প্রায় ১০ বছরে পা দিতে যাচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হোক কলরব’ আন্দোলন। স্বপ্নদীপের বিয়োগান্তক প্রয়াণের পর সামাজিক মাধ্যমে মাঝে মাঝেই ফের দাবি উঠছে সেরকম আন্দোলনের। যাতে দোষীদের প্রকৃত শাস্তি হয়।
২০১৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর যাদবপুরে শুরু হয়েছিল এই আন্দোলন। এক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু ছাত্রের বিরুদ্ধে তাঁর উপর শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনেন। একটি সংগঠনের অভিযোগ ছিল, কর্তৃপক্ষ সেই বিষয়টির যথাযথ গুরুত্ব দেননি। অন্যদিকে উপাচার্য ডঃ অভিজিৎ চক্রবর্তীর বক্তব্য, অভিযোগ অসত্য। তিনি যাদবপুরের পড়ুয়াদের বিশৃঙ্খল পরিবেশে লাগাম দিতে চেয়েছিলেন। এই সঙ্গে ইউজিসি-র নির্দেশিকা মেনে বসিয়েছিলেন কিছু সিসিটিভি। আনতে চেয়েছিলেন শৃঙ্খলা।
কয়েকদিনের মধ্যে ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। মাস চার ধরে চলে অশান্তি। লাগাতার ঘেরাও হন উপাচার্য ও কিছু শীর্ষ আধিকারিক। ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে পুলিশি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় যায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আচমকা যাদবপুরে যান। পদত্যাগে বাধ্য হন উপাচার্য।
এর আগেও যখনই যাদবপুরের পড়ুয়াদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা হয়েছে, তাঁদের একাংশ বাধা দিয়েছেন। ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সিসিটিভি বসানো ও পড়ুয়াদের পরিচয়পত্র ঝোলানোর নির্দেশের প্রতিবাদে তাঁরা ঘেরাও করেন তৎকালীন উপাচার্য প্রদীপ নারায়ণ ঘোষকে। টানা ৫২ দিন চলে এই ঘেরাও। অচিরেই পদত্যাগ করেন প্রদীপবাবু।
যাদবপুরে ছাত্র ইউনিয়নের রোষে পড়ে একই অবস্থা হয় উপাচার্য শৌভিক ভট্টাচার্যের। ২০১৩-র সেপ্টেম্বর মাসে। সাসপেণ্ড হওয়া দুই পড়ুয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে ৫০ ঘন্টার ওপর ঘেরাও হন তিনি। মাসখানেক বাদে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন।
এরপর অভিজিতবাবুর কথা শুরুতেই লিখেছি। বাস্তবে যাদবপুরের পরিস্থিতি এমন, কোনও উপাচার্য সাপের ল্যাজে পা দিতে চান না। ছাত্র সংগঠন এবং সরকারের সঙ্গে আপোষ করে চলেন। তৃতীয় শক্তি এলে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিতে হয় উপাচার্যকে। যেমন, রাজ্যপাল থাকাকালীন জগদীপ ধনকর কয়েক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে যে অবস্থা তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে যান উপাচার্য। তাঁকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। অনেকের দাবি, ওটা ছিল তাঁর কৌশলি নাটক।
হোক কলরবের বলি অভিজিৎবাবুর কূর্সিতে বসে প্রথম দিনই মন জয় করে ফেললেন ডঃ সুরঞ্জন দাস। ২০১৫-র ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি জানালেন তাঁর সচিবালয় এবং কিছু জায়গা থেকে সিসিটিভি সরিয়ে দেওয়া হবে। সরিয়ে দেওয়া হবে তাঁর পূর্বসূরীর বসানো বৈদ্যুতিন তালা। কারণ, তিনি মনে করেন সর্বদা পড়াশোনার জায়গা হবে বিতর্কের স্থান। সর্বদা খোলা থাকবে তাঁর চেম্বার। চান ‘মুক্ত আকাশ’। পড়ুয়ারা অপছন্দ করতে পারে, এমন কোনও পদক্ষেপে যাননি সুরঞ্জনবাবু। সম্প্রতি তিনি এখানে কার্যকালের মেয়াদ শেষে গিয়েছেন বেসরকারি এক বিশ্ববিদ্যালয়ে।