ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। দুর্যোগের মধ্যে বিপদে পড়লে কোন নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে, তা জানিয়ে দিল রাজ্য প্রশাসন, কলকাতা পুরসভা এবং পূর্ব রেল। ঝড়ের কারণে শহর, শহরতলি এবং গ্রামের বিস্তীর্ণ অংশে বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হতে পারে। তাই আপৎকালীন নম্বর দিয়ে রেখেছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা এবং সিইএসসি-ও।
আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় নবান্নে বিশেষ কন্ট্রোল রুম খুলেছে রাজ্য প্রশাসন। এই কন্ট্রোল রুমের দু’টি নম্বর হল ১০৭০ এবং (০৩৩) ২২১৪ ৩৫২৬। কলকাতা পুরসভার হেল্পলাইন নম্বর (০৩৩) ২২৮৬ ১২১২, ২২৮৬ ১৩১৩ অথবা ২২৮৬ ১৪১৪। গ্রাহকদের সুবিধার্থে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা দু’টি নম্বর দিয়েছে। ৮৯০০৭৯৩৫০৩ এবং ৮৯০০৭৯৩৫০৪। সিইএসসি-র আপৎকালীন নম্বর (০৩৩) ২২২৫ ৯১৫৬ এবং (০৩৩) ২২২৫ ৯১৫৭ রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের হেল্পলাইন নম্বর ১৯১২১। পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের যাত্রীরা দুর্যোগের মধ্যে বিপদে পড়লে ফোন করতে পারেন (০৩৩) ২৬৪১ ৩৬৬০ নম্বরে। আর শিয়ালদহ ডিভিশনের দু’টি হেল্পলাইন নম্বর হল (০৩৩) ২৩৫০ ৮৭৯৪ এবং (০৩৩) ২৩৮৩ ৩৩২৬
হাওয়া অফিসের সর্বশেষ পূর্বাভাস বলছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে উত্তর দিকে এগোচ্ছে রেমাল। রেমাল এখন পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে। ক্যানিংয়ের ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে রেমাল। বাংলাদেশের মোংলা থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণে রয়েছে। বাংলাদেশের খেপুপাড়ার ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে। রবিবার রাতে বাংলাদেশের খেপুপাড়া এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মাঝখান দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসাবে বাংলাদেশের মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিমে আছড়ে পড়তে পারে রেমাল। সে সময়ে তার গতি থাকবে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। সাময়িক ভাবে দমকা হাওয়ার গতিবেগ পৌঁছতে পারে ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্তও।
এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে লাল সতর্কতা জারি রয়েছে। দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কিছু জায়গায় অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। জারি কমলা সতর্কতা। সেখানে ২০ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা। পশ্চিম মেদিনীপুর, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমানে জারি কমলা সতর্কতা। সোমবার নদিয়া, মুর্শিদাবাদে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে জারি লাল সতর্কতা। কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, হুগলি, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির জন্য কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাতেও ভারী বৃষ্টির জন্য হলুদ সতর্কতা জারি।
দুই ২৪ পরগনায় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে রবিবার বৃষ্টির পাশাপাশি ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি সাময়িক ভাবে হতে পারে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার। এ ছাড়া, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমানেও ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। তবে তার গতি অপেক্ষাকৃত কম থাকবে। ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার। নদিয়া, মুর্শিদাবাদে সোমবার হাওয়ার গতি বেড়ে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার হতে পারে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমানে ঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। জারি কমলা সতর্কতা। কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়িতেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। জারি হলুদ সতর্কতা। মঙ্গলবার কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। দার্জিলিং, কালিম্পং, দুই দিনাজপুরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সেখানে জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। সোম এবং মঙ্গলবার মালদহ এবং দুই দিনাজপুরে বৃষ্টির সঙ্গে ৩৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উত্তাল হবে সমুদ্র। ঢেউয়ের উচ্চতাও হবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। মৎস্যজীবীদের সোমবার পর্যন্ত সমুদ্রে যেতে বারণ করেছে আলিপুর হাওয়া অফিস।