কয়েক ঘণ্টা থেমে থাকার পর আবার শুরু হল উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধারকাজ। তবে খননকাজ এখনও শুরু হয়নি। বেলা ১১টা নাগাদ খননকাজ আবার শুরু হবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। যদিও শ্রমিকদের কখন বার করে আনা যাবে, সে বিষয়ে আর নিশ্চিত নন প্রশাসনিক কর্তারা। বৃহস্পতিবার রাতে শ্রমিকদের উদ্ধার করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয় উদ্ধারকারীদের। আটকে পড়া শ্রমিকদের থেকে কয়েক মিটার দূরত্বেই থমকে যায় উদ্ধারকাজ। যে যন্ত্র দিয়ে সুড়ঙ্গের মাটি কাটা হচ্ছিল তাতে প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেয়। পাশাপাশি, যে কাঠামোর উপর দাঁড় করিয়ে যন্ত্রটিকে চালানো হচ্ছিল তাতেও ফাটল দেখা দেয়। কাজ থামিয়ে দেন উদ্ধারকারীরা। যন্ত্রের মেরামত করে শুক্রবার ভোর থেকে শ্রমিকদের বার করে আনতে আবার উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে।
এর আগে উত্তরাখণ্ডের প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যেই বার করে আনা হবে আটকে থাকা শ্রমিকদের। কিন্তু তা করা যায়নি। বুধবার রাতে ধ্বংসস্তূপ খুঁড়তে খুঁড়তে আচমকা সামনে চলে আসে লোহার রড। খননযন্ত্র দিয়ে তা সরানো যায়নি। ফলে উদ্ধারকাজ বাধা পায়। রড কেটে রাস্তা ফাঁকা করতে আরও কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানানো হয়। রডটি কাটতে বেগ পেতে হয় উদ্ধারকারীদের। এ ছাড়াও, এক বার কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। টানা খুঁড়তে খুঁড়তে যন্ত্র অতিরিক্ত গরম হয়ে উঠেছিল। ফলে তা ঠান্ডা করার জন্য আরও কিছুটা সময় লাগে। বৃহস্পতিবার সকালে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছিল, অবশেষে লোহার রডটি কেটে সরানো গিয়েছে। ফলে দ্রুত কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদী ছিলেন সকলে। কিন্তু তার পরে বৃহস্পতিবার রাতে ফের প্রযুক্তিগত সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় উদ্ধারকারীদের। ফলে বৃহস্পতিবারও শ্রমিকদের উদ্ধার করা যায়নি। এখনও কয়েক মিটার খোঁড়া বাকি।
শ্রমিকদের সঙ্গে উদ্ধারকারীদের দূরত্ব কমার পাশাপাশি বার বার বাধার মুখেও পড়তে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের।বর্তমানে উদ্ধারকারী এবং শ্রমিকদের মধ্যে মাত্র কয়েক মিটারের দূরত্ব থাকলেও তাঁদের কখন নিরাপদে সুড়ঙ্গ থেকে বার করে আনা যাবে তা বিষয়েও নিশ্চিত নন সরকারি আধিকারিকেরা। জাতীয় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বাহিনীর আধিকারিক সৈয়দ আতা হাসনাইনের মতে, আটকে পড়া শ্রমিকদের বার করে আনতে অনুভূমিক ভাবে যে উদ্ধারকাজ চলছে তা আরও তিন-চার বার বাধার মুখে পড়তে পারে। তাই শ্রমিকদের উদ্ধার করতে আর কত সময় লাগবে, তা আগে থেকে নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে না বলেও জোর দিয়েছেন হাসনাইন।
হাসনাইন আরও জানিয়েছেন, বুধবার রাত থেকেই সুড়ঙ্গের বাইরে অপেক্ষা করছে ৪১টি অ্যাম্বুল্যান্স। সুড়ঙ্গ থেকে বার করার পর প্রয়োজন হলে শ্রমিকদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। ঘটনাস্থলেও অস্থায়ী স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেখানে তৈরি আছে ৪১টি ‘বেড’। যে কোনও রকম জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত উদ্ধারকারীরা। কোনও শ্রমিক গুরুতর আহত হলে তাঁদের জন্য বিমানের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন হাসনাইন।
গত ১২ নভেম্বর উত্তরকাশী জেলার ব্রহ্মতাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের উপর সিল্কিয়ারা এবং ডন্ডালহগাঁওের মধ্যে নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গের একাংশ ধসে পড়ে। সুড়ঙ্গটি সাড়ে আট মিটার উঁচু এবং প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ। ভাঙা সুড়ঙ্গের ভিতরেই প্রায় ৬০০ মিটার ধ্বংসস্তূপের পিছনে আটকে পড়েন সুড়ঙ্গে কর্মরত ৪১ জন শ্রমিকেরা। সেই ঘটনার ১৩ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। রাজ্য এবং কেন্দ্র— উভয় সরকারই শ্রমিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে। ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে সেই দূরত্ব কমানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু বার বার বাধার মুখে পড়ছে উদ্ধারকাজ।