অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জ়িল্যান্ডে চলছে মেয়েদের বিশ্বকাপ ফুটবল। প্রায় প্রতিদিনই দর্শকসংখ্যা নজির ভেঙে দিচ্ছে। মেয়েদের ফুটবল নিয়ে আগ্রহও বেড়েছে অনেকটাই। এ বারই বিশ্বকাপে দলের সংখ্যা ২৪ থেকে ৩২ হয়েছে। কিন্তু সেই বিশ্বকাপে ভারত কোথায়? প্রশ্নটা উঠছেই। কারণ মেয়েদের ফুটবলে ভারতের অবস্থান ছেলেদের থেকে অনেকটাই ভাল। ফিফা ক্রমতালিকায় ভারতের মহিলা দল এখন ৬০ নম্বরে। তাদের থেকে নীচে থাকা মরক্কো, জ়াম্বিয়া বিশ্বকাপে খেলছে। একটু চেষ্টা করলে ভারতেরও বিশ্বকাপে খেলা অসম্ভব নয়। কিন্তু দায়সারা মানসিকতা, সঠিক পরিকাঠামো না থাকা, প্রচারের অভাব— ইত্যাদি নানা কারণে মেয়েদের বিশ্বকাপ থেকে বহু যোজন দূরে ভারত। স্যাম কের, মেগান রাপিনোরা যেখানে বিশ্বকাপ মাতাচ্ছেন, সেখানে ভারতের মহিলা ফুটবলারদের টিভিতে বসেই তা দেখতে হচ্ছে।
কী ভাবে মহিলাদের বিশ্বকাপে যেতে পারত ভারত? প্রক্রিয়া খুব সহজ। ছেলেদের যেখানে আলাদা করে যোগ্যতা অর্জন পর্ব খেলতে হয়, মেয়েদের এশিয়ান কাপই বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জনের পথ। এশিয়া থেকে ছ’টি দলের বিশ্বকাপে যাওয়ার জায়গা রয়েছে। এশিয়ান কাপের সেমিফাইনালে উঠলেই সরাসরি বিশ্বকাপের টিকিট মিলবে। এমনকি কোয়ার্টার ফাইনালে হারলেও প্লে-অফে খেলে বিশ্বকাপে যাওয়া যাবে। ফলে জটিল সমীকরণ নেই কোথাও। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হল, গত বার মেয়েদের এশিয়ান কাপ হয়েছিল ভারতেই। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন বেশ কঠিন হলেও একেবারে অসম্ভব ছিল না। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় দলই নামাতে পারেনি ভারত! অবিশ্বাস্য শোনালেও এটাই সত্যি। প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচে নামার আগে ১৩ জন ফুটবলারই ছিল না ভারতের। দলের প্রায় প্রত্যেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ন্যুনতম ১৩ জন না হলে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে মাঠে নামার অনুমতি নেই। ফলে ভারতকে ম্যাচটি ছেড়ে দিতে হয়। এমনকি প্রতিযোগিতা থেকেও নাম তুলে নিতে হয়।
