জেলা সভাপতি পদটুকু কেবল রয়েছে তাঁর। বীরভূমে আর কোথাও অনুব্রত মণ্ডল নেই! বুধবার অনুব্রতের যাবতীয় সম্পত্তি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) বাজেয়াপ্ত করেছে। ছাড় পেয়েছে কেবল বোলপুরের পৈতৃক বাড়ি। তার পরে অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ-বৃত্তে থাকা অনেকেই বলছেন, জেলা সভাপতির দুঃসময়ে তাঁর দলকেও সে-ভাবে পাশে দেখা যাচ্ছে না। গরু পাচার মামলায় আইনজীবীর খরচ কে বা কারা জোগাবে, তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে এলাকায় ও দলের অন্দরে।
বীরভূম জেলায় তৃণমূলের মিটিং-মিছিল বা প্রায় কোনও কর্মসূচিতেই অনুব্রতের ছবি আজকাল থাকে না। দলের সভায় জেলার কোনও নেতার মুখে তাঁর নামও শোনা যায় না। সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতেও অনুব্রতের ছবি দেখা যায়নি। অভিষেক অবশ্য ‘অনুব্রত বা সুকন্যাকে গ্রেফতার করা হলে কেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছেলে জয় শাহকে ধরা হবে না’, সে প্রশ্ন তুলেছেন বীরভূমে এসে। ওইটুকুই। অনুব্রত-ঘনিষ্ঠেরা আঁচ পাচ্ছেন, দল আর তাঁদের ‘কেষ্টদা’র পাশে নেই। তাঁদের একাংশের কথায়, “যে লোকটা দলের হয়ে সারা জীবন দিয়ে দিল, আজ তার দুর্দিনে দলকে পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না।”
এরই পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, ইডি-র সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের পরে অনুব্রতের বিপুল আইনি খরচ জোগাবেন কে? বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে এই মুহূর্তে আসানসোল আদালত, কলকাতা হাই কোর্ট, দিল্লির আদালতে অনুব্রতের একাধিক মামলা চলছে। সম্প্রতি এর সঙ্গে দিল্লি আদালতে যুক্ত হয়েছে অনুব্রতের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলের মামলাও। এত দিন আদালতে তাঁদের হয়ে মামলা লড়েছেন নামীদামি আইনজীবীরা। যাঁদের মধ্যে কারও কারও এক দিনের হাজিরা বাবদ পারিশ্রমিক কয়েক লক্ষ টাকা।
বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, “বোঝাই যাচ্ছে, দল অনুব্রতকে ছেঁটে ফেলতে চাইছে। কিন্তু, কেষ্ট মুখ খুললে অনেক কিছু বেরোবে, তাই তাঁর পদটুকু রেখে দিয়েছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, “টাকার ভাগ শেষ পর্যন্ত পৌঁছয়। কিন্তু যখন কেউ বিপদে পড়ে, তখন তার পাশে কেউ থাকে না।” যদিও বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, “বিরোধীদের সব সময় হাউহাউ করে চিৎকার করলে আর যুক্তিহীন ভাবে কথা বললেই চলবে না। তাঁদেরও বুঝতে হবে বিষয়টি বিচারাধীন।” অনুব্রতের মামলার টাকা প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “বিষয়টি আমরা দেখি না। তাই এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।”