মহামারীর প্রকোপে সারা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত তাই এই বছর ১৫ তম ইউ - ইন্ডিয়া সম্মেলন প্রযুক্তির সাহায্যে ভার্চুয়াল ভাবেই অনুষ্ঠিত হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এই সম্মেলন এই বছর মার্চ মাসে ব্রাসেলসে হবার কথা ছিল।২০১৭ সালে এই সম্মেলন দিল্লিতে হয় এবং ২০১৬ সালে ব্রাসেলসে ,যা ভারত -ইউ সম্পর্ক এবং বানিজ্যিক বন্ধনের রাস্তা আরো বিস্তার করার সাহায্য করে ।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর ইউ ভারতের জন্য বানিজ্যিক স্তরে দ্বিতীয় স্থানে ।তাইজন্য এই সম্পর্ক এতো গুরুত্বপূর্ণ । ইউর জন্ম ১৯৫২ সালে , মোট ছয় দেশ নিয়ে -জার্মানি , ফ্রান্স, ইতালি, বেলগিয়াম , নেদারল্যান্ডস এবং লুক্সেমবার্গ ।তারা একসাথে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ -কইলা এবং লোহা রক্ষা করতে তৈরি করে ইউরোপীয়ান কোল অ্যান্ড স্টীল কমিউনিটি ।১৯৫৭ সালে এটি হয় ইউরোপীয়ান ইকোনমিক কমিউনিটি অর্থাৎ ইইসি (EEC) ।১৯৭৩ সালে যোগ দিল ইউকে ,(UK), আয়ারল্যান্ড এবং ডেনমার্ক , সদস্য সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ এবং ইইসি (EEC) থেকে হয় ইউরোপীয়ান কমন মার্কেট (ECM) . ১৯৯৩ সালে মাস্ট্রিক্ট চুক্তি হয় , কমিউনিটি থেকে হোয় উনিয়ন ।আমরা এটিকে বলতে পারি অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বাড়ানোর কাঠামো । সীমাহীন বানিজ্যিক এবং সীমাহীন যাত্রা ,এই দুই মূল কারণের জন্যই ইউ নিজেদের মধ্যে এবং বিশ্বের দরবারে এক বৃহৎ পরিবার তৈরি করতে পেরেছে । ইউতে বেশ কিছু জটিলতা আছে ।বেশ কিছু দেশ ভিসা চুক্তিতে রয়েছে কিন্তু সেখানে আবার মুদ্রা বিষয়ক সমস্যা রয়েছে ।১ লা জানুয়ারি,২০০২ সালের মধ্যরাতে ,২৭ টি দেশের মধ্যে ১৯ টি দেশে ইউরোর প্রবেশ একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়।ইউ সদস্যপদের চাহিদা এত বেড়ে যায় যে আর কিছু বছরের মধ্যে সদস্য সংখ্যা গিয়ে দাড়ায় ২৮ যেটি ব্রেক্সিট -এর পর হয় ২৭। ব্রেক্সিট ভারতের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে । ব্রিটেন তার নিজস্ব মার্কেট যখন হারাচ্ছে ইউ -র স্থূল জাতীয় সম্পদ অর্থাৎ জিডিপি বেড়ে ১৭ শতাংশ ।এই দুটোই বড় গুরুত্বপূর্ণ সংকেত এবং সুযোগ।এই সম্মেলন আরো প্রাসঙ্গিক মহামারীর পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারতকে আত্মনির্ভর করার যে দূরদর্শী ভাবনা সেটিকে আরো মজবুত করে তুলবে।শারীরিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে গোটা বিশ্ব যেমন মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত তেমনি আবার এর বিপরীতে প্রচুর নতুন দিশার সূচনা দেখা গেছে ।নতুন নিয়মের মধ্যে নতুন সুযোগের সাথে সাথে মানবতার বন্ধনে সারা পৃথিবীকে নতুন সঙ্কেত দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কিছু ছোট লক্ষের পরীক্ষা , যেমন অর্থনীতির পুনরুত্থান আছে তেমনই কিছু বড় লক্ষের দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব ,যেমন পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয় এবং নবিকরণ শক্তির ব্যবহার । এই মহামারীর হাত থেকে মুক্ত হতে যৌথ পরিকাঠামো এবং প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে দ্রুত ভ্যাকসিনের প্রগতি নিয়ে গবেষণা এবং ভেষজ উপাদান কেন্দ্রগুলোর সহযোগিতা দুই দিকেই খুব প্রয়োজন। সম্মেলনের যুগ্ম বিবৃতিতে খুব আশাবাদী ,বাস্তব এবং নিশ্চিত ভাব লক্ষ্য করা যায় ।