যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় ধৃতদের মোবাইল ফোনগুলি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ওই তিনটি ফোনে কী তথ্য লুকিয়ে আছে, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। সেই সঙ্গে ধৃতদের বয়ানও মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।
যাদবপুরের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে দু’জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাঁরা হলেন, দীপশেখর দত্ত এবং মনোতোষ ঘোষ। এ ছাড়া, সৌরভ চৌধুরী নামে এক প্রাক্তনীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের আগামী ২২ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপাতত যাদবপুর থানাতেই রয়েছেন ধৃতেরা। থানায় দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে সৌরভ, মনোতোষদের। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য ছাত্র এবং হস্টেলের আবাসিকদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত সকলের কাছ থেকে যে বয়ান পাওয়া গিয়েছে, মঙ্গলবার সেগুলিই মিলিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
কারও বয়ানে কোনও অসঙ্গতি আছে কি না, কেউ বয়ান বদল করছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ধৃত তিন জনের মোবাইল থেকে তথ্য উদ্ধারের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন তদন্তকারীরা। মোবাইলগুলি থেকে কী তথ্য পাওয়া যায়, ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে তার কোনও যোগসূত্র মেলে কি না, সবটাই জানা যাবে ফরেন্সিক পরীক্ষার পর। তাই এই পরীক্ষার রিপোর্ট এলে তদন্ত অনেকটা এগিয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন নদিয়ার এক ছাত্র। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের ৬৮ নম্বর ঘরে অন্য এক ছাত্রের অতিথি হিসাবে থাকছিলেন। গত বুধবার হস্টেলের এ২ ব্লকের তিন তলার বারান্দা থেকে তিনি পড়ে যান। হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও চিকিৎসা চলাকালীন বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর থেকেই উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। অভিযোগ, র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিলেন ওই পড়ুয়া। তার ফলেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মৃতের পরিবারের তরফেও র্যাগিংয়ের অভিযোগ করা হয়েছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন র্যাগিং সংক্রান্ত নিয়মকানুন মানা হয় না, তা জানতে চেয়ে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শো-কজ করেছে।জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নোটিস পাঠিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আলাদা করে গড়া হয়েছে তদন্ত কমিটি। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল রবিবার জানান, এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চলছে। শীঘ্রই রহস্যের সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদী।