বুধের রাতে আবার হিংসা ঢাকায়, উড়ালপুল থেকে ছোড়া হল ককটেল বোমা! যুবকের মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম মুখ শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর এক সপ্তাহের মাথায় আবার রক্ত ঝরল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। ঘটনাচক্রে, বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার পুত্র তারেকের দেশে ফেরার কয়েক ঘণ্টা আগেই! সে দেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, বুধবার রাতে নিউ ইস্কাটনের মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে ছোড়া ককটেল বোমার বিস্ফোরণে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

হামলা প্রসঙ্গে ঢাকা পুলিশের রমনা বিভাগের ডেপুটি কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, ‘‘রাত পৌনে ৮টার দিকে নিউ ইস্কাটনের বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের ফটকের সামনে শক্তিশালী ককটেলের বিস্ফোরণ হয়। সে সময় ওই যুবক গুরুতর আহত হন। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।’’ মাসুদ জানান, নিহত যুবকের নাম সিয়াম বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার রাজপথে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন হাদি। গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পর থেকেই নতুন করে অশান্তি ছড়িয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়। পরিস্থিতির আঁচ পেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তড়িঘড়ি জাতির উদ্দেশে ভাষণে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেনি বাংলাদেশ! সরকারি ভবন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সদর দফতর এমনকি, গত বছরই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ৩২ ধানমন্ডিতে নিহত জাতির জনক শেখ মুজিবের ভবনে আছড়ে পড়ে ‘সংগঠিত জনরোষ’

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে উত্তেজিত জনতার রোষ থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিকেরাও। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের দুই সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ এব‌ং ‘দ্য ডেলি স্টার’-এর দফতরে ভাঙচুরের পরেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খুলনায় এক সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করে উত্তেজিত জনতা। ময়মনসিংহে এক সংখ্যালঘু যুবককে পিটিয়ে খুন করা হয়। পাকিস্তান জমানায় প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের দফতরেও হামলা হয়। অভিযোগ, কট্টরপন্থী স্লোগান দিতে দিতে সংগঠিত ভাবে মিছিল করে গিয়ে সেখানে হামলা চালানো হয়। চলে তাণ্ডব ও লুটপাট। পুড়িয়ে দেওয়া হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি-বই। ভেঙে ফেলা হয়েছে অসংখ্য বাদ্যযন্ত্রও। বিক্ষোভকারীরা ছিঁড়ে দেন ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত সঞ্জীদা খাতুনের ছবিও। রেহাই পায়নি লালন এমনকি কবি নজরুল ইসলামের ছবিও! ছায়ানটের নববর্ষ উৎসব ইউনেস্কো স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। কিন্তু গত বছরের ৫ অগস্টের পালাবদলের পর থেকেই কয়েকটি কট্টরপন্থী রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বাংলা নববর্ষ উৎসব উদ্‌যাপনের বিরোধিতা করেছে প্রকাশ্যে। হামলার ঘটনাতেও অভিযোগের আঙুল তাদেরই দিকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.