আইএসএলে মহমেডানকে হারিয়ে দিল ইস্টবেঙ্গল। লিগে সবার নীচে মহমেডান। সেই দলের বিরুদ্ধে একাদশ স্থানে থাকা ইস্টবেঙ্গল জিতল ৩-১ গোলে। যুবভারতীতে লাল-হলুদ জার্সিতে গোল করলেন নাওরেম মহেশ, সল ক্রেসপো এবং ডেভিড। মহমেডানের হয়ে একটি মাত্র গোল করেন ফ্র্যাঙ্কা।
রবিবার যুবভারতীতে লড়াই ছিল বাংলার দুই দলের। আইএসএলে লিগ জয়ের লড়াই থেকে তারা অনেকটাই দূরে। মহমেডান রয়েছে ১৩ নম্বরে এবং ইস্টবেঙ্গল রয়েছে ১১ নম্বরে। এ বারের আইএসএলে দুই দলকে তেমন ভাবে ভাল খেলতে দেখা যায়নি। ২০টি ম্যাচ খেলে এ বারের লিগে ইস্টবেঙ্গলের এটি ষষ্ঠ জয়। মহমেডানের জয়ের সংখ্যা দুই। এমন দু’টি দলের খেলা শুরু হয়েছিল গোল ফস্কানোর প্রদর্শনী দিয়ে।
দুই দলের ফুটবলারেরাই সুযোগ তৈরি করছিলেন, কিন্তু গোল করতে পারছিলেন না। ইস্টবেঙ্গলের নতুন বিদেশি মেসি বোউলি যেমন নিজে সুযোগ তৈরি করলেন, তেমনই সুযোগ নষ্টও করলেন। গত মরসুমে সবচেয়ে বেশি গোল করা দিমিত্রি দিয়ামন্তাকসও সহজ সুযোগ নষ্ট করলেন। প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গলের ১-০ গোলে এগিয়ে থাকার কৃতিত্ব অবশ্যই নাওরেম মহেশের। তিনি গোলটি করার আগে পিভি বিষ্ণুকে বলটি পাস দেওয়ার জায়গাটাও দেখিয়ে দিয়েছিলেন। বিষ্ণু সেই জায়গায় বল রাখার সঙ্গে সঙ্গেই এগিয়ে গিয়ে বলটি জালে জড়িয়ে দেন মহেশ। সেটাও আবার প্রথম পোস্ট দিয়ে। মহমেডানের গোলরক্ষক পদম ছেত্রী কী ভাবে প্রথম পোস্ট ফাঁকা রেখে, আগেই দ্বিতীয় পোস্টের দিকে ঝুঁকে গেলেন তা বোঝা কঠিন।
দ্বিতীয়ার্ধে মহমেডান শুরুর দিকে সে ভাবে আক্রমণ করতে পারেনি। তবে নিজেদের রক্ষণের ভুলে আরও একটি গোল হজম করে মহমেডান। গোল কিক থেকে ডিফেন্ডার মাফেলাকে বল দিয়েছিলেন গোলরক্ষক পদম। কিন্তু বল নিজের পায়ে রাখতেই পারেননি মাফেলা। সেই বল পেয়ে যান বাউলি। ইস্টবেঙ্গলের মেসির বাড়ানো পাস থেকে দলকে ২-০ গোলে এগিয়ে দিয়েছিলেন ক্রেসপো। যদিও তিন মিনিটের মধ্যে একটি গোল শোধ করে মহমেডান। ইস্টবেঙ্গলের রাকিপকে ঘাড়ে নিয়ে গোল করে যান সাদা-কালো বাহিনীর ফ্র্যাঙ্কা।
ম্যাচের শেষ মুহূর্তে গোল করে ইস্টবেঙ্গলের জয়ে নিশ্চিত করেন ডেভিড। তিনি গোল করে কোনও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেননি। মহমেডানকে আইলিগ জিতিয়ে আইএসএলে তোলার নেপথ্যে বড় ভূমিকা ছিল ডেভিডের। তাদের বিরুদ্ধে গোল করে তাই কোনও উচ্ছ্বাস দেখাননি তিনি।
ম্যাচে দৃষ্টিকটু ছিল ইস্টবেঙ্গল গোলরক্ষক প্রভসিমরন গিলের আচরণ। তাঁর চোট লেগেছে দেখে কোচ তাঁকে তুলে দেবজিত মজুমদারকে নামান। ম্যাচের তখন বেশি সময় বাকি নেই। কিন্তু গিল কিছুতেই মাঠ থেকে উঠতে রাজি নন। তিনি খেলা চালিয়ে যেতে চাইছিলেন। এক প্রকার বাধ্য হয়ে মাঠ ছাড়েন। রাগ দেখাচ্ছিলেন মাঠ থেকে বেরিয়ে গিয়েও। সেই মুহূর্তেই গোল করেন ডেভিড। তাতে আনন্দে লাফ দিয়ে ওঠেন গিল। উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারছিলেন না। তাঁর লাফ বুঝিয়ে দিয়েছিল, গিলের চোট তেমন গুরুতর নয়।
২০ ম্যাচ শেষে ইস্টবেঙ্গল ২১ পয়েন্ট নিয়ে ১১ নম্বরে রয়েছে। বাকি চারটি ম্যাচ জিতলে তারা পৌঁছে যেতে পারে ৩৩ পয়েন্টে। এই মুহূর্তে ৩২ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে নর্থইস্ট ইউনাইটেড। ফলে এখনও প্রথম ছয়ে ঢুকে পড়ার সুযোগ অঙ্কের বিচারে রয়েছে লাল-হলুদের। কাজটা যদিও খুব সহজ নয়। ইস্টবেঙ্গলের শেষ চারটি ম্যাচ পঞ্জাব (২২ ফেব্রুয়ারি), হায়দরাবাদ (২৬ ফেব্রুয়ারি), বেঙ্গালুরু (২ মার্চ) এবং নর্থইস্টের (৮ মার্চ) বিরুদ্ধে। এই চারটি ম্যাচেই জিততে হবে ইস্টবেঙ্গলকে। সেই সঙ্গে আশা করতে হবে যাতে প্রথম ছয়ে ওঠার লড়াইয়ে থাকা দলগুলি পয়েন্ট নষ্ট করে।
মহমেডান ২০ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট পেয়েছে। তাদের পক্ষে প্রথম ছয়ে ওঠা সম্ভব নয়। বাকি চারটি ম্যাচ জিতে তারা চেষ্টা করতে পারে লিগের শেষ দল হিসাবে না থাকার। মহমেডানের ম্যাচ বাকি জামশেদপুর (২০ ফেব্রুয়ারি), ওড়িশা (২৮ ফেব্রুয়ারি), গোয়া (৪ মার্চ) এবং পঞ্জাবের (১০ মার্চ) বিরুদ্ধে।