গত বছরের এই প্রতিযোগিতায় খেলতে না পারার পিছনে তবু করোনার দোহাই ছিল। কিন্তু তার আগে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা কাজে লাগানো যায়নি। একমাত্র কারণ, সঠিক মানের ফুটবলার তুলে আনতে না পারা। অতীতে শান্তি মল্লিক, সুজাতা করের মতো ফুটবলারেরা জাতীয় দলের হয়ে খেললেও মাঝের প্রায় ২০-২৫ বছর মেয়েদের ফুটবল ভারতে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। না ছিল জাতীয় স্তরের কোনও প্রতিযোগিতা, না ছিল রাজ্যগুলির কোনও উদ্যোগ। ফুটবলকে আঁকড়ে ধরে যে সব মেয়েরা খ্যাতির স্বপ্ন দেখেছিলেন, অঙ্কুরেই তা বিনাশ হয়ে গিয়েছিল।
ভারতে মেয়েদের ফুটবলের অবস্থাটা ঠিক কী রকম তা জানার আগে গোড়ার কথা জানা প্রয়োজন। ছেলেদের ফুটবলের মতো মেয়েদের ফুটবলে কখনওই সে রকম প্রচার এবং আগ্রহ ছিল না। প্রথম দিকে দেশে মেয়েদের ফুটবল সংস্থা ছিল ডব্লিউএফএফআই। ছেলেদের জন্যে এআইএফএফ থাকলেও মেয়েদের ফুটবল তখন তারা দেখত না। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০-এর গোড়ার দিক পর্যন্ত ভারতে মেয়েদের ফুটবল পরিচালনা করত ডব্লিউএফএফআই। ঠিক যেমন মেয়েদের ক্রিকেটও গোড়ার দিকে বিসিসিআই-এর দায়িত্বে ছিল না, ফুটবলেও তেমনই।
তবে একটা ব্যাপারে মিল ছিল। ছেলেদের ফুটবলের মতো মেয়েদের ফুটবলেও পথিকৃত ছিল বাংলা। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান তখন বেশ উদ্যোগ নিয়ে মেয়েদের জন্যে দল তৈরি করে কলকাতা মহিলা প্রিমিয়ার লিগ খেলা শুরু করে। পরের দিকে ওড়িশা এবং মণিপুরেও মেয়েদের ফুটবল নিয়ে আগ্রহ দেখা দেয়। সেই সময় বাংলার সুজাতা কর এবং আল্পনা শীল জার্মানির একটি ক্লাবে গিয়ে ট্রায়ালও দেন। কিন্তু ওয়ার্ক পারমিট না পাওয়ায় সেই ক্লাবের হয়ে খেলতে পারেননি। এ ছাড়া, চিত্রা গঙ্গাধরণ এশিয়ার অলস্টার দলের হয়ে খেলেছিলেন। কিন্তু বাকি রাজ্যগুলিতে উৎসাহের অভাব তখনও ছিল। বাংলার দুই ক্লাবের ফুটবলারদের নিয়ে জাতীয় দলে সাফল্য পাওয়া স্বাভাবিক ভাবেই সম্ভব ছিল না। তা হয়ওনি।
বর্তমানে ইস্টবেঙ্গলের মহিলা দলের দায়িত্বে থাকা প্রাক্তন ফুটবলার সুজাতা কর আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “মহিলা ফুটবলের উন্নতিতে রাজ্যগুলির গুরুত্ব অপরিসীম। ফুটবলের উন্নতিতে বাংলার সংস্থা বেশ কিছু কাজ করছে। কিন্তু শুধু বাংলা করলে হবে না, গোটা দেশের প্রতিটি রাজ্যে মেয়েদের ফুটবলে জোর দিতে হবে। বাংলায় কন্যাশ্রী কাপ রয়েছে। কিন্তু মেয়েদের আইএফএ শিল্ড কোনও রকমে করা হল। এটা আরও সুষ্ঠ ভাবে আয়োজন করা যেত। মণিপুর যদি অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯ এর মতো বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে পারে, তা হলে বাংলা পারবে না কেন?”
মেয়েদের এশিয়ান কাপ শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। দু’বার ভারত রানার্সও হয়েছে আশির দশকে। কিন্তু তার পরেই ভাটা শুরু হয়। ১৯৯১ সালে ফিফা মেয়েদের ফুটবল বিশ্বকাপ তৈরি করলেও ভারতে তা নিয়ে কোনও উৎসাহ দেখা যায়নি। ভারতীয় ফুটবল কর্তারা বার বার বলেছেন, এশিয়ার মধ্যে সেরা হয়ে ওঠাই তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্যও কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। মেয়েদের ফুটবলে সবচেয়ে খারাপ সময় আসে ২০০৯ সালে। ক্রমাগত খারাপ পারফরম্যান্সের জন্যে সে বছরই ফিফা তাদের ক্রমতালিকা থেকে বাদ দেয় ভারতকে। সেই ঘটনা গোটা দেশে আলোড়ন ফেলে দেওয়ার পর নড়েচড়ে বসে এআইএফএফ। মূলত তাদের উদ্যোগেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে শুরু করা হয় মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। দক্ষিণ এশীয় গেমসেও ভারতের মহিলা দলকে খেলানো হয়।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের একাধিপত্য থাকলেও, বিশ্ব পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় তাদের অপ্রস্তুত হতে হয়েছে একাধিকবার। ২০১৪-র এশিয়ান গেমসে যেমন প্রথম ম্যাচে মলদ্বীপকে ১৫ গোলে হারালেও, পরের দুটি ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইল্যান্ডের কাছে ১০ গোল করে খায় তারা। ২০১৮ সালে স্পেনে কোটিফ প্রতিযোগিতা খেলতে গিয়েও প্রতিটি ম্যাচে হারে ভারত।
ভারতের প্রাক্তন ফুটবলার শান্তি মল্লিক দোষ দিচ্ছেন ফেডারেশন কর্তাদের উপরেই। বললেন, “মেয়েদের ফুটবল আজ অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারত। কিন্তু আমরাই হয়তো সেটা চাইছি না। সংস্থার মাথায় যাঁরা বসে রয়েছেন তাঁদের কি মেয়েদের ফুটবল নিয়ে কোনও আগ্রহ রয়েছে? কোনও মতে একটা লিগ চলে, যেটা এক মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যায় এবং কেউ নামও জানে না। এ ছাড়া মহিলাদের ফুটবল নিয়ে পরিকল্পিত কোনও উদ্যোগই নেই গোটা দেশে। আমাদের সময়ে আজকের মতো এত ক্লাব ছিল না ঠিকই। কিন্তু কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পথটা সহজ ছিল।”
ভারত থেকে ফিফা ক্রমতালিকায় নীচে থাকা মরক্কো, জ়াম্বিয়ার মতো দেশও মেয়েদের বিশ্বকাপে খেলে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, বড় দেশগুলিকে চমকেও দিচ্ছে। সেখানে ভারত কেন পারছে না? শান্তির উত্তর, “ওরা যতই র্যাঙ্কিংয়ে নীচে থাকুক, একটা সিস্টেম রয়েছে। আমাদের এখানে সে ভাবে না রয়েছে অ্যাকাডেমি, না রয়েছে পরিকাঠামো। অনেক ক্লাব নিজেদের উদ্যোগে মহিলা ফুটবল চালাচ্ছে। কিন্তু যারা সেই ক্লাবে খেলে না তাদের কী হবে? আমাদের মতো প্রাক্তন ফুটবলারেরা বসে রয়েছে। তাদের এক বারও ডাকা হয় না। কর্তারা ক’বার স্কুলে স্কুলে গিয়ে ফুটবলের প্রচার করেছে? মেয়েদের মধ্যে আগ্রহটা তো তৈরি করতে হবে।”
একই সুর সুজাতার গলাতেও। তিনি বললেন, “মেয়েদের ফুটবলে প্রতিযোগিতার সংখ্যা অনেক বাড়াতে হবে। ছেলেদের ফুটবলে এতগুলো প্রতিযোগিতা থাকলেও মেয়েদের ফুটবলে একটা লিগ ছাড়া আর কিছু নেই। এআইএফএফ-কে অনেক বেশি সক্রিয় হতে হবে। বিদেশের ভাল মানের ফুটবলারেরা যদি এখানে এসে খেলে, তা হলে এখানকার মেয়েরাও বুঝতে পারবে কোথায় ওদের উন্নতির দরকার। আমি মনে করি, মেয়েদের লিগ ছ’মাসের হওয়া উচিত। হোম এবং অ্যাওয়ে ফরম্যাটে খেলা হতে হবে।”
