আরজি কর-কাণ্ডে কেন স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করল সুপ্রিম কোর্ট? ব্যাখ্যা দিলেন প্রধান বিচারপতি

আরজি কর-কাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে মঙ্গলবার মামলার প্রথম শুনানি ছিল। এর আগে কলকাতা হাই কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি চলছিল। হাই কোর্টে মামলা চলাকালীন কেন স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করল শীর্ষ আদালত, মঙ্গলবার সেই ব্যাখ্যা দিলেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ মঙ্গলবার জানায়, “কলকাতার হাসপাতালের এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি ভয়ঙ্কর খুনের মামলাই নয়। এটি গোটা দেশের চিকিৎসকদের নিরাপত্তা ও পদ্ধতিগত সমস্যার বিষয়। সেই কারণে মামলাটি হাই কোর্টে শুনানি শুরু হলেও আমরা সিদ্ধান্ত নিই স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করার।”

উল্লেখ্য, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের বিষয়টিও মঙ্গলবার উঠে আসে সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে। মহিলা চিকিৎসকদের কী কী সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়, সে কথাও উঠে আসে। নিরাপদ কর্মস্থলের জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকলের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের মন্তব্য, “তরুণ চিকিৎসকদের দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে হয়। পুরুষ ও মহিলা চিকিৎসকদের জন্য পৃথক ডিউটি রুম কিংবা বিশ্রাম ঘর নেই। নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে জাতীয় স্তরে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকল তৈরি করতে হবে। যদি মহিলারা নিজেদের কর্মস্থলেই নিরাপদ না থাকেন, তা হলে সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অর্থ কী!”

আরজি কর হাসপাতালের মৃত মহিলা চিকিৎসকের নাম ও ছবি প্রকাশ্যে আসা যে উচিত হয়নি, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার মামলার শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, “মৃতার নাম ও ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, এতে আমরা উদ্বিগ্ন।” যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া নির্যাতিতার নাম প্রকাশ না করার জন্য অতীতের যে রায় রয়েছে, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি।

সুপ্রিম কোর্টের মঙ্গলবারের নির্দেশনামায় উঠে এসেছে, হাসপাতালের মধ্যেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর কী ভাবে বার বার হামলার অভিযোগ উঠে এসেছে। নির্দেশনামায় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, হাসপাতালগুলি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্বক্ষণ কাজ করতে হয়। এমন অবস্থায় চিকিৎসাকেন্দ্রের সর্বত্র মানুষের অবাধ প্রবেশ থাকার ফলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হিংসার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিছু ঘটনা ঘটলে রোগীর পরিজনদের মধ্যে সেটিকে স্বাস্থ্যকর্মীদের গাফিলতি হিসাবে দেখার ধারণা রয়েছে। এই ধরনের অভিযোগগুলি থেকে তা হিংসার আকার ধারণ করে।

উদাহরণ তুলে তুলে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে চিকিৎসকদের উপর হামলার অভিযোগের প্রসঙ্গ। চলতি বছরের মে মাসে বাংলার এক হাসপাতালে দু’জন কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর পরিজনদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। ওই মাসেই প্রসূতিমৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল বিহারের এক হাসপাতালে। হাসপাতাল ভবনের দোতলা থেকে এক নার্সকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। অগস্টেই হায়দরাবাদে এক আবাসিক চিকিৎসক রোগীর পরিজনদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। নির্দেশনামায় আদালত জানিয়েছে, এমন উদাহরণ আরও রয়েছে এবং গোটা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় পদ্ধতিগত সমস্যা রয়েছে। সেই কারণে সুপ্রিম কোর্টকে পদক্ষেপ করতে হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.