কয়েক ঘণ্টার কলকাতা সফর সেরে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সোমবার দিল্লি থেকে কলকাতায় এসে বিজেপির কাউন্সিলর সজল ঘোষের পুজো উদ্বোধন করে ফের রাজধানীতে ফিরে গেলেন তিনি। কিন্তু কোথাও তাঁর সঙ্গে দেখা গেল না রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে। সংসদীয় রীতি (প্রোটোকল) অনুযায়ী দেশের প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোনও রাজ্যে গেলে সেই রাজ্যের রাজ্যপাল বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। দ্বিতীয়ার বিকালে কলকাতা বিমানবন্দরেও দেখা যায়নি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে।
অমিত-সফরের সময় রাজ্যপাল সেই সময়ে কোথায় ছিলেন?
রাজভবনেই ছিলেন বোস। যে সময়ে অমিত কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন, সেই সময়ে রাজভবনে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সঙ্গে ‘ব্যক্তিগত’ সাক্ষাৎ করছিলেন রাজ্যপাল। যা নিয়ে বিবিধ জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি তাঁর সফরে রাজ্যপালকে ‘এড়িয়ে’ গেলেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন, রাজ্যপাল কি সেই কারণেই শাহের শহরে উপস্থিতির সময় কুণালকে রাজভবনে সময় দিলেন?
কোনও তরফেই এর কোনও ‘আনুষ্ঠানিক’ জবাব মেলেনি। মেলেনি বলেই এ নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।
কুণালকে কেন রাজভবনে সময় দিলেন রাজ্যপাল? প্রায় ৩৫ মিনিটের সাক্ষাৎ সেরে বেরিয়ে কুণাল জানিয়েছেন, ওই সাক্ষাৎ ছিল ব্যক্তিগত। অতীতে রাজ্যপাল যখনই রাজ্য সরকারের কাজের পথে ‘বাধা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন, শাসকদলের মুখপাত্র হিসেবে তিনি তাঁর সমালোচনা করেছেন। ভবিষ্যতেও করবেন। কিন্তু সোমবারের সাক্ষাৎ ছিল ব্যক্তিগত।
রাজ্যপাল কেরলের ভূমিপুত্র। ‘ঈশ্বরের আপন দেশ’-এর প্রধান উৎসব ওনাম। ওনামের সময়ে রাজ্যপাল কুণালকে মিষ্টি এবং উপহার পাঠিয়েছিলেন। তারই প্রেক্ষিতে বাঙালি কুণাল তাঁর রাজ্যের প্রধান উৎসব দুর্গাপুজোয় উপহার দিতে চেয়ে রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছিলেন। সেই কারণেই রাজ্যপাল কুণালকে রাজভবনে আহ্বান করেন। কিন্তু জল্পনার বিষয় অন্য। তা হল, কুণালকে রাজ্যপাল তখনই সময় দিয়েছেন, যখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কলকাতায় থাকছেন। প্রসঙ্গত, রাজ্যপালের বিমানবন্দরে না-যাওয়া নিয়ে রাজ্য বিজেপির অন্দরেও আলোচনা রয়েছে। অনেকে বলছেন, রাজ্যপাল এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরস্পরকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। যদিও কারণ স্পষ্ট নয়।
প্রসঙ্গত, রবিবার এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন টুইটার) কুণালের জোড়া পোস্ট নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে দিনভর আলোচনা চলেছে। প্রথম পোস্টে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ কুণাল লেখেন, ‘‘রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাস্থল দিল্লি। অভিযোগকারিণীর চেন্নাই, কোচি, দিল্লিতে যাতায়াত আছে। অভিযুক্ত সাংবিধানিক রক্ষাকবচে আছেন। নগরপাল অভিযোগের চিঠি-সহ ফাইল নবান্ন সচিবালয়ে পাঠিয়েছেন। আপাতত এইটুকু।’’ পরের পোস্টে বিকেলের দিকে কুণাল লিখেছিলেন, ‘‘রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় এক পদাধিকারীর বিরুদ্ধে যিনি ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে চিঠি দিয়েছেন, তিনি একজন কৃতী মহিলা, ওড়িশি নৃত্যের বিশিষ্ট শিল্পী। মালয়ালম ভাষাতেও পারদর্শী। অভিযুক্ত ব্যক্তির পদ সাংবিধানিক ভাবে সুরক্ষিত। তাই পুলিশি পদক্ষেপে আইনি বাধা। আপাতত এটুকুই।’’
সেই ব্যক্তি কে, কী তাঁর পরিচয়, কী ধরনের সাংবিধানিক রক্ষাকবচ তাঁর রয়েছে— এ সবের কিছুই খোলসা করেননি কুণাল। তবে সেই থেকেই বিবিধ জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের রাজনীতিতে। শাসকদল তো বটেই, মুখ্য বিরোধীদল বিজেপির মধ্যেও জোর আলোচনা শুরু হয়। তার পরদিনই শাহের সফরের সময়ে রাজ্যপালের সঙ্গে কুণালের সাক্ষাৎ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই অনেকে মনে করছেন। কুণাল অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি ওঁকে উপহার দেওয়ার জন্য চিঠি লিখে সময় চেয়েছিলাম। উনি আমায় সময় দিয়েছেন। আমি এর বেশি কিছু বলতে পারব না। ওঁর সঙ্গে আমার খুবই হার্দ্য পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। কী কী আলোচনা হয়েছে, আমি তা সর্বসমক্ষে বলছি না।’’