কে ফোন করে সেই সিভিক ভলান্টিয়ারকে ডেকেছিলেন হাসপাতালে? কেন যেতে বলেছিলেন? ধন্দে গোয়েন্দারা

সাধারণত সকালে বা সন্ধ্যায়, রাত ৮টা-৯টা পর্যন্ত আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখা যেত তাকে। তবে কয়েক দিন রাত ১২টা পর্যন্তও কলকাতা পুলিশের সেই সিভিক ভলান্টিয়ার আর জি কর হাসপাতালের তল্লাটে থেকেছেন বলে সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে। গত এক বছরে সিভিক ভলান্টিয়ারের মোবাইলের নথির খুঁটিনাটি দেখে এমনই তথ্য উঠে আসছে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি।

খটকা এখানেও! কী এমন ঘটল যে, ৮ অগস্ট মধ্য রাতেরও অনেকটা পরে সিভিক ভলান্টিয়ার হঠাৎ আর জি করে হাজির হল। ওই সিভিক ভলান্টিয়ারেরকে বিশদে জেরা করেও এ বিষয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি বলে সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। ওই সূত্রেই দাবি, তাকে ফোন করে ওখানে যেতে বলা হয়েছিল বলে সে দাবি করছে। কিন্তু কে ফোন করেছিলেন? কেন যেতে বলেছিলেন? এমন অনেক প্রশ্নেরই স্পষ্ট জবাব দেয়নি সে।

সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের মোবাইল ফোনের ‘কল রেকর্ডস’ থেকে জানা যাচ্ছে, ৮ অগস্ট মধ্যরাতে এবং ভোরের দিকে কোনও এক ব্যক্তির সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। তদন্তকারীদের সূত্রে আরও দাবি, শুধু আর জি করে যাওয়ার আগে নয়, সেখান থেকে বেরোনোর সময়েও তার সঙ্গে ওই ব্যক্তির কথা হয় বলে ইঙ্গিত মিলেছে। এমন নানা বিষয়ে নিশ্চিত হতে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করায় সিবিআই। তাতে সে সহযোগিতাও করেছে। এ বার তার নার্কোঅ্যানালিসিস পরীক্ষার জন্যও শুক্রবার শিয়ালদহ কোর্টে আর্জি জানায় সিবিআই। কিন্তু তাতে সেই সিভিক ভলান্টিয়ার রাজি হয়নি বলে আদালত সূত্রের খবর। ফলে অভিযুক্তের নার্কো পরীক্ষার জন্য সিবিআইয়ের আর্জি বিচারক খারিজ করে দেন। তিনি জানান, কারও সম্মতি ছাড়া তাঁর নার্কো পরীক্ষা অসাংবিধানিক।

নার্কো পরীক্ষা বিষয়ে অভিযুক্তের বয়ানও এ দিন আদালতে দ্বিতীয় বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের ঘরে নথিভুক্ত করা হয়। ওই অভিযুক্তের হয়ে কোনও উকিল দাঁড়াতে চাননি। তাঁর হয়ে মামলা লড়েন লিগাল এড ডিফেন্স কাউন্সেলের আইনজীবী। তিনিও অভিযুক্তের নার্কো পরীক্ষায় সায় দেননি। অভিযুক্তের বয়ানে নার্কো পরীক্ষায় অসম্মতির পরে ২০১০ সালে সর্বোচ্চ আদালতে সেলভি বনাম কর্নাটক মামলার নির্দেশের উল্লেখ করে বিচারক সিবিআইয়ের আর্জি খারিজ করেন। তিনি জানান, যাঁর নার্কো পরীক্ষা করা হবে, তাঁর সম্মতি ছাড়া এই পরীক্ষা মানবাধিকার লঙ্ঘন।

সুপ্রিম কোর্টে ১৭ সেপ্টেম্বরের শুনানির আগে সিবিআই সম্ভাব্য সব তথ্যপ্রমাণ জড়ো করার চেষ্টা চালাচ্ছে। অভিযুক্তের সঙ্গে কলকাতা পুলিশের ওয়েলফেয়ার কমিটির মাথাদের (যারা শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত) দহরম-মহরমের নানা প্রমাণ মিলেছে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে খবর। ৮ অগস্ট গভীর রাতে অভিযুক্ত আর জি করে ঢোকার এবং আর জি কর থেকে বেরোনোর আগে কার সঙ্গে কথা হয়েছিল, তা নিয়েও ওই পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে সিবিআই কথা বলেছে বলে সূত্রের খবর। তাতে তদন্তের একটি আলাদা অভিমুখ স্পষ্ট, দাবি তদন্তকারীদের একটি সূত্রের। এ ছাড়া, ৯ অগস্ট সকালে আর জি করের সেমিনার কক্ষের কাছেপিঠের একটি ভিডিয়োও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে তদন্তকারীদের সূত্রের খবর। এ বিষয়ে খোঁজ করতে এ দিনও আর জি করে যায় সিবিআই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.