ক্লাবগুলিকে নিয়ে মেয়েদের জাতীয় লিগ শুরু ২০১৬ থেকে। তা-ও অনেক টালবাহানার পরে। প্রফুল পটেলের জমানায় ১০টি দলকে নিয়ে শুরু হয় লিগ। জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পর ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়ে। মহারাষ্ট্র থেকে পুণে এফসি, পিফা-সহ কিছু ক্লাব মেয়েদের দল তৈরি করে। ওড়িশা থেকেও উঠে আসে কিছু দল। কিন্তু বাংলার কোনও দল আগ্রহ দেখায়নি। গত বছর ইস্টবেঙ্গল জাতীয় লিগে খেললেও বা মহমেডান কন্যাশ্রী কাপে খেললেও মোহনবাগানের এখনও কোনও মেয়েদের দল তৈরি নেই।
এ তো গেল জাতীয় স্তরের ফুটবল। ফুটবলের উন্নতিতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল রাজ্য লিগ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে মোটামুটি মেয়েদের ফুটবলের চল রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলে গোয়া, মহারাষ্ট্র, দক্ষিণাঞ্চলে কেরল, তামিলনাড়ুতে মেয়েদের লিগ রয়েছে। কিন্তু অন্য রাজ্যে মেয়েদের রাজ্যস্তরের লিগই নেই। স্বাভাবিক ভাবেই কোনও ফুটবলার উঠে আসছেন না সেই অঞ্চল থেকে।
বাংলা সেখানে খুঁড়িয়ে হলেও কিছুটা এগিয়েছে। মহিলাদের কলকাতা লিগের নতুন নাম দেওয়া হয়েছে কন্যাশ্রী কাপ। সেখানে দলের সংখ্যা ২২ থেকে বেড়ে ৩২ হয়েছে। মোহনবাগান না খেললেও ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান তো রয়েছেই, শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব, রেনবো, চাঁদনি স্পোর্টিংয়ের মতো ছোট ক্লাবগুলিও মেয়েদের দল তৈরি করে খেলতে নামাচ্ছে। জেলায় জেলায় গিয়ে ফুটবলার তুলে আনার প্রক্রিয়াও বেড়েছে। মেয়েদের ফুটবল নিয়ে কাজ করা ডোনা মাইতি বললেন, “জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ এবং খেলো ইন্ডিয়াতে বাংলার মেয়েরা ভালই খেলেছে। অনেক মেয়েই এখন ফুটবল খেলতে এগিয়ে আসছে।”
কিন্তু তা দিয়ে বিশ্বকাপে খেলার মতো স্বপ্ন সফল হবে? অনির্বাণ মনে করেন, বেশ কিছু বিষয়ে সর্বভারতীয় সংস্থাকেও নজর দিতে হবে। বলেছেন, “প্রথমত, শহরে মেয়েদের ফুটবলকে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। যে হেতু গ্রামের মেয়েরা বেশি ফুটবল খেলে, তাই সেখানে জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু শহরের মেয়েদের মধ্যে আগ্রহ খুব একটা নেই। এখানে যাতে মেয়েদের ফুটবল ভাল ভাবে প্রচার পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, অনেক কম বয়স থেকে মেয়ে ফুটবলার খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদের লালন-পালনের ব্যবস্থা করতে। তারা যাতে ভাল অ্যাকাডেমিতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারে, সেটা দেখা অন্যতম দায়িত্ব। যে কোনও খেলায় মেয়েদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থাকে। পরিচ্ছন্ন শৌচাগার, পোশাক বদলানোর জায়গার মতো সাধারণ সুযোগ-সুবিধাগুলো যদি ওরা না পায়, তা হলে ফুটবল খেলতে আসবে কেন? তৃতীয়ত, মানসিকতার বদল। গ্রামের মেয়েদের মধ্যে প্রতিভা থাকলেও ওখানে কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়া এবং আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। শহরে কোনও অ্যাকাডেমি বা আবাসিক শিবিরে ওদের এনে রাখলে এবং পরিবারকে বোঝালে এই বিষয়গুলো এড়ানো যাবে।”
