কোনও রাজনৈতিক নেতার হাস্যকর অবৈজ্ঞানিক দাবি নয়, আসিরিয়ায় পাওয়া ৬৬০ বছরের পুরনো সিলমোহরে সৌরঝড়ের কথা লক্ষণ উল্লেখ করা আছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। সাম্প্রতিক এক গবেষণা ও বিশ্লেষণের পর এই এই তথ্য তাঁরা জেনেছেন। যে সিলমোহর বা ট্যাবলেটে এই তথ্য তাঁরা পেয়েছেন, তার স্কেচও তাঁরা প্রকাশ করেছেন।
উনিশ শতকের গোড়ায় সাবেক মেসোপোটেমিয়া (মোটামুটি ভাবে বর্তমান ইরাক) থেকে এক হাজারের বেশি ট্যাবলেট পান পুরাতত্ত্ববিদরা, সেগুলি সবই আসিরিয়া সাম্রাজ্যের সময়কার। এই সব ট্যাবলেটে বিভিন্ন চুক্তি, গল্প প্রভৃতি ছিল। এমনকি গিলগমেশের যে কাব্য এখন বিখ্যাত হয়েছে, তাও পাওয়া গিয়েছিল ওই ট্যাবলেটগুলির মধ্যেই। ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেক কথাও।
জ্যোতির্বিজ্ঞান মানে সেই সময়ে গ্রহ-নক্ষত্র সম্বন্ধে ধারণা, ধূমকেতু, উল্কা প্রভৃতির পাশাপাশি নানা রকম প্রাকৃতিক লক্ষণ ও অশুভ ইঙ্গিতের কথাও লেখা ছিল সেই সব ট্যাবলেটে। তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। সেখানেই সম্প্রতি একটি বিষয় গবেষকদের অবাক করেছে। জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত ট্যাবলেটগুলি পরীক্ষা করে তাঁরা দেখেছেন, সেখানে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা জুড়ে নিয়ে তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ‘আকাশে উজ্জ্বল লালাভ এক দৃশ্য’ আর তা ঘটেছে সূর্যের কোনও কণার সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের ক্রিয়ার ফলে।
এক জায়গায় লাল জ্যোতি ও আরেক জায়গায় লাল মেঘ-এর যে উল্লেখ তাঁরা পেয়েছেন, এবং তৃতীয় একটি ট্যাবলেটে লালে ঢাকা আকাশ-এর যে কথা তাঁরা পেয়েছেন, তা যোগ করেই সৌরঝড়ের কথা জেনেছেন বিজ্ঞানীরা। সে কথা সম্প্রতি দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স-এ প্রকাশিত হয়েছে। ওই ট্যাবলেটগুলির সময়কাল ৬৭৯ থেকে ৬৫৫ খ্রিস্টপূর্ব, ৬৭৭-৬৬৬ খ্রিস্টপূর্ব ও ৬৭৯-৬৭০ খ্রিস্টপূর্ব।
প্রাচীন এই সব ট্যাবলেটের অনেকগুলিতেই কোনও তারিখ উল্লেখ করা নেই। তবে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাজের সময়কাল জানেন বর্তমান গবেষকরা। তাই সেই ট্যাবলেটের বয়স হিসাব করতে সমস্যা হয়নি গবেষকদের।
গবেষকরা মনে করছেন, সৌরঝড়ের একেবারে দক্ষিণ প্রান্ত দেখেছিলেন মেসোপটেমিয়ার জ্যোতির্বিদরা, এখন যে দৃশ্য নর্থ ক্যালোলিনা থেকে দেখা যায়, সেই দৃশ্য। খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকে চৌম্বকক্ষেত্রের উত্তরমেরু অধুনা পশ্চিম এশিয়ার কাছাকাছি ছিল বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। তাই আসিরীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সৌরঝড়ের কথাই উল্লেখ করেছেন ওই ট্যাবলেটগুলিতে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, সৌরঝড়ের কথা যে সব জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে আসিরীয় এই ট্যাবলেটগুলিই প্রাচীনতম।
সেই সময়ে গাছের বার্ষিক বলয় ও অন্য জিনিস পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকে সৌরঝড়ের তীব্রতা অনেক বেশি ছিল। ৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে সৌরঝড়ের যে উল্লেখ তাঁরা পেয়েছেন, তার চেয়ে তো বটেই।
এখন বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের সাহায্যে আমরা অনেক কার্যকারণই সুস্পষ্ট ভাবে জানতে পারি, যা সেই সময় সম্ভব ছিল না। তাই ওই ট্যাবলেটে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা নিশ্চিত ভাবে অশুভ ইঙ্গিতই ছিল সেই সময়ের মানুষের কাছে।