পাটুলি থেকে উল্টোডাঙা, বাইপাসে প্রায় ১৭ কিমির নজিরবিহীন মানববন্ধন, আহ্বান ছিল চিকিৎসকদের

আরজি করের চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য। সোমবার কলকাতায় সিবিআই গ্রেফতার করেছে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ চেয়ে পথে নেমেছেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা।

এই পরিস্থিতিতে ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ আন্দোলনে শামিল হলেন চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে জড়িত পেশাদারেরা। মঙ্গলবার বিকেলে ইএম বাইপাসের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে অভিনব মানববন্ধন কর্মসূচি। এই কর্মসূচির ডাক নির্দিষ্ট কোনও সংগঠনের তরফে দেওয়া হয়নি। তবে চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল। বাইপাসের ধারে সারিবদ্ধ ভাবে এই দাঁড়িয়ে এই কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা। ফলে যান চলাচলে কোথাও কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি।

পাটুলি থেকে রুবি, সন্তোষপুর কানেক্টর থেকে পরমা আইল্যান্ড হয়ে উল্টোডাঙা পর্যন্ত ইএম বাইপাসের প্রায় ১৭ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিভিন্ন এলাকায় হাতে হাত ধরে নাগরিক সমাজ আরজি কর-কাণ্ডের দোষীদের শাস্তির দাবিতে সুশৃঙ্খল ভাবে মানববন্ধন কর্মসূচিতে শামিল হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি যোগ দিয়েছেন সাধারণ নাগরিকদেরও অনেকে। বৃষ্টির মধ্যেও দাঁড়িয়ে থাকে ন্যায়বিচারের দাবিতে স্লোগান তোলেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, ১৯ অগস্ট বাইপাসই দেখেছিল আরজি কর-কাণ্ডের বিচার চেয়ে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল-মহমেডানের সমর্থকদের অভিনব জমায়েত।

বস্তুত, গত ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই ন্যায়বিচারের দাবিতে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন মাত্র পাচ্ছে সেই আন্দোলন। সাম্প্রতিক সময়ে তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসেই তা নজিরবিহীন ঘটনা। গত ১৪ অগস্ট কলকাতার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলাসদর, মহকুমা এমনকি, ব্লক স্তরেও পালিত হয়েছিল ‘মেয়েদের রাত দখল’ কর্মসূচি। রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) ধর্মতলায় রাত জেগেছিল আরজি করের নির্যাতিতার ন্যায়বিচারের দাবিতে তৈরি মঞ্চ। সামিল হয়েছিলেন, টালিগঞ্জের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা।

সোমবার বিকেল থেকে লালবাজারের সামনে অবস্থানে বসেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। প্রায় ২৩ ঘণ্টা টানা অবস্থান-বিক্ষোভের পর মঙ্গলবার বিকেলে লালবাজারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। আন্দোলনের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের খেতাব ও পুরস্কার ফেরানোর প্রবণতাও বাড়ছে। যা মনে করাচ্ছে, ২০০৭-’০৮ সালের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম এবং ২০২১-’২২ সালে কেন্দ্রের বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনপর্বে।

ইতিহাস বলছে, ২০০৭-’০৮ সালের ওই ঘটনার পরে ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে ভোটে বিপর্যয় হতে শুরু করেছিল সিপিএমের। শেষপর্যন্ত ২০১১ সালে তারা ক্ষমতাচ্যুত হয়। ঠিক যেমন ২০২১-’২২ সালের ঘটনার পরে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে হয়েছে বিজেপিকে। আরজি কর-কাণ্ডের পরে যে নাগরিক আন্দোলন তৈরি হয়েছে রাজ্য জুড়ে, তাতে আগেই ‘চাপ’ তৈরি হয়েছে তৃণমূলের উপর। দলের নেতা, মন্ত্রী, বিধায়কেরা প্রকাশ্যে হুমকি, হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ কটাক্ষও করছেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ফোঁস’-মন্তব্যে আন্দোলনকারীদের নিশানা করা হলেও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে জনপ্রতিনিধিদের আরও নম্র এবং সহানুভূতিশীল হওয়ার বার্তা দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.