ছেলেদের থেকে মেয়েদের ফুটবল কতটা আলাদা তার উদাহরণ প্রচুর রয়েছে। আইএসএল যেখানে ন’মাস ধরে চলে এবং কোটি কোটি টাকা দিয়ে দল গড়া হয়, সেখানে মেয়েদের জাতীয় লিগের মেয়াদ এক মাসের মতো। দল তৈরির ক্ষেত্রেও বিরাট কোনও অর্থ বিনিয়োগ করা হয় না। স্থানীয় বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ছাড়া অন্য দেশের ফুটবলারদের খেলতে নিয়ে আসার ক্ষমতা কোনও ক্লাবেরই নেই। অংশগ্রহণকারী দলগুলির মানেও বৈষম্য রয়েছে। কোনও দল বেশি টাকা বিনিয়োগ করায় সাফল্য পাচ্ছে। আবার কোনও দল কোনও মতে দল গড়ে খেলতে নামায় পয়েন্ট তালিকায় সবার শেষে শেষ করছে।
শুধু তাই নয়, ছেলেদের ফুটবলে আইএসএল ছাড়াও, আই লিগের দুটি ডিভিশন, ডুরান্ড কাপ, সুপার কাপ এবং বিভিন্ন বয়সভিত্তিক জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা রয়েছে। মেয়েদের ফুটবলে স্রেফ আই লিগের দু’টি ডিভিশন এবং জুনিয়র ও সাব-জুনিয়র পর্যায়ের প্রতিযোগিতা রয়েছে। ছেলেদের ফুটবলে স্কুলস্তরে সুব্রত কাপের মতো প্রতিযোগিতা থাকলেও মেয়েদের ফুটবলে তা নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোনও খেলাধুলোয় সেরা হতে গেলে শুরুটা করতে হয় স্কুলস্তর থেকেই। না হলে পরের দিকে বাকিদের সঙ্গে তাল মেলানো যায় না। ভারতে সেটারও অভাব রয়েছে।
এ বিষয়ে আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন, স্কুল ফুটবল আয়োজন করার মতো পরিকাঠামো তাঁদের নেই। কিন্তু নিজেদের সাধ্যমতো মহিলাদের ফুটবলের উন্নতির চেষ্টা করে চলেছেন তাঁরা। অনির্বাণের কথায়, “আমরা কন্যাশ্রী কাপ আগেই চালু করেছি। এ বছর আইএফএ শিল্ড জেলায় আয়োজন করেছি। আগামী দিনে জেলাস্তরে লিগ শুরু করার পরিকল্পনা চলছে। সরকার পাশে দাঁড়ালে সেটাও সফল ভাবে করতে পারব। কন্যাশ্রী কাপে ক্লাবগুলোর হয়ে খেলার জন্য প্রচুর মহিলা ফুটবলার আগ্রহ দেখাচ্ছে, যেটা ইতিবাচক আমাদের কাছে।”
তবে প্রদীপের নীচেও যেমন আলো থাকে, মেয়েদের ফুটবলেও তা রয়েছে। সাম্প্রতিক কালে মেয়েদের ফুটবলে সবচেয়ে উজ্জ্বল দুই নাম বালা দেবী এবং অদিতি চৌহান। ছোটবেলায় ক্যারাটে এবং বাস্কেটবল খেলা অদিতি পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন লবরো বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানকার মহিলা দলের হয়ে খেলার পর ওয়েস্ট হ্যাম মহিলা দলের হয়েও খেলেছেন। পরে দেশে ফিরে গোকুলম কেরলে যোগ দেন। ইংল্যান্ডে খেলা তিনিই ভারতের প্রথম মহিলা ফুটবলার। অন্য দিকে, ২০২০ সালে স্কটল্যান্ডের ক্লাব রেঞ্জার্সে যোগ দেন বালা দেবী। ইউরোপে মেয়েদের পেশাদার লিগে খেলা প্রথম ভারতীয় ফুটবলার তিনিই। রেঞ্জার্সের হয়ে মাদারওয়েলের বিরুদ্ধে গোলও করেছেন। পায়ের চোটে মরসুম থেকে ছিটকে যান। পরে ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিছেদ হয়। না হলে আন্তর্জাতিক স্তরে তাঁর কেরিয়ার আরও দীর্ঘায়িত হতেই পারত।
ফলে প্রতিভা যে নেই তা নয়। কিন্তু সঠিক লালন-পালন এবং পরিকল্পনা থাকলে উন্নতি সম্ভব। সেটা কবে হবে সেই উত্তর অবশ্য কারওরই জানা নেই।