলেন তা বোঝা দরকার। ভারতে এটোমিক এনার্জি রেগুলেটরি বডি আর্ন্তজাতিক নিয়ম মেনে বাৎসরিক ৩০ মিলি সির্ভাট পর্যন্ত পরমানু কেন্দ্রের কর্মীদের জন্য অনুমোদন করেন। ১ রন্টজেন মানে প্রায় ৯ মিলি সির্ভাট। মানে সেই মানুষগুলির বিপদসীমাই তৈরী হয়েছিল আসল বিপদসীমার ৯ গুন ধরে। আর আসলে তারা কাজ করেছেন বিপদসীমার ৩০ গুন বেশী তেজক্রিয়তা শরীরে ধারন করে।
সুপ্রিম সোভিয়েতে এক পলিটব্যুরো সদস্য বলেছিলেন এই কাজে বায়ো-রোবট লাগানো হয়েছে। আসলে তার মানুষ। সেনা বাহিনীর ৩৮০০ জন মানুষ। তারা মারা গেলে রেডিয়েশ্ন, ক্যান্সার কিছু লেখা হত না। মৃত্যুর কারণ থাকত “অকুপেশনাল ডেথ”। কমিউনিস্ট শাসনে মানবাধিকারের বালাই থাকে না। কোন প্রেস, মিডিয়ার অস্তিত্ত্ব থাকে না। তাই সব কিছু করা সম্ভব। ১ অক্টোবর, ১৯৮৬ এমনই ৩ জন বায়ো রোবট চতুর্থ রিএওক্টারের ছাদে উঠে সোভিয়েত ইউনিয়নের লাল পতাকা উড়িয়ে দিল। মানে লিকুইডেসন মিশন শেষ। আর তেজস্কিয়তা নেই। আসলে প্রায় কিছুই সেদিন হয়নি। পরিত্যক্ত চতুর্থ ইউনিট পুরো মাত্রায় তেজস্ক্রিয়তা ছড়াচ্ছিল।ক্ষতিগ্রস্থ হিচ্ছিল মানুষ, জীবজন্তু আর গাছপালা। পাখি, হরিণ কি শিয়াল কাতারা কাতারে মরে পরে থাকত। মাটির ৭ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত পৌছেছে তেজস্ক্রিয়তা।
শেষপর্যন্ত ২০১৭ সালে আওর্ন্তজাতিক সহযোগিতায় তৈরী হল “নিউ সেফ কনফাইনমেন্ট”। গত ১০০ বছরে কমিউনিজমের নামে ১০০ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আগামী ১০০ বছরেও চেরনোবিলের পাপ ধুয়ে ফেলা যাবে না

জিষ্ণু বসু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.