তিনটি কালো প্লাস্টিকের ব্যাগে মিলেছিল কাটা মুন্ডু, পা এবং বুকের অংশ। দু’টি হাত, পায়ের পাতা এবং বুকের নীচের অংশ এখনও মেলেনি। শরীরের সেই সব অংশ খুঁজে পেতেই ওয়াটগঞ্জের নিহত মহিলা দুর্গা সরখেলের ভাসুর নীলাঞ্জন সরখেলকে হেফাজতে নেওয়া জরুরি বলে আদালতে জানিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। সেই মতোই ধৃত নীলাঞ্জনকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার দুপুর ৩টে নাগাদ ওয়াটগঞ্জ থানা এলাকার সত্য ডাক্তার রোডের পাশে পাঁচিল ঘেরা একটি পরিত্যক্ত জায়গা থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগে দুর্গার দেহাংশ পেয়েছিল পুলিশ। তার তদন্তে নেমেই বৃহস্পতিবার সকালে নীলাঞ্জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর দুপুরে তাঁকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। সরকারি আইনজীবী সৌরিন ঘোষাল আদালতে জানান, মৃতার শরীরের সব অংশ এখনও পাওয়া যায়নি। সব খুঁজতেই ধৃতকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়াও খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি। এই ঘটনায় আর কেউ জড়িত কি না, সে সব জানতে ভাসুর জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। এর পরেই ধৃতের পুলিশি হেফাজতের আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক।
পুলিশ সূত্রে খবর, দুর্গা খুনের তদন্তে ইতিমধ্যেই কিছু সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার হয়েছে। দুর্গাদের বাড়ির ঠিকানা ২৩বি, হেমচন্দ্র স্ট্রিট। সেই বাড়ির উল্টো দিকের বাড়ির সামনে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সেই ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখেছেন তদন্তকারীরা। তাতে এক বার দেখা গিয়েছে, হাতে প্লাস্টিক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন নীলাঞ্জন। পরে আবার বাড়িতে ঢুকতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। প্রসঙ্গত, দুর্গার দেহ যেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে, সেই জায়গায় তাঁর বাড়ির একেবারে কাছে। মেরেকেটে ৬০০ মিটার। জেরার সময় নীলাঞ্জনের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, গোটা জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব জুড়েই নির্লিপ্ত ছিলেন নীলাঞ্জন। তাঁর একটাই প্রশ্ন, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে কি কিছু প্রমাণ হয়? নীলাঞ্জনের বক্তব্য, ওই ফুটেজ দেখে কোনও সিদ্ধান্তেই উপনীত হওয়া সম্ভব নয়।
বুধবার এসএসকেএমে দুর্গার দেহাংশের ময়নাতদন্ত হয়। ধারালো কিছুর আঘাতেই মহিলার মৃত্যুর ইঙ্গিত রয়েছে প্রাথমিক রিপোর্টে। মৃত্যুর পরে দেহ টুকরো টুকরো করা হয়। সে ক্ষেত্রে চপার বা ওই জাতীয় অস্ত্র খুনে ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান তদন্তকারীদের। এ বিষয়েও নীলাঞ্জনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। কিন্তু তারও কোনও উত্তর মেলেনি। পুলিশ সূত্রে দাবি, তদন্তকারীদের প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর না দিয়ে বার বার তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন নীলাঞ্জন। এতেই ভাসুরের ব্যাপারে সন্দেহ আরও বেড়েছে তদন্তকারীদের একাংশের মনে।
২০০৭ সালে দুর্গার বিয়ে হয় ওয়াটগঞ্জের বাসিন্দা ধোনি সরখেলের সঙ্গে। দম্পতির এক ছেলে রয়েছে। দশম শ্রেণিতে পড়ে সে। স্বামী এবং ছেলের পাশাপাশি ভাসুর, ননদ, শাশুড়িকে নিয়ে থাকতেন দুর্গা। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির তরফে মেয়ের নিখোঁজের খবর দুর্গার পরিবারকে জানানো হয়নি। সংবাদমাধ্যমে এক মহিলার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারের খবর দেখে এবং গত দু’দিন ধরে দুর্গার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে পরিবারের লোকেরা মঙ্গলবার থানায় যান। পুলিশ জানিয়েছে, খুনের ঘটনায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ভূমিকা নিয়ে সংশয় রয়েছে দুর্গার পরিবারের।
প্রতিবেশীদের একাংশের দাবি, সরখেল পরিবারে ঝামেলা-অশান্তি লেগেই থাকত। প্রায়ই বাড়ি থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি, কান্নাকাটির আওয়াজ শোনা যেত। কিন্তু বাড়ির কারও সঙ্গে তেমন মেলামেশা না থাকায় পড়শিরা ঝগড়ঝাঁটির কারণ বুঝে উঠতে পারতেন না। তবে বাড়িতে যে কাউকে মারধর করা হচ্ছে, এই বিষয়টি তাঁরা বুঝতে পারতেন। সোমবার রাতে বা মঙ্গলবার সকালে অবশ্য তেমন চিৎকার-চেঁচামেচি শোনা যায়নি বলেই দাবি প্রতিবেশীদের একাংশের।