ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে আন্তর্জাতিক খাদ্য, জ্বালানি এবং অর্থনৈতিক সঙ্কটকে আলাদা করে ইউরোপের সামনে তুলে ধরলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেইসঙ্গে সাফ জানিয়ে দিলেন, ষাট বছর ধরে ভারত রাশিয়া থেকে অস্ত্র এবং জ্বালানি আমদানি করেছে, কারণ, পশ্চিমি দেশগুলি পাশে ছিল না। তারা পাকিস্তানের সামরিক সরকারকেই ঢেলে অস্ত্র সরবরাহ করে গিয়েছে।
ওই দেশগুলি যে নিজেদের সুবিধামতো গণতন্ত্র এবং স্বৈরতন্ত্রকে চিহ্নিত করে এসেছে, এ কথাও সরাসরি জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী।
সব মিলিয়ে নতুন বছরে জি-২০ সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্র হিসেবে বারবার যে প্রশ্ন ও চাপের মুখোমুখি হতে হবে মোদী সরকারকে, তার মোকাবিলা বিদেশমন্ত্রী শুরু করলেন ভিয়েনা থেকেই। সে দেশের একাধিক সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তিনি একের পর একতির ছুড়েছেন ইউরোপকে নিশানা করে। স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, প্রত্যেকটি দেশের নিজস্ব নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক নীতি রয়েছে। অন্য দেশের চাপে তা বদলাবে না। আর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলি তৃতীয় পক্ষ নিরপেক্ষ।
জয়শঙ্করকে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়, জি-২০-র প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইউক্রেনের সাপেক্ষে ভারতের অগ্রাধিকার কী? বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘এটা সহজবোধ্য যে ইউরোপের নজর এখন পুরোপুরি ইউক্রেনের সঙ্ঘাতের দিকে। কিন্তু বিশ্বের বেশিরভাগ অংশে মানুষ উদ্বিগ্ন জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দাম, খাদ্যের সঙ্কট, সারের সঙ্কট নিয়ে। ইউক্রেন যুদ্ধের বাইরেও সঙ্কট রয়েছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলির হতাশা এবং উদ্বেগের খোঁজ অনেকেই রাখে না। জি-২০ তাই বিশ্বের অর্থনৈতিক সমস্যা পর্যালোচনা করবে।’ ভারত যুদ্ধের প্রশ্নে গোড়া থেকেই উদাসীন, এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েবিদেশমন্ত্রী বলেছেন, ‘প্রথম কয়েক মাস আমাদের লক্ষ্য ছিল, ভারতীয় ছাত্রদের নিরাপদে সঙ্ঘাতস্থল থেকে ফিরিয়ে আনা। কিন্তু গোড়া থেকে এটাও আমরা বলছি, ভারত যুদ্ধ এবং হিংসার বিরুদ্ধে। কিন্তু অনেক সময়ে সংবাদমাধ্যম সেটাই শোনে, যেটা তারা শুনতে চায়!আমরা বিশ্বাস করি সংলাপ এবং কূটনীতির পথই সঠিক পথ। মতবিরোধ আলোচনার টেবলে সমাধান করা যায়।’
রাশিয়া এবং চিনের মতো ‘একতন্ত্রী’ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া গণতান্ত্রিক জোটে কেন ভারত যোগ দিচ্ছে না, যেখানে ভারতকে পশ্চিম সম্মান করে তার গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের জন্য? বিদেশমন্ত্রী সপাট জবাব, ‘এর উত্তর দেওয়ার জন্য একটি মৌলিক বিতর্কের অবতারণা করতে হয় যে গণতান্ত্রিক বিশ্ব বলতে কী বোঝায় এবং কে কার সঙ্গে সংযুক্ত? ভারতের পশ্চিমে পাকিস্তানে আর পূর্বে মায়ানমারে ছিল সামরিক স্বৈরতন্ত্র। মায়ানমারে নিষেধাজ্ঞা জারি হল। কিন্তু পাকিস্তানের জমানাকে বলা হল খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং নেটোর সহযোগী। কখনও একনায়কতন্ত্র সম্পর্কে বলা হয়, তাদের সঙ্গে বাণিজ্য আরও বাড়ানো হোক, তবেইতাদের বদলানো যাবে। কখনও বা বলা হয়, আরও নিষেধাজ্ঞাচাপিয়ে দাও ঘাড়ে তবে এরা উচিত শিক্ষা পাবে।’
ভারতের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পশ্চিমের অভিযোগের মুখোমুখি হয়ে জয়শঙ্করের বক্তব্য, ভারতীয় সমাজ তর্কপ্রিয়। বিভিন্ন বিষয়ে যে বাদপ্রতিবাদ তৈরি হয়, সমালোচনা হয়, তার অর্থই হল গণতান্ত্রিক আবহাওয়া ভারতে রয়েছে। পাল্টা তিনি বলেন, ‘আমিও তো ইউরোপ অথবা আমেরিকার অনেক বিষয়ের কথা তুলতে পারি যা উদ্বেগজনক। তার মধ্যে রয়েছে অভিবাসী, সংখ্যালঘুদের প্রতিআচরণ অথবা সব বিষয়েনজরদারির মাত্রা। এমন কোনও দেশ নেই, যেখানে সমস্যা নেই।’