“কোথা থেকে এলো ত্রিশূল? মসজিদ বলা হলে দ্বন্দ্ব বাধবেই,” জ্ঞানব্যাপী নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য যোগীর

সংবাদ সংস্থা এএনআই’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিলেন, ৪৫০ বছরের পুরনো বারানসির জ্ঞানব্যাপী মসজিদ আসলে হিন্দু মন্দির। তাঁর বক্তব্য, ওই স্থাপত্যকে মসজিদ বলা হলে দ্বন্দ্ব বাধবেই।

যোগীর ভাষায়, ঈশ্বর যাদের দৃষ্টিশক্তি দিয়েছেন তারা ওখানে গিয়ে দেখুন। তারপরই তিনি প্রশ্ন তোলেন, মসজিদের ভেতরে ত্রিশূল কেন? কোথা থেকে এলো ত্রিশূল? ওখানে জ্যোতির্লিঙ্গ রয়েছে। দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে। ওখানকার দেওয়ালগুলো কাঁপছে। কিছু চিৎকার করে বলতে চাইছে।

তবে যোগী আদিত্যনাথের সবথেকে বড় তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, “আমার মনে হয় মুসলিম সমাজের তরফ থেকে প্রস্তাব আসা উচিত। বলা উচিত যে ঐতিহাসিক ভুল হয়েছে তার সমাধান হোক।”

জ্ঞানব্যাপী মসজিদ নিয়ে এই প্রথম বিজেপির কোনো প্রথমসারির নেতা মুখ খুললেন। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, দ্বাদশ শতকে ভারত আক্রমণকারী মহম্মদ ঘড়ি সেনাপতি কুতুব উদ্দিন আইবকের হাতে প্রথম আক্রান্ত হয়েছিল কাশীর আদি বিশ্বনাথ মন্দির। এর কয়েক বছর পর কাশীর বাসিন্দারা মন্দিরটি সংস্কার করেন। এরপর সপ্তদশ শতকে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করেছিলেন। আর সেই জমির একাংশেই গড়ে তুলেছিলেন জ্ঞানব্যাপী মসজিদ। জ্ঞানব্যাপী মসজিদ লাগোয়া জমিতে এখনো যে বিশ্বনাথ মন্দির রয়েছে যা অষ্টাদশ শতকের। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের হোলকার রাজবংশের রানী অহল্যা বাঈ মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন বলে শোনা যায়।

২০২১ শের আগস্টে ৫ হিন্দু মহিলা জ্ঞানব্যাপীতে মা শৃঙ্গার গৌরী এবং মসজিদের অন্দরের পশ্চিম দেওয়ালে দেব দেবীর মূর্তির অস্তিত্ব দাবি করে পূজা চলার অনুমতি চেয়েছিল বারানসের দায়রা আদালতের কাছে। এরপরই দায়রা আদালত নিযুক্ত কমিটি মসজিদের অন্তরে সমীক্ষা ভিডিওগ্রাফি করার নির্দেশ দেয়। এরপর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মামলা যায় বারানসি আদালতে। গত ২৩শে জুন জেলা আদালত বিচারক সিল করা অজুখানা এলাকার বাইরে এএসআই সমীক্ষার নির্দেশ দিলেও শীর্ষ আদালত তাতে স্থগিতাদেশ দেয় এবং কংগ্রেস মামলাটি এলাহাবাদ হাইকোর্টে পাঠায়। এরপর এলাহাবাদ হাইকোর্ট দুই পক্ষের মতামত শুনে স্থগিতাদেশের মেয়াদ ৩ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছে। আর সেই শুনানির আগেই যোগীর এই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য সবার সামনে এলো।

বিরোধীদের অভিযোগ, আগামী দিনে বারানসির জ্ঞানব্যাপী মসজিদ কাশী বিশ্বনাথ মন্দির নিয়ে বিজেপি পরিকল্পনামাফিক যে এগোচ্ছে সেটা যোগীর কথায় স্পষ্ট। মামলা চললেও জ্ঞানব্যাপী মসজিদে নমাজের অধিকার বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটির আবেদন মেনে শীর্ষ আদালত এবং এলাহাবাদ কোড মসজিদে ভারতীয় পুরা তত্ত্ব বিভাগের সমীক্ষা চালানোর ক্ষেত্রেও স্থগিতাদেশ জারি রেখেছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে যোগীর এই মন্তব্য নতুন কি মোড় নেয় সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.