ভারতের ১৪.৪ শতাংশ রপ্তানি ইউর সঙ্গে হয় ,তারা ভারতে ব্যায় করে প্রায় ১০ বিলিয়ন ইউরোপীয়ান ডলার এবং ২০১৯ -২০ সালে ২২ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগ অর্থাৎ এফডিআই হয়।প্রায় ৪৫০০ ইউর কর্মসংস্থান প্রায় ৬০ লক্ষ ভারতবাসীর কর্মক্ষেত্র । আর একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয় ,২০২৫ সাল অবধি এক বিশেষ প্রগতির রাস্তা তৈরি করা হয়েছে যেখানে রয়েছে সুরক্ষা ,বিদেশ নীতি , মানবাধিকার ,ব্যাবসা এবং বাণিজ্য ,পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয় , প্রযুক্তি বিদ্যা , মহাকাশ বিজ্ঞান ,স্বাস্থ্য এবং খাদ্য সুরক্ষা , গবেষণা এবং নতুন প্রবর্তন , আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ,ভারত এবং প্রশান্ত মহাসাগরে সার্বিক প্রগতি , বিশ্বে অর্থনৈতিক পুনরুত্থান , কর্মসংস্থান এবং সামাজিক উন্নতি ,শিক্ষা এবং সংস্কৃতি এবং সামগ্রিক দিক থেকে পূর্ণ রূপে ভারত -ইউ সম্পর্ককে আরো শক্ত করে তুলবে । ব্যাবসা এবং বানিজ্যিক বিনিয়োগের দিক থেকে ২০২৫ সাল অবধি যে নকশা পরিকল্পনা করা হয়েছে তাতে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পে (SME) বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। বর্তমান বানিজ্যিক কিছু জটিলতা এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রের সুবিধার্থে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যাতে বিশ্বের দরবারে ইউ -ভারত সম্পর্ক এক দৃষ্টান্তমূলক মান লাভ করে। এই পরিকল্পিত রাস্তা ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা , বৈজ্ঞানিক এবং গবেষণার ক্ষেত্রে অনেক সহায়তা করবে ,যাতে বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মার্কেটের চাহিদা পূরণ হয় ওষুধ গবেষণাকে ক্ষেত্রে গবেষণা এবং ওষুধের মান এবং গুণ এই দুই বজায় থাকে ।দ্বিপাক্ষিক ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস (IPR) আলোচনায় বিভিন্ন দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যা উভয় দেশগুলির ব্যবসার মান আরও উচ্চতর করে তুলবে ।২০১৭ সালে গঠিত আইএফএম (IFM) এই সম্পর্ককে আরও মজবুত করে তুলবে ।
এই সম্মেলনের সফলতা আমরা যুগ্ম এবং আশাবাদী বিবৃতি থেকেই অনুমান করতে পারি ।কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে অনেক বিষয়গুলোর সমাধানের সূত্র পাওয়া খুব মুশকিল হয় এবং তাই সেগুলির ক্ষেত্রে যুগ্ম এবং বিস্তীর্ণ বিবৃতও থাকেনা । সম্প্রতি এই ঘটনাটি ঘটেছে এক দেশের সাথে । সম্মেলনের সূত্র ধরে এইবার যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তাতে বলা হয় ইউ এবং ভারতের এক বৃহত্তর সম্পর্ক ।একদিকে ২৭ টি গণতান্ত্রিক দেশ এবং অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র ।ভারত এমন এক দেশ যার বুকে ফুটে ওঠে নানা জাতি ,নানা ধর্ম ,নানা ভাষা এবং সংস্কৃতি ,ঠিক তেমনি ইউ , তফাৎ একটাই সেখানে ২৭ টি দেশ । ইউ এবং ভারতের একে অপরের মধ্যে যা বানিজ্যিক বা অর্থনীতি বিষয় চুক্তি হয় , তা সার্বিক দিক থেকে এক বড় প্রভাব ফেলে গোটা বিশ্বের উপর ।তাই এই ইউ -ভারত সম্পর্ককে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মানা হয় এবং এটিকে মহামারীর পরে ভারতবর্ষে অর্থনৈতিক পুনরুত্থান এর একটি বিশেষ চাবিকাঠি বলা যেতে পারে যার আশ্বাস এক বৃহৎ বিনিয়োগের ক্ষেত্র এবং ভারতের নির্মাণ শিল্পের বৃদ্ধি এবং সঞ্চার ।