তিন দিন পরেই ভোটগ্রহণ দক্ষিণ ২৪ পরগনার সব কেন্দ্রে। জয়নগর, যাদবপুর, মথুরাপুর এবং ডায়মন্ড হারবারে আগামী ১ জুন ভোট। তার মধ্যেই ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক তথা ভাঙড়ের তৃণমূল পর্যবেক্ষক শওকত মোল্লাকে তলব করল সিবিআই। কয়লা পাচারকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে নিজাম প্যালেসে ডাকা হয়েছে। তবে সিবিআই সূত্রের খবর, এখনই হাজিরা দিতে যাচ্ছেন না শওকত। তিনি কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে সময় চেয়েছেন।
শওকতকে বুধবারই নিজামে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল। সেই মর্মে মঙ্গলবার তাঁর কাছে সিবিআইয়ের চিঠিও গিয়েছিল। সিবিআই সূত্রের খবর, শওকত বুধবার হাজিরা দেননি। বদলে সিবিআইকে তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনের কারণে তিনি এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছেন। তাই ভোট মিটলে হাজিরা দেবেন। আগামী ৪ জুন ভোটের ফলাফল জানা যাবে। সে দিন পর্যন্ত সময় চেয়েছেন শওকত। যেখানকার পর্যবেক্ষক শওকত, সেই ভাঙড় বিধানসভা যাদবপুর কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। অন্য দিকে, তাঁর বিধানসভা ক্ষেত্র ক্যানিং পূর্ব পড়ে জয়নগর কেন্দ্রের মধ্যে।
কয়লাকাণ্ডে শওকতকে এর আগেও তলব করেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। বছর দুয়েক আগে তাঁকে ডাকা হয়েছিল। ২০২২ সালের মে মাসে প্রথম হাজিরা এড়ালেও জুনে সিবিআই দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক। ওই সময়ে কয়লাকাণ্ডে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জেরা করে সিবিআই। এমনকি, তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জেরা করা হয়েছিল। দু’বছর পর আবার শওকতকে ডাকল সিবিআই।
কয়লাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করে সিবিআই আধিকারিকেরা জানতে পেরেছিলেন, আসানসোলের কয়লা খনি থেকে অবৈধ ভাবে তোলা কয়লা পৌঁছে যেত দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন ইটভাটায়। তার সঙ্গে শওকতের কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখেন তাঁরা। সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই দু’বছর আগে শওকতকে তলব করা হয়েছিল। সেই সূত্রেই আবার তলব কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়।
শওকতের তলব প্রসঙ্গে বুধবার বারুইপুর পূর্বে জনসভা থেকে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে আক্রমণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘বেচারা শওকতকে মধ্যরাতে নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই। বলছে ‘কালকে এসে দেখা করো’। জমিদারি নাকি? এখন নির্বাচন করাবে নাকি দেখা করতে যাবে?’’
উল্লেখ্য, কিছু দিন আগে বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী হুমকি দিয়েছিলেন শওকতের নাম করে। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘যে সব মিনিকিট এখানে ফিশারি করত, তাদের তো এ বার ধরতে হবে। জেলে ঢোকাতে হবে। শওকত মোল্লা, পরেশ রাম দাসরা যদি মনে করেন, চিরদিন একই রকম চলবে, তা হলে ভুল করছেন।’’ তার পাল্টা শওকত বলেছিলেন, ‘‘এক জন ধেড়ে ইঁদুর আছেন, যিনি ইডি, সিবিআইয়ের হাত থেকে নিজে বাঁচার জন্য মোদী, শাহের পায়ে পড়েছেন। নোংরা খেলা খেলে যে আগুন তিনি লাগানোর চেষ্টা করছেন, এক দিন নিজেই তাতে পুড়ে যাবেন।’’ শুভেন্দুর ইঙ্গিতের পরেই শওকতকে সিবিআই তলব করল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল। অভিযোগ, আবার ভোটের মুখে সিবিআইকে হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি।