এলাকাবাসীরা বার বার বারণ করেছিলেন। প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তবু শোনেননি সামসুল হক। তাঁর জমিতেই দিনের পর দিন রমরমিয়ে চলেছে বাজি তৈরির কাজ। সারা দিন খেটেখুটে এসে তিনি নিজেও বসে পড়তেন বাজি বানাতে। কারও বাধা কানে তুলতেন না। এমনটাই দাবি করলেন মৃত সামসুলের ভাইপো মফিজুল ইসলাম।
রবিবার সকালে দত্তপুকুরের মোচপোলের বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে। বিকেল পর্যন্ত মারা গিয়েছেন সাত জন। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন সামসুলও। এই সামসুলের বাড়ি লাগোয়া জমিতে দিনের বেলায় চলত বাজি তৈরি। আর দু’টি ঘরে চলত বাজি প্যাকেজিংয়ের কাজ। মফিজুল জানিয়েছেন, কেরামত আলিকে বাজি কারখানা তৈরির জন্য এই জমি ভাড়া দিয়েছিলেন সামসুল। কেরামতের বাড়ি পাশের গ্রামে। বিস্ফোরণে তাঁর ছেলেরও মৃত্যু হয়েছে। মফিজুলের দাবি, স্থানীয়দের আপত্তি উড়িয়েই কেরামতকে জমি ভাড়া দিয়েছিলেন সামসুল। তাঁর কথায়, ‘‘দীর্ঘদিন মানা করা হচ্ছিল। ওঁরা শুনতেন না।’’ বাড়তি রোজগারের আশায় যে কারও আপত্তি শুনতেন না কাকা, তা-ও জানিয়েছেন মফিজুল।
মফিজুল জানালেন, আগে বাসের কন্ডাক্টরি করতেন সামসুল। দিনমজুরিও করতেন। কিছু টাকা রোজগারের আশায় নিজের জমিতে বাজির কারখানা করতে দিয়েছিলেন তিনি। মু্র্শিদাবাদে এক অংশীদারের সঙ্গে মিলে কারখানা গড়েছিলেন কেরামত। সেখানে কাজ করতেন সাত-আট জন। বেশির ভাগই এসেছিলেন মুর্শিদাবাদ থেকে। মফিজুল জানালেন, স্থানীয় কিছু মহিলাও ঘরের কাজ সেরে বাজি বানাতে যেতেন ওই কারখানায়। পরিবর্তে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পেতেন। এই বাড়তি রোজগারের আশায় কারখানায় কাজ করতেন সামসুলও। মফিজুলের কথায়, ‘‘সামসুলের আর্থিক অবস্থা খুব ভাল ছিল না। খেটেখুটে ঘরে আসবাব, ফ্রিজ, এ সব কিনেছিলেন। কারখানা ভাড়া দিয়েই চলত সংসার। নিজেও কাজ থেকে বাড়ি ফিরে ফাঁকা সময় পেলে টুকটাক বাজি বানাতেন। দিনমজুরি করে এসে সে সব করতেন তিনি।’’
এ সব করে কত টাকা পেতেন সামসুল, তা অবশ্য জানেন না মফিজুল। জানেন শুধু এটুকুই, যে সকলের আপত্তি শুনলে আজ হয়তো বেঁচে থাকতেন তাঁর কাকা। পুলিশ এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের সহযোগিতায় এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই রমরমিয়ে বাজির কারবার চালানো হচ্ছিল। একাধিক বার অভিযোগ জানিয়েও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। রবিবার বিস্ফোরণের ঘটনার পর এলাকায় গিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী রথীন ঘোষ। তিনি দাবি করেছিলেন, বিস্ফোরণের ঘটনার নেপথ্যে স্থানীয় এক আইএসএফ নেতা রয়েছেন। তিনি মুর্শিদাবাদ থেকে লোক এনে বাজি তৈরি করাচ্ছিলেন। পাল্টা আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে কেরামতের নাম তোলেন নওশাদ। তিনি দাবি করেন, কেরামতকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। স্থানীয়দের দাবি, কারখানার মালিক ছিলেন এই কেরামতই।