আমি একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষাদিবস বলে মনে করি না। আগেও করতাম না। বাংলাদেশে (Bangladesh) আয়োজকদের পয়সায় গিয়ে, বক্তৃতা মেরে, ভাইজান ভাইজান বলে অসংখ্য মিথ্যে কথার সঙ্গে নিজের লেখা বইটি বাজার করতে যাওয়াকে বাণিজ্য বলে, ভাষা দিবস পালন বোঝায় না। ‘পাতি কবি‘ থেকে ‘জাঁদরেল কবি‘ সবাই তার লেভেলে আগে-পিছে, ‘জয় বাংলা, জয় বাংলা‘ বলে চ্যাঁচান, তারপর ঝুলি থেকে রকমারি তোষণি-কবিতা, পানি-প্রবন্ধ, গোসত-গিগেল উপন্যাস উপুড় করে বসে বাড়ি ফেরেন। সঙ্গে আনেন বাংলাদেশী নানান উপঢৌকন আর খেজুর-পয়সা।
আচ্ছা, ভাষাদিবসে ওরা কাকে ডাকেন? যিনি ভাষা এবং সংস্কৃতিকে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে মনে করেন – তাঁকে? না, যিনি কারণে-অকারণে হিন্দু-বিরোধী গুচ্ছাতিগুচ্ছ বক্তৃতা ও প্যাঁচ-পয়জারের প্রবন্ধ রচনা করে নিজের ধর্মের/গুষ্টির তুষ্টি করেন -তাঁকে? যে পানিতে ওপার বাংলার চিঁড়ে ভিজবে, জনাব তাঁকেই ডাক দেবেন। বরং ওদের পছন্দের কবি-সাহিত্যিকদের একটা তালিকা প্রতি বছর বানালে দেখবেন, হাঁড়িচেঁচে আর তেমন কবিসাহিত্যিক এপার বাংলায় আর অবশিষ্ট নেই।
কেমন আদরযত্ন করেন তারা? আরবি খেজুর খাওয়ান, ফিরনির ভুরভুরে গন্ধে মাতাল করেন,…… তারপর গোস্ত-রুটি নিয়ে সুরাপাত্রে মনোনিবেশ করেন কিনা তারাই বলতে পারবেন (সুবোধ -বিকাশের ধর্মতলায় ‘ধর্মভাঙানো খাবার থালা‘ দেখে মনে হয়েছে ওটা কোনো ব্যাপারই না)। উর্দূ-আরবি বিমিশ্র বাংলাভাষায় কথা বলা, যা হোক – তা হোক বই লেখা, নেট দুনিয়ায় ‘আল্লা ম্যাঘ দে/পানী দে‘-তে ভরিয়ে দেওয়া, শব্দভান্ডারে অসংখ্য আরবি-অস্মিতা দেখানোটা আর যাইহোক বঙ্গভাষার প্রতি প্রেম নয়। শত-শত বছরের, কয়েক হাজার বছরের বঙ্গ সংস্কৃতির প্রতি যাদের জেহাদ, তারা বাঙালি নন। কোনোদিন তারা বাঙালি ছিলেন না; আগামী দিনেও তারা বাঙালি হবেন না। ভবিষ্যতে তাদের ভাষাকে ‘বাংলা‘ বলা যাবে কিনা সন্দেহ, চিনতেই পারা যাবে না বাংলা বলে। এখন শুধু এপার বাংলার ‘গর্গ-ল করা হিন্দু বাঙালি’-র মুন্ডু চিবিয়ে বাংলা কপচানোটাই বাকি, যেদিন সব খাওয়া হয়ে যাবে, সব হুজুরে মিলে আরবি-খজ্জুর খাবেন। ওদের বাংলা-প্রেম আসলে মুরগী – বাৎসল্যের সমতুল্য, উট-বাৎসল্যের সমতুল্য। দোষটা আমাদেরও; এপার বাংলার ‘সাহেব-সুবো বাঙালি‘ বাংলা ভাষায় পড়াশোনা করা, কথা বলা, বই লেখাকে ইতর সাধারণের কর্তব্য বলে বিবেচনা করেন; তাই ফাঁকা মাঠে পানি ঢেলে গোল দিয়ে যায় বাংলাদেশ। এখন এটাই দেখার, বুদ্ধজন কবে আগেকার মত আরবি ফার্সী উর্দূ ভাষায় বাক্যালাপ করাকে রাজন্যজনোচিত বলে মনে করেন! সেদিন ‘বাংলা বাঁচাও, বাংলা বাঁচাও‘ বলে চিল চীৎকার দেবেন কী?
ভাবছেন, জিজ্ঞেস করবেন, আমার ভাষা দিবস তাহলে কোনটা? হ্যাঁ আছে, বিশে সেপ্টেম্বর আমার ভাষা দিবস । কারণ বাংলা ভাষাটা পড়তে চেয়ে রাজেশ (Rajesh) আর তাপস (Tapos) প্রথমে উর্দূ খেলো, তারপর গুলি খেলো, তারপর সরকারি উদাসীনতা খেলো।