কালী কেন উলঙ্গিনী? সব দেবতা বসন পরলেও কালিকা দিগম্বরী হওয়ার কারণ বলা রয়েছে শাস্ত্রেই

বিখ্যাত জনপ্রিয় গানের কথা সবার জানা। ‘বসন পরো মা, বসন পরো মা…’ গানে ভক্তের আর্জি সত্ত্বেও দেবী কালী দিগম্বরী। তিনি উলঙ্গিনী। এ সম্পর্কে সনাতন ধর্মে অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে। শাস্ত্রেও নানা কথার উল্লেখ দেখা যায়।

দেবী কালীর নানা রূপের সন্ধান পাওয়া যায়। দক্ষিণাকালী, ভদ্রকালী, সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী— এমন অনেক নামেই তাঁর পূজা হয়। এর মধ্যে দক্ষিণাকালী রূপই বাংলায় বেশি মাত্রায় পুজো পায়। এই রূপের মূর্তিতে দেবীর এক হাতে ছিন্ন নরমুণ্ড ও খড়্গ। অন্য হাতে বরাভয়। দেবীর গাত্রবর্ণ মেঘের ন্যায় এবং তিনি দিগম্বরী। কেন এই কালী মূর্তি নগ্ন?

বলা হয়, দেবী কালী আদিশক্তি বা আদ্যাশক্তি। তিনি কাল বা সময়ের থেকেও উচ্চতর। কালের সীমানা পার করেছেন যিনি। সেই অনন্তকে কোনও জাগতিক বস্ত্রের আবরণে আবৃত করা যায় না। দেবী তাই নগ্নিকা। আবার কোনও কোনও মতে বলা হয়ে থাকে, কালী হলেন শক্তির প্রতীক। আর শক্তিকে কোনও বসন বা আচ্ছাদনে আবদ্ধ করা যায় না। তাই নগ্নিকা রূপেই কালীর ধারণা গড়ে উঠেছে।

এই প্রসঙ্গে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ প্রকাশিত ‘দুই দেবী’ গ্রন্থে স্বামী নির্মলানন্দ লিখেছন, ‘‘যিনি সর্বব্যাপিণী বিশ্বমাতা, তাঁর আবরণযোগ্য বসন কই? কোনও কিছুকে আবরিত করতে হলে প্রয়োজন— তদপেক্ষা বৃহত্তর কোনও বস্তুর উপস্থিতি।’’ আবার নবকুমার ভট্টাচার্য তাঁর ‘কালীপুজোর নিয়মকানুন ও জোগাড়’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘‘বাঙালি দীপান্বিতা অমাবস্যায় যে কালীর আরাধনা করে তা দক্ষিণাকালী। দক্ষিণ কথার অর্থ ডান দিক। কালী তাঁর ডান পা সরাসরি শিবের বুকে তুলে দিয়েছেন বলে দেবীর নাম দক্ষিণাকালী। এই কালী আবার নগ্নিকা। আবণ বলতে তাঁর গলায় নরমুণ্ডের মালা। বলা হয়, সৃষ্টি আর ধ্বংসের মাঝে ক্রিয়াশীল যে শক্তি তা সর্ব ব্যাপক এবং কালজয়ী। এই শক্তির জীবন্ত প্রতীক বা রূপ কালীকে আবৃত করার মতন কোনও পরিচ্ছেদ নেই এই জগতে। তাই তিনি দিগম্বরী।’’ আবার অনেকে বলেন, কালীর দিগম্বর রূপ সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয়ের প্রতীক। যোনিদেশ সৃষ্টি, স্তনদ্বয় স্থিতি এবং উন্মুক্ত জিহ্বা প্রলয়ের প্রতীক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.