অনিশ্চয়তা, টিকিট-বিতর্ক পেরিয়ে রবিবার কলকাতা ডার্বি, মোহনবাগানের বদলা, নাকি জিতবে ইস্টবেঙ্গল?

আইএসএলে রবিবার আবারও একটা কলকাতা ডার্বি। প্রথম পর্বের ঠিক ৩৬ দিন পরে মুখোমুখি হতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান। গত ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে কোনও মতে হার বাঁচিয়েছিল মোহনবাগান। এ বার অবশ্য পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। গত কয়েক মরসুমের মতো এই ডার্বিতেও এগিয়ে থেকে নামছে সবুজ-মেরুন।

তৃণমূলের ব্রিগেডের কারণে এই ম্যাচ কলকাতায় হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছিল অনিশ্চয়তা। শোনা যাচ্ছিল ভুবনেশ্বর বা জামশেদপুরে খেলা নিয়ে যাওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত কলকাতাতেই ম্যাচ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সময় পিছিয়ে ৭.৩০-এর বদলে রাত ৮.৩০-এ করা হয়। তার পরে টিকিট নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। সেটাও মিটেছে। সব পেরিয়ে নজর ঘুরেছে আবার ম্যাচেই।

৩ ফেব্রুয়ারি হয়েছিল আগের ডার্বি। সেই ম্যাচে এগিয়ে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। কারণ পরিসংখ্যান ছিল তাদের পক্ষে। ডুরান্ড কাপ এবং সুপার কাপে মোহনবাগানকে হারিয়েছিল তারা। গত বারও জিততে জিততে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ড্র হয়। কিন্তু পরের এক মাসে দুই দলের মধ্যে বিপরীত চিত্র দেখা গিয়েছে।

আগের ডার্বি থেকে মোহনবাগানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাস। ডার্বি জিততে না পারলেও পরের পাঁচটি ম্যাচের চারটিতে জিতেছে মোহনবাগান। গোয়াকে হারিয়ে এসেছে তাদের মাঠে গিয়ে। ড্র করেছে ওড়িশার সঙ্গে। নর্থইস্ট ইউনাইটেড, জামশেদপুরকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছে। পয়েন্ট তালিকার মাঝামাঝি জায়গা থেকে আবার উপরের দিকে উঠে এসেছে তারা। রবিবার ডার্বি জিতলেই শীর্ষে চলে যাবে সবুজ-মেরুন। লিগ-শিল্ড জয়ের দৌড়ে এগিয়ে যাবে অনেকটাই। ফলে তিন পয়েন্টের লক্ষ্য নিয়েই নামবে তারা।

অন্য দিকে, সুপার কাপ জয়ের পর থেকে ইস্টবেঙ্গলের পতন শুরু হয়েছে। শেষ পাঁচটি ম্যাচের তিনটিতে হেরেছে তারা। এগিয়ে গিয়েও বার বার গোল হজম করে নষ্ট করেছে পয়েন্ট। অবস্থা যা, তাতে প্লে-অফে খেলার জন্য প্রথম ছয়ে থাকতে গেলে ইস্টবেঙ্গলকে আর একটি পয়েন্টও হারালে চলবে না। তাই ডার্বিতে তাদের কাছে আত্মবিশ্বাসী হয়ে নামার কোনও জায়গাই নেই।

ডার্বির আগে ইস্টবেঙ্গলের কোচ যা বললেন

১) আমার মনে হয় ঠিক (ইস্টবেঙ্গল আন্ডারডগ কি না)। বিশেষত দুটো দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স দেখলে সেটাই মনে হবে। সত্যি কথাটা সত্যি করেই স্বীকার করে নেওয়া উচিত। তবে আমি দলের খেলোয়াড়দের বিশ্বাস করি। জানি ওরা প্রতিটা ম্যাচেই নিজেদের সেরাটা দিচ্ছে। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে আমাদের। এই মরসুমে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে যা যা পরিকল্পনা করেছি সবই কাজে লেগেছে। ডুরান্ড কাপের ফাইনালে হারলেও আমরা অনেক ভাল খেলেছি। এখনও পর্যন্ত এই মরসুমে বড় ম্যাচে আমরা এগিয়ে। তবু রবিবারের ম্যাচে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।

২) মোহনবাগান ভাল দল। ফলাফলেই তা স্পষ্ট। নর্থইস্টকে চার গোল, জামশেদপুরকে তিন গোল দিয়েছে। ওদের সমীহ করতেই হবে। যদি আপনি ওদের খেলতে দেন এবং ছোট করে দেখেন, তা হলে শাস্তি পেতেই হবে। এখন ওদের ছন্দটা অনেক ভাল। মরসুমের মধ্যে অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী থেকেছে। সেখান থেকে দলটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমরাও সুপার কাপ জিতেছি, আগে ভাল খেলেছি। পরে আবার কিছু ব্যর্থতা দেখতে হয়েছে।

৩) বিদেশি খেলোয়াড়েরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ম্যাচে তফাত গড়ে দেয়। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের হাতে তেমন বিদেশি নেই। হঠাৎ করেই সাউল এবং পারদো চোট পেয়ে গেল। ভাল ভারতীয় ফুটবলারও নেই যাদের দিয়ে আরও ভাল লড়াই করতে পারব। তার মধ্যেও আমরা ভাল খেলেছি, একটা ট্রফি জিতেছি। আশা করি পরের মরসুমে আরও ভাল খেলতে পারব।

ডার্বির আগে মোহনবাগানের কোচ যা বললেন

১) আগেও বলেছি, এই ম্যাচ নিয়ে আমাদের কোনও আলাদা উত্তেজনা নেই। আমরা চাই তিন পয়েন্ট পেয়ে লিগে আরও উপরের দিকে উঠতে। জানি এই ম্যাচ ঘিরে কলকাতার সমর্থকদের মধ্যে আলাদা উত্তেজনা তৈরি হয়। আমার কাছে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। সেখান থেকে তিন পয়েন্টই আমার লক্ষ্য।

২) বিশ্রাম পেলেও দলের ফুটবলারদের ফোকাস নড়েনি। আমরা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী নই। স্বাভাবিক খেলা খেলতে চাই। আসলে দুটো দলের লক্ষ্যই আলাদা। আমরা চাই তিন পয়েন্ট পেয়ে শীর্ষে পৌঁছতে। ওরা চায় প্রথম ছয়ে শেষ করতে। আগের ম্যাচগুলোয় যা লক্ষ্য ছিল এ বারও তাই থাকবে। ইস্টবেঙ্গল যথেষ্ট ভাল দল। ২০টা ডার্বির পরেও হয়তো একই কথা বলব।

৩) আমার কোনও নির্দিষ্ট প্রথম একাদশ নেই। ম্যাচের পরিস্থিতি, প্রতিপক্ষের খেলার ধরন, হাতে থাকা ফুটবলার— সব মাথায় রেখেই প্রথম একাদশ তৈরি করি। কোনও ফুটবলার আমার সিস্টেমের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারলে তাঁকে ছেঁটে ফেলতে দ্বিধা করি না। কারা খেলবে সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়।

চলতি মরসুমে মুখোমুখি সাক্ষাৎ

ডুরান্ড কাপ গ্রুপ পর্ব: ইস্টবেঙ্গল ১ মোহনবাগান ০

ডুরান্ড কাপ ফাইনাল: মোহনবাগান ১ ইস্টবেঙ্গল ০

সুপার কাপ: ইস্টবেঙ্গল ৩ মোহনবাগান ১

আইএসএলের প্রথম পর্ব: ইস্টবেঙ্গল ২ মোহনবাগান ২

শনিবার খেলা ক’টা থেকে, কোথায় দেখা যাবে?

রাত ৮.৩০ থেকে শুরু খেলা। দেখা যাবে স্পোর্টস ১৮ নেটওয়ার্কের চ্যানেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.